এই ক্ষমতার সাপের খেলায় আপনাকে সবসময় দাবা বোর্ডের রাজা বাঁচিয়ে খেলতে হবে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে জমিদার বা মাতবর পুত্রেরা শলা করে সিন্দুক ভেঙ্গে ‘নাগমণিহার’ গায়েব করে দিলে; তখন সেই নাগমণি হার চুরি হওয়ার গল্পকে ঢেকে দিতে; গ্রামের ছোট ছোট চোর বাবর, সাহেদকে কাদা মাখিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো হতো। গ্রাম বাসী ছ্যা ছ্যা করতো ‘কেষ্টা ব্যাটাই চোর’ বলে জিভ কেটে। আর এইভাবে ভেংচি কাটা ভোদড়ের জনপদ প্রবল প্রশান্তিতে ন্যায় বিচারের আমের আচার চাটছে শতকের পর শতক।
“মূল্যবোধের সোনা- আমাদের চেতনা” চুরি যাওয়া নিয়ে চিন্তিত নয় অপুষ্টিতে শুকিয়ে যাওয়া মস্তিষ্কের গ্রামবাসী; ওরা ফকিন্নির ঘরের ফকিন্নির চুরিকে “চোর চোর চোর” বলে; “অক্ষম চেতনা” দোলানোকেই ন্যায় বিচার মনে করে।
জমিদার পুত্রেরা যাদের নিয়োগ করে গ্রাম-ডাকাতিতে তারা গরীব ঘর থেকে আসা; সুতরাং জমিদার পুত্রের আগা-পাছটা বাঁচিয়ে; নামের সঙ্গে শেখ, রহমান, সরকার, চৌধুরী নেই; এমন অবেয়াই-অচাচাত-ফুফাতো-অখালাতো “গোলির ধারের ছেলেটিকে” কালো পোশাকের নৃশংস খুনে প্রহরী দিয়ে ধরিয়ে; টান টান উত্তেজনার ‘ডাকাত-পাকড়াও’ যাত্রা-নাটক করে; গ্রাম জুড়ে ন্যায় বিচারের আমের আচার বিক্রির ক্ষণে; চাকরস্য চাকরেরা এসে প্রশান্তিতে আঙ্গুল চেটে চেটে বলে #ধন্যবাদমাতবর
গরীবের ছেলেকে ফুটসোলজার বানিয়ে কালো পোশাক পরা প্রহরী দিয়ে সাদা পোশাকের প্রহরী ওরফে গরীবের ছেলেদের “চোর-পুলিশ” খেলার অন্ধকার অষ্টাদশ শতাব্দীই হচ্ছে চির বিচারহীন এই বিজন গ্রাম। গ্রাম্য অভিজাততন্ত্রের গেম অফ থ্রোনসে গরীবের ছেলে নিয়ে নরভোজি ভিলেজ পলিটিক্সটাই নাগ-নাগণীর খেলা। বিষাক্ত ছোবলে সবুজ জনপদের সুখ কেড়ে নেবার নিষ্ঠুরতম খলতা।
– মাসকাওয়াথ আহসান
সাংবাদিক, সাংবাদিকতার শিক্ষক
Editor-in-chief, E-SouthAsia