আমেরিকা প্রবাসী ডাক্তার রুমি মে মাসে বাংলাদেশের ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল। সেখানে সে বলতে চেয়েছে, ডাক্তারদের অস্ত্র যাইহোক অর্থাৎ পিপিই, সংক্রমণ প্রটেকশনের ব্যবস্থা যাই হোক নিজেদের মৃত্যুর বিনিময়ে হলেও তাদের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অথচ সে নিজেই জানে সংক্রমণ প্রতিরোধে কী তুখোড় ব্যবস্থা তাদের নিজেদের ও তাদের হাসপাতাল ডিজাইনে নেয়া হয়ে থাকে। এ নিয়ে আমি যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম সেটা কমেন্টের ঘরে।
কাল রাতে রিজেন্ট শাহেদের টক শোয়ের একটা ভিডিও দেখলাম। একজন চিকিৎসক করোনা চিকিৎসায় তার নিজের ঝুঁকির কথা মনে করিয়ে দিলে সে তার উদ্দেশ্যে বলে ” ঐ ডাক্তারকে আমি বললাম, এটা একটা জাতীয় দুর্যোগ, এটা তোমার দায়িত্ব, এটা তোমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। (সাথে টকশো উপস্থাপকদের সায়)।
সে আরো বলে,” অনেকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ দেখে নাই। এখনকার যুদ্ধটা কিন্তু একটা বড় যুদ্ধ। একটা ক্রান্তিকাল চলছে। ডাক্তারদের যে জিনিসটা করা দরকার কোন শর্ত ছাড়াই পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। .. আমি যেভাবে বেসরকারি থেকে এগিয়ে এসেছি…”
চারপাশে অনেক শাহেদ।এসব শাহেদরা ডাক্তারদেরকে মোটিভেট করে যাচ্ছেন। ডাক্তাররা সে trap এ ও পড়ছে। মরে গিয়ে তার মূল্যও চুকাচ্ছে। চিকিৎসক ভাইয়েরা শাহেদদের মোটিভেশনের এর ফাদে আর পড়বেন না। নিজের জান বাঁচাতে যত দূর করা সম্ভব ততটুকু করবেন।
এই শাহেদ হাজার হাজার ভুয়া করোনা টেস্ট রিপোর্ট দিয়েছে। ভুয়া রিপোর্ট দিতে ডাক্তার দরকার হয় না কম্পিউটার অপারেটরই যথেষ্ট। অথচ এসবের জন্য RTV র রুবাইয়াত নামের এক টকশো উপস্থাপক দায়ী করেছে পুরো ডাক্তার সমাজকে। সে আবার নিজেই তার টকশোতে শাহেদকে ডাকতো।
সে দুটি হাসপাতাল ডেডিকেট করেছে করোনার জন্য অথচ নিজের বাবার করোনা হলে তাকে ভর্তি করিয়েছে অন্য বেসরকারি হাসপাতালে। সরকার থেকে নিয়েছে একাধিক ডায়ালাইসিস মেশিন অথচ নিজের স্বজনের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হলে তাকে নিয়ে ডায়ালাইসিস করিয়েছে মহাখালির অন্য এক হাসপাতালে। এখন দেখা যাচ্ছে তার হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের কোন ইউনিটই নাই, সেই মেশিনগুলোও নাই।
ডাক্তারদের উপদেশ দেয়া এই ভিডিও যদি তার প্রতারণা ফাঁস হওয়ার আগে প্রকাশ হতো? বাংলার পাকনা পাবলিকের লাইক আর বিদ্রুপের বন্যায় ভেসে যেতো নিউজ ফিড।
ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যারা পাবলিকদের উসকে দেয়, তাদের মধ্যেও যে অনেক শাহেদ লুকিয়ে আছে- সেটা বুঝতে যতটুকু আয়োডিন খেতে হয়, বাঙালি সবসময়ই তার চেয়ে কম খেয়ে যাচ্ছে।
– ডা: আমিনুল ইসলাম
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক