উত্তরপ্রদেশের চিকিৎসক কাফিল খান মুক্ত, অবশেষে গতকাল। গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষেরা খুশি, স্বাভাবিকভাবেই। ‘মুসলিম’রা একটু বেশি খুশি, প্রত্যাশিত ভাবেই।
“গত বছর ১২ ডিসেম্বরে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএএ-বিরোধী একটি প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়েছিলেন কাফিল। জানুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তাঁকে মুম্বই থেকে গ্রেপ্তার করে। আনা হয় আলিগড়ে। এনএসএ-তে মামলা রুজু করেন ডিএম …। পাল্টা মামলা করেন কাফিলের মা-ও। সেই মামলারই শুনানি ছিল এ দিন।
আলিগড়ের ডিএমের নির্দেশিকা নস্যাৎ করে এলাহাবাদ আদালতের পর্যবেক্ষণ, মনে হচ্ছে ডিএম শুধুমাত্র বাছাই করা অংশ পড়েছেন। এবং ভাষণের প্রকৃত উদ্দেশ্য এড়িয়ে কিছু বাছাই করা শব্দবন্ধ উল্লেখ করেছেন। ডিসেম্বরে কোনও ভাষণের জন্য কী ভাবে ফেব্রুয়ারিতে এনএসএ প্রয়োগ করা যায়– সে প্রশ্নও তুলেছে আদালত। এমনকী তাঁকে আটক রাখার মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশনামা পর্যন্ত যে বন্দির কাছে পৌঁছয়নি, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটুকু দেওয়া হয়নি — তার উল্লেখ করে প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করেছে আদালত।
…
যে ভাবে কাফিলকে আটক রাখার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দু’দফায়, তাকেও ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়েছেন বিচারপতিরা। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি … এবং বিচারপতি …-র ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘বক্তা বিদ্বেষ এবং হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন, গোটা ভাষণটি পড়ে তা মনে হয়নি। তাঁর ভাষণ আলিগড়ের শান্তি বা স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত করার পরিস্থিতি তৈরি করেনি। জাতীয় অখণ্ডতা রক্ষা এবং নাগরিকদের মধ্যে একতা বাড়ানোরই কথা রয়েছে ভাষণে।…”
(এই সময় ০২ সেপ্টেম্বর ‘২০)
কাফিল খানের গ্রেপ্তারের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক-সহ জেলা প্রশাসন তথা উত্তরপ্রদেশ সরকারের শুধু নয় ভারতীয় রাষ্ট্রের মুসলিম-বিদ্বেষী নির্মম, হিংস্র দৃষ্টিভঙ্গিই প্রধান শুধু নয় একমাত্র কারণ, কোনও সুস্থ চেতনাসম্পন্ন মানুষের তা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে না।
দু’বছর আগেও, ২০১৭ সালে গোরক্ষপুর মেডিক্যাল কলেজে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারের পক্ষে এই শিশু চিকিৎসককে দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখনও এই একই মনোভাব কার্যকরী ছিল। দু’বছর পরে সেই কলঙ্ক থেকে মুক্তি পান কাফিল। এবং আদালতের রায়েই, তখনও।
হিন্দুত্ববাদীরা যখন সভ্য সমাজের কুলাঙ্গার, ঘৃণ্য চরিত্রটিকে উত্তরপ্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করে, তখনই আমার এই আশঙ্কা ছিল। পরবর্তী কালে সেই আশঙ্কা ভয়াবহ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমাগত সেই সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে।
এলাহাবাদ আদালতের ওই বিচারপতিরা আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার পাত্র। কিন্তু কাফিল খান জেল থেকে, অভিযোগ থেকেও, মুক্তি পেয়েছেন, ‘আমাদের’ দাবিতে নয়, তীব্র রাজনৈতিক গণআন্দোলনের চাপের কাছে রাষ্ট্রের নতি স্বীকার করার ফলেও নয়; আদালতের ‘ব্যতিক্রমী’ রায়ে, এই বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করা, আমার পক্ষে অন্তত, সম্ভব নয়।
এবং আদালত সবসময়ই এমন মহানুভব নাও হতে পারেন!
এই প্রসঙ্গেই, পরবর্তীতে…
— কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা ১ সেপ্টেম্বর ২০২০