ভাল কী মন্দ কার্যকর কী অকার্যকর তা জানতেই মাস পার হয়ে গেল। এক মাসেও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। এভাবে আগে পরে প্রায় দুই মাস কালক্ষেপণ। বিএসএমএমইউ তে পরীক্ষার ফলাফলই এখনো জানা গেল না। কবে জানা যাবে তাও পরিস্কার নয়। মানুষ থেকে রাজনীতি মুখ্য হলে সে দেশে এমনই হতে পারে সবাই ধরে নিয়েছে।
এদিকে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর এক শ্রেনীর সহমত মানুষ এটাকেও তাদের উদ্ভাবিত কিটের জন্য কৌশলের অসুস্থতা বলে নিজেদের বিকৃত ও অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়কে আবারও তুলে ধরেছে।
এটা ওষুধ ভ্যাকসিন জাতীয় কিছু নয় যে জীবনের ঝুঁকি জাতীয় কোন বিষয় আছে। কিট নিয়ে কীটদের রাজনীতিতে লাল নীল ফিতার দৌরাত্ন্যকে সার্থকভাবে কাজে লাগিয়ে আসলে কার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে? ট্রেস এবং টেস্ট যখন এ করোনা সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম পদ্ধতি, সেখানে একটা টেস্টিং কীট নিয়ে যারা রাজনীতি করছেন, ভাসা ভাসা জ্ঞান আর যুক্তিতে যারা এই সহজলভ্য ও কম মূল্যের এই টেস্টিং কিটের বিরোধিতা করছেন, তারা কি মনে করছেন? মহামারীর ক্ষয়ক্ষতি বাড়লেতো কম বেশি সবার ক্ষতির আশংকা আছে, পাশাপাশি এমন সংকটের সময় যারা দায়িত্বে আছেন তারা কি মনে করেন সহজে দায় এড়াতে পারবেন? এমন ধারণা যাদের নি:সন্দেহে তাঁরা ভুলই করছেন। এটা ভুলে গেলে চলবে না- দায়িত্বের সাথে দায়তো সহজাত।
চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন ভোর রাত থেকে বিএসএমএমইউ এর সামনে যে মানুষগুলো টেস্টের জন্য অপেক্ষা করেছে বলে মিডিয়ায় ছবি এসেছে তাদের সম্মতিসাপেক্ষে বা স্বেচ্ছাসেবী ডেকে গণস্বাস্থ্যের কিটটি পরীক্ষা করতে সর্বোচ্চ কত দিন লাগতে পারে? কথায় কথায় পিয়ার রিভিউ, স্বীকৃত জার্নালের কথা বলে আমরা দেখেছি মূলত: স্বেচ্ছায় জনস্বার্থে করা গবেষণায় দুধে ক্ষতিকর কেমিক্যালের উপস্থিতি প্রমাণ করে অধ্যাপক আবম ফারুক কেমন বিরোধীতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ব্রিটেনের মত দেশে হলে কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর গবেষণার ফলাফল নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যেত। সপ্তাহের পর সপ্তাহ আলোচনা হোত। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতো নাগরিক থেকে শুরু করে সরকারের লোকজন পর্যন্ত। কোম্পানীর ক্ষতিকর দুধ খেয়ে এরিমধ্যে ক্ষতি বা ক্ষতির ঝুকিতে থাকা মানুষের সাথে আইনজীবীরা বসতো কেমন করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে। আইনের সংস্কার প্রয়োজন আছে কিনা, কোথায় দুর্বলতার কারণে এমনটি হতে পারলো তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হোত। অধ্যাপক আবম ফারুক হতেন একজন আলোচিত ও নন্দিত মানুষ। আর বাংলাদেশে তিনি যেন কাঠগড়ায় ছিলেন! লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে তাঁর বিভাগের চেয়ারম্যানও প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে একভাবে তাঁর বিরোধীতাই করলেন। মন্ত্রণালয়ের লোকরা মহা উত্তেজিত, ব্যবসায়ীরা সংগত কারণে শংকিত ছিল। সে যাক মন্ত্রণালয় থেকে মামলার হুমকিও দেয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীরাও যেন একইভাবে কিট উদ্ভাবন করে অপরাধ করে ফেলেছেন।
যে দেশে অপহরণ, নির্যাতন খুনের আসামীকে দেশত্যাগে সাহায্য করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কাজ করে, সে দেশে নানা আমলাতান্ত্রিক ও পদ্ধতিগত ধারার কথা বলছে তারা কি খোঁজ নিয়েছে গত ৫০ বছরে দেশে কি পরিমাণ মৌলিক গবেষণা হয়েছে। আর কটা কপি পেস্ট গবেষণা হয়েছে। পুরো বিশ্ব যখন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সনাক্তকরণ কিট, স্বাস্থ্য ও সম্মুখসারির কর্মীদের জন্য পিপিই, গ্লাভস সহ আনুষংগিক সামগ্রী পেতে আপ্রাণ চেস্টা করছে, তখন আমরা একটি সম্ভাবনাময় কিট নিয়ে সময়ক্ষেপণ করে কাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছি- এটাই এখন বড় প্রশ্ন। এদিকে গণস্বাস্থ্য যাদের কিট নিয়ে এত কিছু, তারা এবার করোনা চিকিৎসার জন্য প্লাজমা ব্যাংক বানানোর চিন্তা করছে।
বিজ্ঞানী বিজন ও তাঁর সহযোগীদের উদ্ভাবিত কিট পরীক্ষার ফলাফল অবিলম্বে প্রকাশ করা হোক। জাতির এ দুর্যোগে মানুষ বাঁচানোই হোক বড় ব্রত। এমনিতেই করোনা সংকট ব্যবস্থাপনায় যথেস্ট সমন্বয়হীনতা, সমস্যা হিসেবে একে যথাযথ গুরুত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই দুর্বলতা ও সক্ষমতার অভাব খালি চোখেই দৃশ্যমান। ১ জুন থেকে সীমিত আকারে সব শুরুর সিদ্ধান্ত আরেকটি অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত। শতকরা ২০ ভাগ শনাক্তের উর্ধ্বমুখী হারের মধ্যে এমন অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের জন্য জাতিকে ভীষণ মূল্য দিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
মুশতাক হোসেন, অনলাইন এক্টিভিস্ট দিদারুল, কার্টুনিস্ট কিশোর কিংবা সাংবাদিক কাজলকে এই মহামারীকালে গ্রেফতার করে জেলে রেখে তাদেরকে চূড়ান্ত স্বাস্হ্য ও মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। নিম্ন আদালত তাদের জামিন আবেদন না মন্জুর করেছে। পিরোজপুরে আওয়ামী লীগ নেতা আউয়ালের জন্য আইনের এক গতি, আর কিশোর দিদার কাজল মুশতাকদের ক্ষেত্রে অন্য রকম গতি। এ অবস্থার আমরা অবসান চাই। ইতোমধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটা মানবাধিকার সংগঠন মুশতাক কাজলদের বিরুদ্ধে ‘সাজানো মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার করে তাদের মুক্তি দাবি করেছে। আমরাও অবিলম্বে মুশতাক কাজলদের মুক্তি দাবি করছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন প্রবাসীরা দেশে ফিরে গেলে চুরি চামারী বেড়ে যাবে। প্রবাসে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। বরাবরই এই মন্ত্রী এবং তাঁর সহকর্মীরা নানা উদ্ভট অবান্তর করে জাতীয় ক্ষোভ ও বিরক্তি উৎপাদন করছেন। কেউ কেউ মনে করেন কৌশল হিসেবে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য তারা এমনটি করছেন। এই মন্ত্রী এর আগে প্রবাসীদের নবাবজাদা বলে তিরস্কার করেছিলেন। পররাস্ট্রমন্ত্রীকে এ সব বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত।
সর্বশেষ অপহরণ নির্যাতন হত্যা চেস্টার আসামী কেমন করে
পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় দেশত্যাগ করতে পারে? এ নিয়ে পূর্ণাংগ তদন্ত হোক।
সম্পাদকীয়-
লিখেছেন শাহ আলম ফারুক
লন্ডন ৩১ মে ২০২০
ছবি: ঝাঁড়ু দিয়ে করোনা দমনের বাংলাদেশী স্টাইলের প্রচেস্টার একটি দৃশ্য