তবে নতুন আইনে, বিদেশীরা যারা অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতার ১২ মাস কারাগারে ছিলো এবং যাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা রয়েছে তাদেরকে ব্রিটেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। একই সাথে ব্রিটেনে যদি কোন অভিবাসী ১ বছরের বেশি দণ্ডিত হন, তাকেও নতুন অভিবাসন বিধি মোতাবেক তার নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পয়েন্ট ভিত্তিক নিয়মে অনুমোদিত চাকুরি দাতা স্পন্সর কাজের অফার দিলে ৫০ পয়েন্ট অর্জন করা যাবে। আর বাকী ২০ পয়েন্ট অর্জন করা যাবে যদি চাকুরিপ্রার্থীর ইঞ্জিনিয়ার বা তথ্য প্রযুক্তির মতো কাজের অভিজ্ঞতা থাকে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রযুক্তি, প্রকৌশলী, গনিতবিদদের ক্ষেত্রেও নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে ২০ পয়েন্ট অর্জনের পাশাপাশি বার্ষিক বেতন ২৫৬০০ পাউন্ড হতে হবে। ইংরেজী জানা ও না জানা কর্মীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন কম বা বেশি হওয়ার পাশাপাশি পয়েন্ট ও কম বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নিয়মে বেশির ভাগ কর্মীকেই সর্বনিম্ন বছরে ২৩,০৪০ পাউন্ড বেতন হতে হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমন দক্ষতা সম্পন্ন ল্যাব টেকনিশিয়ানদের বছরে ২০,৪৮০ পাউন্ড বেতন হলেও চলবে।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে পড়াশুনা করতে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনা শেষে (পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক পিএসডব্লিউ) দুই বছর অতিরিক্ত যুক্তরাজ্যে অবস্থান এবং কাজের সুযোগ পাবেন।
হোম সেক্রেটারী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, ইউরোপ থেকে বের হয়ে আসার জন্যই জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। যাতে করে বর্ডার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। এখন আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে চলে এসেছি, আমরা এই দেশের পূর্ণ সম্ভাবনা প্রকাশ করতে এবং অভিবাসন ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলি কার্যকর করতে নতুন নিয়ম চালু করতে এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। ব্রিটেন ব্যবসায়ের জন্য উন্মুক্ত, বিশ্বের সেরা এবং উজ্জ্বল প্রতিভাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তিনি বলেন- তবে যুক্তরাজ্যের মধ্যে থেকে কর্মীদের নিয়োগদানে নিয়োগকারীদের উৎসাহ দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, নতুন অভিবাসন ব্যবস্থা ‘বিশ্বের সেরা এবং প্রতিভাবানদের কাছে আকর্ষনীয় হবে’। তবে ট্রেড ইউনিয়নগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, কেয়ার ওয়ার্কারদের এই ব্যবস্থায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। ফাস্ট ট্র্যাক হেলথ অ্যান্ড কেয়ার ভিসার সুযোগ থাকবে এনএইচএস এর কর্মীদের জন্য। তবে স্যোশাল কেয়ার স্টাফ এই সুযোগ পাবে না। দক্ষ কর্মীরা তাদের পরিবারকে নিয়ে আসার সুযোগ থাকবে। এতে ব্রিটেনের ভেতর থেকেই কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির উপর উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং বিশ্বের যে কোনও দেশ থেকে ভালো কর্মী আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবী করেছেন হোম সেক্রেটারি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, যোগ্যতা থাকলে যে কেউ বাঁধাহীনভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে পারবে।
ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিক থমাস-সাইমন্ডস বলেছেন, স্বাস্থ্য ভিসা থেকে কেয়ারওয়ার্কদেরকে বাদ দেয়া, এটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, যারা দক্ষতার এবং আন্তরিকতার সাথে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে তাদের টোরি সরকার মূল্যায়ন করছে না। এটি তাদের জন্য অপমানজনক।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্র বলেছেন, সরকার চাচ্ছে যারা এই দেশে বসবাস করছেন, নিয়োগকর্তারা যেন তাদেরকে প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে।
হোম সেক্রেটারীর নতুন এই ঘোষণায় নেই দীর্ঘদিন যাবত ব্রিটেনে বসবাসরত লাখ লাখ কাগজপত্রহীন মানুষের বৈধতার বিষয়টি। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীসহ, মানবেতর জীবন যাপন করা লাখ লাখ মানুষ। ব্রিটেনে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধদের কোন সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে নাই। ব্রেক্সিট পরবর্তী, বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত, এইসব কাগজপত্রবিহীন মানুষ সাধারণ ক্ষমার আশায় দিন গুণছিল। এদিকে ব্রিটেনের বিভিন্ন অভিবাসী কমিউনিটিতে এ নিয়ে কিছু লোকজন প্রায়শ: আশার বাণী শোনাচ্ছিলেন। যার প্রতিফলন এখনো দেখা না গেলেও কিছু বিশ্লেষক মনে করেন- বেক্সিট কার্যকর হবার পর এ বিষয়ে ঘোষণা আসার সম্ভাবনা আছে।