শিপুফরাজী, বাংলাদেশ থেকে: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ১১৬ কিঃ মিঃ বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাধের মধ্যে কেবল মাত্র ১০কিঃ বাধঁ স্থায়ী। বাকী ১০৬ কিঃ বাঁধই পুরাতন ও অস্থায়ী। এ ছাড়া বাঁধে জনবসতি পশু পালন, অ-পরিকল্পিত সড়ক থাকায় রয়েছে বাঁধ পড়েছে ভাঙ্গনের ঝুকিতে। প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ না থাকায় সঠিক ভাবে বাঁধ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ।
দ্বীপ জেলা ভোলায় ৬০ দশক থেকেই বণ্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। ৭০এর ভয়াল জলোচ্ছ্বাস গোর্কীর ভয়াল আঘাতের পর লবণাক্ত পানি এবং বণ্যার পর থেকে এই জনপদকে রক্ষায় বাঁধ দিয়ে নিরাপদ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এরপর ভোলায় আর কোন ধরনের বড় বন্যা নায় । কিন্তু সেই বাধ এখন অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রবোল ¯্রােতে আর মেঘন-তেতুলিয়া নদীর ভাঙ্গনে ৯১ ভাগ বাঁধ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধের উচ্চতা কম থাকায় সামান্য জোয়ারে তলিয়ে যায় লোকালয়। এছাড়া রক্ষনাবেক্ষনের অভাবেও ভেঙ্গে যাচ্ছে বাঁধগুলো ।এলাকাবাসী বলছে স্বাধীনতার পর এ যাবৎ বাধঁ সংস্কার না করার প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন যাবৎ বাঁধগুলো ঝুকির মধ্যে রয়ে গেছে। আবার ইদানিং যেই বাঁধগুলো নির্মান করা হয় সেগুলো খুবই চিকন ও নরম। এগুলোর উচ্চতা খুবই কম। বলতে গেলে বাঁধ গুলো তৈরি করা হচ্ছে একটি সড়কের মত করে। তাই নদীর সাথে থাকা বাঁধগুলো জোয়ারের পানির ঝাপটায় সহজেই ভেঙ্গে যায়।
চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২, নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন নকশা পরিবর্তন করে ২০ ফুট উচু ৯২-১০৮ ফুট দীর্ঘ তলদেশ এবং আরসিসি ব্লক দ্বারা মোড়ানো ১০ কিঃ টেকসই বাঁধ ইতিমধ্যে চরফ্যাশন উপজেলার ভাঙ্গন কবলতি বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষামূলক নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত ০৫ই আগষ্ট সম্প্রতি মেঘনার দৌলতখাঁন পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৪.৫৫ মিটার যার বিপদ সীমার ১.১৪ সেন্টিমিটার উপরে। অথচ ঠিক একই জায়গায় গত বছরের ০৩ আগষ্ট পানির উচ্চতা ছিল ৪ মিটার।
এদিকে নতুন তৈরী করা বাঁধে প্রতিদিন নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠছে, তৈরি হচ্ছে বাজারঘাট এবং কিছু মানুষ বাধেঁর উপর স্থায়ী ভাবে গবাদি পশু পালন শুরু করেছে। এভাবে বাঁধের উপরে প্রতিদিন অতিরিক্ত চাপ দিলে এ বাধঁগুলো খুব তাড়াতাড়ি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে দাবী করছে স্থানীয়রা। আরো যেই ১০৬ কিঃ বাঁধ রয়েছে এগুলো মানুষ নানা ভাবে ব্যবহার করায় দিন দিন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। আর সেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কার করতে যেই পরিমান অর্থের প্রয়োজন সেই অর্থ সংকলন করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে সম্ভব না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে প্রতি কিলোমিটার টেকসই বাঁধ ও নদীর তীর সংরক্ষন করতে প্রয়োজন ১০০ কোটি টাকা।এভাবে যদি উপজেলার সবকটি ঝুকিপূর্ণ বেড়ী বাঁধকে টেকসই বেড়ী বাঁধে পরিনত করা হয় তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খরচ হবে ১০ হাজার ৬শত কোটি টাকা। যা সংকলন করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে অসাধ্য। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বাঁধ গুলোতে অযথা বসতি স্থাপন করে ,হাটবাজার গড়ে তুলে যেন ঝুঁকিপূর্ণ না করা হয় সেই দিকে নজর দিতে হবে । তার পরও বাঁধগুলো পর্যায়ক্রমে পানি উন্নয়ন বোর্ড টেকসই করার কাজ হাতে নিয়েছে।
এদিকে বাঁধের পাশের লোকজন বলেছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মানুষের সুরক্ষা উপযোগী বাঁধ নির্মান করে ঝড় জঞ্জাল থেকে উপকূলকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কাজ করা উচিত। যাতে করে আগামী দিনগুলোতে বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে আর বাঁধ সংলগ্ন মানুষকে ভাসতে না হয়।