ভারতে ২১ দিনের লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল রাতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করলেন. লকডাউনের সময়সীমা বেড়ে ৩ মে পর্যন্ত করা হলো। এর আগে অধিকাংশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লকডাউন আরও দুই সপ্তাহ বাড়াবার কথা বলেছিলেন। বেশ কিছু রাজ্যে তা চালুও করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মোদী তা আরও বাড়িয়ে ৩ মে পর্যন্ত করলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ২০ এপ্রিলের পর দেশের পরিস্থিতি আবার খতিয়ে দেখা হবে। যে সব রাজ্য করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য পাবে, সেখানে গরিবদের কথা ভেবে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হবে। অর্থাৎ, শিল্প, বানিজ্য, পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। মোদী বলেছেন, ”২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি জেলার অবস্থা প্রতিদিন খতিয়ে দেখা হবে। তারপর কড়াকড়ি শিথিল করা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
লকডাউনের কী সুফল মিলেছে, সেটা দিয়েই মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীকে লকডাউনের নিয়মকানুন মেনে চলার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেশে সারা বছরই উৎসব চলে। যেমন আজ (মঙ্গলবার) পয়লা বৈশাখ। কিন্তু তবু সংযমের মধ্যে দিয়ে উৎসব অনুষ্ঠান পালন করেছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই ঘর পরিবার ছেড়ে দূরে রয়েছেন। লকডাউনের সময় আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন। আপনারা দেশের স্বার্থে একজন সৈনিকের মতো কাজ করেছেন। আপনাদের ত্যাগের জেরে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই সামলানো গিয়েছে।’’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিচার করলে অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভারতের পরিস্থিতি এখনও অনেকটাই ভাল। সেই দিকটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত যে পথে হেঁটেছে, তা সারা বিশ্বের মানুষ চর্চা করছে। রাজ্য সরকারগুলিও অনেক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে। ২৪ ঘণ্টা নিরন্তর কাজ করে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া গিয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের ভয়াবহ চরিত্র দেখেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং শুরু হয়েছিল, বিদেশ থেকে এলে কোয়রান্টিনের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তার পর আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ এবং সব শেষে লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছিল। তার সুফল আজ পাওয়া যাচ্ছে। দুনিয়ার বড় বড় দেশের সঙ্গে পরিসংখ্যানের তুলনা করলে ভারত অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত যে সব দেশের সঙ্গে ভারত একাসনে ছিল, সেই সব দেশে এখন আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।’’
লকডাউন ঘোষণার তিন সপ্তাহের মাথায় দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেল। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৬৩ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড। মোট আক্রান্ত ১০ হাজার ৮১৫ জন বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশ জুড়ে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৪৬।