গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী মহোদয়, আর ভি আই পি রা অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাবেন।আমরা হতদরিদ্র মানুষ অসুস্থ হলে, কোথায় যাবো? আমরা কি আমাদের মৌলিক অধিকার, কোনো দিনই পাবো না?
সরকারি হাসপাতালে গরীব রোগির ভোগান্তির শেষ নাই। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনবাসন প্রতিষ্ঠান পঙ্গু হাসপাতাল ক্রমাগত পঙ্গুই হয়ে যাচ্ছে।
এ হাসপাতালে রোগিদের দুর্ভোগের যেনো শেষ নেই। র্কত্যরত সংশ্লিষ্ট কর্মচারি, চিকিৎসক,নার্স,ওয়ার্ড বয়দের ব্যবহারে রোগি এবং রোগির সাথে থাকা মানুষদের চোখ থেকে পানি বেরুবে।
পঙ্গু হাসপাতালের জরুরী এবং বর্হিবিভাগে কর্মরত চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারিদের তান্ডব দেখলে, যে কোনো মানুষ দিশেহারা হয়ে যাবেন। তাদের চাহিদা মতো টাকা দেয়া না হলে, শুরু হয় রোগি এবং রোগির লোকদের সাথে অশ্লীল আচারন।
জরুরি বিভাগের নার্স, ব্রাদার, ওয়ার্ড বয়, আয়া এবং চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের আচরনে রোগি এবং রোগির সাথে আগত লোকদের বুকফেটে কান্না আসবে।
তথ্য কেন্দ্র help dex থাকলেও সেখানে সাহায্য নেই, নেই তথ্য। হেল্প তথ্য তো দূরের কথা,যারা তথ্য দেবেন বা হেল্প করবেন,তাদের আসন শূন্য। লাইট জ্বলছে,পাখা ঘুরছে মানুষ নেই।
তাদের দেখা মিললেও মেজাজ যেনো চড়কগাছে।
জরুরি বিভাগের অস্ত্র পচার কক্ষের সামনে বসে আছেন, পুরুষ ও মহিলা নার্স। পুরুষ নার্সকে কয়েক বার ডাকলেও তিনি উত্তর দেননি।
তিনি মোবাইলের বাটন চাপছেন, ফেসবুক দেখছেন।এ দিকে রোগিদের চিৎকারে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। সে দিকে তারা ফিরেও তাকাচ্ছেন না।হয়তো তাদের কাছে এসব কোনো ঘটনাই নয়।প্রতি মূহুর্তে এসব দেখে আসছেন ওনারা।
আজ ০৬ অক্টোবর মঙ্গলবার ২০২০ সকাল ন’ টার পর থেকেই পঙ্গু হাসপাতালে কুমিল্লা থেকে আগত রোগি আশরাফুল এবং তাঁর লোকজন ঘুরছে বেদিশা হয়ে।
ব্যথায় রোগি আশরাফুল কাতরাচ্ছেন,গত ২৩ সেপ্টেম্বর জরুরি বিভাগে তাঁর বাম পায়ে অপারেশন হয়েছিলো।তিনি সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্বক আহত হয়েছিলেন।
চিকিৎসকরা তাকে অপারেশনের পরেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছিলেন।হয়তোবা চিকিৎসকরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন মনে করেননি, বলেই ছেড়ে দিয়েছেন।তিনি তাঁর সুবিধা মতো অন্যত্রে ছিলেন।
দু সপ্তাহ পরে আজ পরবর্তী চিকিৎসার জন্য, ঢাকার শেরে বাংলা নগরে পঙ্গু হাসপাতালের বর্হি বিভাগে আসেন।
হাসপাতাল থেকে দেয়া ছাড়পত্র নিয়ে তিনি এবং তাঁর সাথে আসা লোকজন চরকার মতো ঘুরতে থাকেন।কষ্টে যেনো আশরাফুলের জীবনটি বেরিয়ে যাচ্ছিলো।
বর্হিবিভাগ থেকে বলা হলো,তাঁর রেকর্ড ফাইল পত্র, রেকর্ড রুম থেকে নিয়ে আসতে।
বহু কষ্টে রেকর্ড রুমের সামনে গিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে R/ N 109693120 উল্লেখিত রেঃজিঃ নম্বরে তল্লাশি দেয়া হলো।খুজে পাওয়া গেলো না তাঁর রেকর্ড।
কি করবেন তাঁরা! কান্না জড়িত কন্ঠে এ-র কাছে, ওরকাছে সমাধান খোঁজেন। কে দেবে তাঁর সমাধান? হেল্পডেক্স বা তথ্য কেন্দ্র কাউকে পাওয়া গেলো না।
জনৈক ভদ্রলোক পরামর্শ দিলেন, যে দিন, যেখানে তাঁর অপারেশন হয়েছিলো, সেখানে এ ছাড়পত্র দেখিয়ে খোঁজ নিন।সমাধান পেতে পারেন।
আবার জরুরি বিভাগের অপারেশন কক্ষের সামনে নার্স স্টেশনে এলো আশরাফুল ও তাঁর লোকজন।
পুরুষ নার্স কথা যেনো শুনতেই, চাইছেন না।অনুরোধের পর অনুরোধ। সনাতন ধর্মাবলম্বী দিদি যেনো দেবদূত। একজন নার্স ছাড়পত্র টি হাতে নিলেন,আসন থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং নার্স স্টেশন থেকে বেরিয়ে অপারেশন কক্ষের ভেতরে গেলেন।কিছুক্ষণ পরে একটি রেজিস্ট্রার খাতার ভেতরে ছাড়পত্র টি নিয়ে তাঁর আসনে বসে ছাড়পত্রের উপরে পূর্বের নাম্বারের নিচেই বাংলায় লিখলেন, রেঃ জিঃ ১০৫৬৯৩। বললেন, অনেক আগেই রেকর্ড রুমে পাঠানো হয়েছে।ওখানে খোজ নিন।
অসুস্থ রোগি আশরাফুল সহ তাঁর লোকজন আবার রেকর্ড রুমের সামনে লাইনে দাঁড়ালেন, সিরিয়াল অনুযায়ী আবার রেকর্ড রুমের কর্তব্যরত কর্মকর্তা কর্মচারীর হাতে ছাড়পত্র টি দেয়া হলো।কর্তব্যরত লোকের মেজাজ খারাপ,চোখ যেনো কপালে উঠেগেছে।আশরাফুলরা কি যেনো মহা অন্যায় করে ফেলেছেন।
কিছুক্ষন পরে রেকর্ড রুমের ভেতর থেকে মূল নথিপত্র নিয়ে এসে কর্কশ ভাষায় বললেন,রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ভুল লিখলে জীবনে খুঁজে পাবো?
রোগি আশরাফুলের সাথে থাকা লোক বললেন,ভুল তো আমরা করিনি! আমরা কি করবো?
কর্তব্যরত লোক ধমকদিয়ে বললেন, বেশি কথা বলবেন না।যান চলে যান।
রোগি আশরাফুল কে আবার একরকম টেনে হেচরে নিয়ে আসা হলো,বর্হি বিভাগের ০৫ নং কক্ষের সামনে।নথিপত্র জমা দিয়ে এবার চিকিৎসকের স্বাক্ষাতের জন্য।
বর্হি বিভাগে রোগির আর্তনাদ আর চিৎকারে বাতাস ভারি হচ্ছে। তিল পরিমান ঠাই নেই বর্হি বিভাগে।
অপেক্ষা আর অপেক্ষা। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পরে আশরাফুলের ডাক এলো।
রোগি সহ তাঁর লোকজন এবার ঢুকলেন চিকিৎসকের কক্ষে।
চিকিৎসক ভদ্রলোক রোগি দেখতে দেখতে ক্লান্ত। এতো ক্লান্তির মধ্যেও যেনো চিকিৎসকের মুখে একটি সুখস্মৃতি আছে এজন্য যে, ওখানে ছ’ সাত জন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ছিলেন।নানান ওষুধের সেম্পল দিয়েচ্ছেন,ডাক্তার সাহেব গিফট সহ সব নিচ্ছেন।কর্তব্যরত চিকিৎসককে খুশি করতে যা যা বলার দরকার সেসব বলছেন,চিকিৎসক শুনছেন খুশি মনে।অপর দিকে রোগিও দেখছেন।
রোগি আশরাফুল কে যেতে বললেন ৬নং কক্ষে।
সেই পুরানো টিনসেড ভবনে ড্রেসিং রুম।বর্হি বিভাগ ৫নং কক্ষথেকে বেশ দূরে।
আবার টেনে হেচড়ে নেয়া হল ড্রসিং রুমের সামনে।লম্বা সিরিয়াল।টাকা দেয়া হলে সিরিয়ালের দরকার হয় না।
অবশেষে আশরাফুল সিরিয়াল পেয়ে ভেতরে ঢুকলেন।কর্তব্যরত লোক জানতে চাইলেন,হ্যান্ড গ্লাভস কই? আশরাফুলের সাথের লোক বললেন,আমরা জানিনা ওটা যে, কিনতে হবে।ধমক দিয়ে বললেন,যান গ্লাভস কিনে নিয়ে আসুন।আশরাফুল কে বের করে দিলেন।
আশরাফুলের সাথের লোক দৌড়ে গ্লাভস কিনে আনলেন।আবার সিরিয়াল,এ দিকে সে যন্ত্রণায় কুকড়ে যাচ্ছেন।
আশরাফুল ভেতরে গেলেন যিনি ড্রেসিং করবেন,তিনি পাক্কা মুসল্লী বয়স্ক, দাম ড়িও আছে, তবে ব্যবহারটা ইতরের মতো। কিছু টাকা হাতে গুজে দেয়া হলো।এ যাত্রা আশরাফুল মুক্তি পেয়েছেন।
তবে হাজারো আশরাফুল যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।দেখার যেনো কেউ নেই!
টাকা যার নেই, কিছুই নেই তার পঙ্গু হাসপাতালে।
আছে শুধু
ভোগান্তি।