হাবিব খান: শুক্রবার বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায়আরও ২৪ জন মারা গেছেন। বাংলাদেশে এটি একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট ৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৬৯৪জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজার ২০৫ জনে।
প্রতিদিনই যেখানে দেশে করোনায় আক্রাণের সংখ্যা হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা করোনা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা বলে আসছেন।
আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী : ওবায়দুল কাদের(যুগান্তর ২১ মার্চ ২০২০)।
কিন্তু করোনা দেশে হানা দেয়ার পর আমরা কি দেখলাম ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যর উল্টো চিত্র। দেশে করোনা পরীক্ষার জন্যও যেখানে মানুষকে দিনের পর দিন আইইডিসিআর নামক প্রতিষ্ঠানের হটলাইনে শুধু ফোনে যোগোযোগ করতে হয়েছে , তাও টেস্ট সম্ভব হয়নি। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা করতে না পেরে দেশের মালিক তথা জনগণকে মৃত্যুর কাছে হার মেনে মৃতদেহের নমুনা দিয়েই করোনার রেজাল্ট নিতে হয়েছে। এই আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্রের করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতি!
করোনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন কিটের কিন্তু দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেই প্রতিষ্ঠানের আবিস্কৃত কিট নিয়ে সরকারের মনোভাবও আমরা দেখেছি। আজ পর্যন্ত সেই কিটের ভবিষ্যৎও সরকারের আমলাতন্ত্রের জালে বন্দী।
কিট নিয়ে কালক্ষেপণ হলেও কিন্তু করোনার চিকিৎসার কথিত মেডিসিন রেমডেসিভির বাজারজাত শুরু করে দিলো দেশের ‘অন্যতম গরীবের’ প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। যে মেডিসিনের এখনো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা অন্য কোনও বৈশ্বকি সংস্থার চুড়ান্ত অনুমোদন নেই। গণস্বাস্থ্যর কিট আটকে যায় রাষ্ট্রের প্রটোকলে অন্যদিকে বেক্সিমকোর মেডিসিন বাজারে চলে আসে রকেট গতিতে।
বেক্সিমকো এই রেমডেসিভির বাজারজাতকরণ অনুষ্ঠানে শুক্রবার আমাদের মিডিয়ার সুবক্তা স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের জনগণকে জানিয়েছেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন বাড়লেও তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখনও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তুলনামূলকভাবে সফল হয়েছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। তাদের সুচিকিৎসার জন্য নমুনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি, ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (দৈনিক) নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১০ হাজার অতিক্রম করেছে।
এই হলো আমাদের বর্তমান মহামারির সময়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাহিরের চিত্র। অন্তরালের খবরও হয়তো সংবাদ কর্মীরা মাঠে নেমে অনুসন্ধান করলে তখন জানা যাবে।
এখানে আরেকটি কথা বলা প্রয়োজন, আমাদের বর্তমান মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বরাবরই বলে আসেন তাদের সরকার মিডিয়া বান্ধব সরকার। যদি সত্যিই তা হয় তবে আজ শুক্রবার ঈদ পুর্ব সময়েও কেন বেশিরভাগ মিডিয়া কর্মীদের বেতন হয়নি, বোনাস হয়নি? এই করোনায় যেখানে রাষ্ট্রের সেবক তথা কর্মচারীদের জন্য আলাদা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে সেখানে কি গণমাধ্যম কর্মীরা কি প্রণোদনা বাদ দিলেও মুল বেতন ও বোনাস পাওয়ার অধিকার ও রাখে না? এই স্বাধীনতা?
ছোট একটা গল্প বলি এখানে, আজ এক অগ্রজ সাংবাদিক প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াতে কর্মরত ইফতার পুর্ব সময়ে জানালো আর একদিন পর ঈদ কিন্তু এখন পকেটে আছে ৩০০ টাকা! বেতন–বোনাস কিছু হলো না! ছোটএকটা প্রশ্ন করি পাঠকদের, মিডিয়া কর্মীদের আসলে কে আছে রাষ্ট্র নাতাদের প্রতিষ্টান না সমাজ না তাদের পরিবার?
উত্তর হলো কি জানেন তাদের জন্য কেও নেই! এটাই কঠিন সত্যা ।
তথ্যমন্ত্রী আপনার ভাষায় দেশ এখন সিঙ্গাপুর লাস ভেগাস।আসলেই সেজন্যই চিকিৎসা না পেয়ে গণমাধ্যম কর্মী মরে মরে জনগণ!
বোনাস হয়নি যেসকল প্রথম সারির গণমাধ্যমে(বর্তমান সময় পর্যন্ত)
কালেরকণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, নিউজ 24
বোনাস না দেয়া তালিকায় আছে কালেরকণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ 24সহ ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠান।
কালেরকণ্ঠের কর্মীদের বেতন বকেয়া কয়েকমাসের।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার
এই দুটি প্রতিষ্টানে এ বছর দেয়া হয়েছে ওয়েজবোর্ড নির্ধারিত একটি বোনাসেরও অর্ধেক। অর্থাৎ গত ঈদে প্রতিষ্ঠান দুটির যে কর্মী পেয়েছেন ৪০ হাজার টাকা, এবার তাকে দেয়া হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা।
এনটিভি
ঈদ বোনাস থেকে কর্মীদের বঞ্চিত করেছে ভালো আয়ের প্রতিষ্ঠানএনটিভি। গেল ৫ বছর ধরে ইনক্রিমেন্টও বন্ধ আছে এনটিভিতে।
নাগরিক টেলিভিশন
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মোহাম্মদী গ্রুপের প্রতিষ্ঠান নাগরিকটেলিভিশনেও দেয়া হয়নি ঈদ বোনাস।
পুলিশের সিদ্ধান্তে হ–য–ব–র–ল–তা
আজ আর স্বাস্থ্য খাত বা করোনার চিকিৎসা নিয়ে কিছু বলবো না।করোনার এই মহামারির সময়ে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ যাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশী সমালোচনা করতো সেই পুলিশ বাহিনীকেই বেশি গ্রহণ করেছে। কারণ তাদের মানবিক আচরণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ গরিব দুস্থদের মাঝে খাবার দিয়েছে, মৃতদেহ নিজেরা বহন করে নিয়ে গেছে, এমনকি সৎকার করা কবর দেয়ার কাজও করেছে। এরকম আরও বহু মহৎ কাজ করেছেন পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা । এই কাজ করতে গিয়ে করোনায় মৃত্যুও হয়েছে বেশকিছু পুলিশ সদস্যের আক্রমণের সংখ্যাও অনেক। এসব কাজের ফলেপুলিশের একটা ভালো মানবিক ইমেজ সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে। কিন্তু গত কয়েক দিনের কিছু সিদ্ধান্ত পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের সেই ইমেজকে কিনষ্টের পথে নিচ্ছে না?
লক্ষ্য করুন, প্রথমদিকে বলা হলো ঈদে কাউকে বাড়ি যেতে দেওয়া হবেনা। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ গত ১৭ইমে ২০২০ কঠোর ভাষায় বলেন, এবারের ঈদ উপলক্ষে ও সরকারঘোষিত বর্ধিত ছুটি উদযাপনের জন্য অনেকেই গ্রামের বাড়ির পথে রওনা হচ্ছেন। এটি কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত যেন কোনোভাবেই ঢাকার বাইরে থেকে কেউ ঢাকায় না আসে এবং ঢাকা থেকে কেউ যেন ঢাকার বাইরে না যেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে প্রতিটি জেলা ও মহানগরীতেও জনস্বার্থেকঠোরভাবে এ বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান(আইজিপি) এই বক্তব্যর কয়েক দিন পরেই বলা হচ্ছে যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে শুধু তারাই বাড়ি যেতে পারবেন।
অন্যদিকে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ২০ মে ঘোষনা দেন, ঈদে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ থেকে কাউকে বাড়িতে যেতে দেবনা(ডেইলি স্টার ২০ মে)। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কোনও বাস্তবিক প্রয়োগ দেখা গেল না। প্রশ্ন উঠছে এই মহামরির সময়ে তাহলে কি সরকারের ভিতরে আরেক সরকার কি এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে?
আজ পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যাঁরা ঈদে বাড়িতে যেতে চান, পুলিশ যেন তাদের চলাচলে বাধা না দেয়। তারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন।তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।
ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মো. ওয়ালিদ হোসেন আজ শুক্রবার বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাঁরা বাড়ি যেতে চান, তাঁরা বাড়ি যেতে পারবেন। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবহার করে বাড়ি ফেরা যাবে। পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় থাকবেন। কেউ যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি না ফেরেন, তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে RAB এর মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন শুক্রবার বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদউদ্যাপন করতে যাওয়া যাবে। তিনি বলেছেন, কোনো ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করা যাবে না।
সরকারের সিদ্ধান্ত কি শুধু তবে গরিব–মধ্যবিত্ত ও দুস্থদের জন্য। যাদের গাড়ি ক্রয়ের সামর্থ্য নাই তারা ঘরে বা বাসায় থাকো আর যাদের গাড়ি আছে তারা ঈদে বাড়ি যাও? কেন এই দ্বৈত নীতি? অর্থশালীদের জন্য এক নিয়ম গরিবের জন্য অন্য নিয়ম কেন? উত্তর কি পাবো সরকার ?