করোনা উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম দুই নারী, রাঙামাটিতে একজন, মানিকগঞ্জে একজন, নোয়াখালীর সেনবাগে এক ব্যক্তি এবং নড়াইলের লোহাগড়ায় এক নারী মারা গেছেন। রোববার ও সোমবার তাদের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত ৩০ মার্চ থেকে করোনা উপসর্গে ১৩৭ জনের মৃত্যু হলো।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ‘করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে’ করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও দুই নারী মারা গেছেন। সোমবার সকাল ১১টায় একজন এবং দুপুর ১টায় অন্যজন মারা যান। করোনা পরীক্ষা শেষে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নগরীর সরাইপাড়া পাহাড়তলী কাস্টমস এলাকা থেকে একজন এবং শিকলবাহা মাস্টারপাড়া থেকে একজন রোগী জ্বর, কাশি, ব্যথা নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকাল ওই দু’জনের মৃত্যু হয়। তাদের একজনের বয়স ৫০ বছর, অন্যজনের ৬০ বছর।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ‘করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে’ কাজ করা ১৭ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নগরীর টেরিবাজারে আল ইমাম নামের একটি হোটেলে থাকছেন। পরিবার থেকে নিরাপদে থাকতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত ২টার দিকে তিনি মারা যান। রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মৃত ব্যক্তি দিনমজুর ছিলেন। মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ওই ব্যক্তির বাড়ির লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
নড়াইলের লোহাগড়ায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেপের একটি মেডিকেল টিম মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। জানা গেছে, শালনগর ইউনিয়নের বাতাসি গ্রামের ওই নারী কিছুদিন আগে ঢাকার আশুলিয়ায় মেয়ের বাসায় বেড়াতে আসেন। সেখানে তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত শনিবার তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন তার মেয়ে। পরে ওই বৃদ্ধাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রোববার রাতেই তাকে দাফন করা হয়েছে।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নে সর্দি, জ্বর, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও রক্ত বমিতে আক্রান্ত হয়ে মো. আক্কাস (৪৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি পেশায় নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। এ ঘটনার পর তিনটি বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন। ওই ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তান ও মাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মজুমদার।
সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান জানান, মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। এদিকে নোয়াখালীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে পালানোর পর পুলিশের হাতে আটক হয়েছে।
মানিকগঞ্জে শ্বাসকষ্ট নিয়ে সোমবার চাঁন মিয়া (৩০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। করোনা সন্দেহে তার লাশ নিতে কেউ এগিয়ে আসেনি। দীর্ঘক্ষণ তার লাশ পড়ে ছিল মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বাইরে। পরে লাশের দাফনের ব্যবস্থা করেন পৌর মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশ্বাদ উল্লাহ জানান, মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ ১৫ জন কোয়ারেন্টাইন শেষ করে সোমবার কাজে যোগ দিয়েছেন। শজিমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, নমুনা পরীক্ষায় তাদের কারও করোনা ধরা পড়েনি।
সিলেটে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক প্রসূতির করোনা শনাক্ত হয়েছে। রোববার পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। ওই নারী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা। ১০ দিন আগে তার স্বামী নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরেছেন। মাদারীপুরের শিবচরে করোনা শনাক্ত হওয়া তিনজনের মধ্যে চিকিৎসককে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে এবং অপর দু’জনকে মাদারীপুর আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া টাঙ্গাইল জেলায় নতুন করে পাঁচজন, নরসিংদীতে চিকিৎসক ও সাংবাদিকসহ ১৬ জন, গাজীপুরের কালীগঞ্জে পাঁচজন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দু’জন এবং সীতাকুণ্ডে একজন, খুলনায় একজন, কুড়িগ্রামে একজন, গৌরনদীতে একজন, গোপালগঞ্জে তিন পুলিশসহ ছয়জন, ফরিদপুরে দু’জন, শেরপুরে একজন, সোনারগাঁয়ে একজন করোনা রোগী মিলেছে। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব চিকিৎসককে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।