সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট
নির্যাতন, যৌতুক দাবি ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুলের করা মামলায় স্বামী সাংবাদিক রেজাউল করিম প্লাবনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
শনিবার সংশ্নিষ্ঠ থানা আদালতের নিবন্ধন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই সুব্রত দেবনাথ বৃহস্পতিবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। চলতি সপ্তাহে আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।
চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন-সাংবাদিক প্লাবনের বাবা সামছুল হক, মা রিজিয়া খাতুন, বড় ভাই এম এ আজিজ ও ছোট ভাই এস এম নিজাম উদ্দিন।
গত ১১ মে যৌতুক, নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে সাংবাদিক রেজাউল করিম প্লাবনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাংবাদিক পারুল। মামলায় সাংবাদিক প্লাবনের মা, বাবা ও দুই ভাইকে আসামি করা হয়। মামলায় নারী ও নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) সহ পেনাল কোডের ৩১৩ ধারা অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা নং হাতিরঝিল ৩(৫)২০।
মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, চলতি বছরের ২ এপ্রিল রেজাউল করিম ওরফে প্লাবনের সঙ্গে আমার বিবাহ হয়। এরপর থেকে আমরা আমার স্বামীর বর্তমান ঠিকানা কসমো পলিটন হালিম নিবাস, ১৪/ই, মীরবাগ, ঢাকা-১২১৭ বসবাস করতে শুরু করি। স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসার শুরুর পরই আমি আমাকে তার পিত্রালয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তখন আমার স্বামী প্লাবন জানায় যে, তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিতে গেলে আমাকে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিতে হবে। নয়তো নগদ ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। প্রণয় থেকে বিয়ে হলেও বিয়ের পর তার এই চেহারা দেখে আমি বুঝতে পারি আগের ভালোবাসার সবই ছিল তার অভিনয়। প্রতারণা করেই সে আমাকে বিয়ে করেছে যৌতুকের লোভে। বিয়ের পরই আমি জানতে পারি, বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তবু তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। আমি বলি, পছন্দসূত্রে আমরা পরস্পর পরস্পরকে বিয়ে করেছি, এখানে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে যৌতুক দেয়া হবে কেন? তাকে আরও বলি, আমাদের ঢাকার একপ্রান্তে একটি বাড়ি আছে সত্য। কিন্তু সেটি বিক্রি করেও তোমাকে ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার মতো অর্থ সংগ্রহ করা যাবে না। তাছাড়া শুধু আমার জন্য মা-বাবা সেটি করতে যাবেন কেন? তাদের তো আরও সন্তান রয়েছে। এরপর আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন করা প্লাবনের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে যায়। আমি সামাজিক মর্যাদার ভয়ে চুপ করে থাকি।
সাংবাদিক পারুল মামলার অভিযোগে আরও বলেন, এই অবস্থায় ২৯ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে প্লাবন আমাকে জানায়, বাড়িতে তার মা খুবই অসুস্থ। তাকে জরুরিভিত্তিতে কুড়িগ্রামের চিলমারীর নিজ বাড়িতে যেতে হবে। যেহেতু আমার শাশুড়ি অসুস্থ, সে কারণে আমি তার সঙ্গে যেতে চাই। তখন সে বলে এই অবস্থায় তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই নিয়ে বাগবিতণ্ডার পর সে আমাকে প্রচণ্ড মারধর করতে শুরু করে। আমি তাকে বলি, দেখ আমার প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা পজিটিভ এসেছে। আমার গর্ভে তোমার সন্তান। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আরও বেশি মারতে শুরু করে। আমার পেটের ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগ করে। এরপর আমাকে বাসায় ফেলে রেখেই সে মোটরসাইকেলযোগে নিজ বাড়িতে চলে যায়। বাড়ি চলে যাওয়ার পরে আমি গর্ভাবস্থায় নারীদের যেসব অসুবিধা হয়, সেগুলো স্বামীকে জানাই। সে এই কথা জানার পরও তার মায়ের অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ঢাকায় আসতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। আমি আমার মা-বোন এবং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে পরামর্শ করি। তারা আমাকে বলে, যদি তুমি একটু সুস্থবোধ কর, তাহলে যেহেতু তোমার শাশুড়ির মরণাপন্ন অবস্থা তুমি নিজেই শ্বশুরবাড়িতে যাও। করোনাকালের এই লকডাউনে ঢাকার বাইরে যাওয়া খুবই কঠিন। আমার আকুলতায় আমাদের সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী আমাকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে দেন। আমি নিজে যথেষ্ট অসুস্থ থাকার পরও কর্তব্য মনে করে শয্যাশায়ী শাশুড়িকে দেখার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে চিলমারীতে যাই। ৫ মে বিকেলে চিলমারীতে পৌঁছাই আমি। সেখানে যাওয়ার পর সাংবাদিকতার সুবাদে পূর্বপরিচিত সাংবাদিক নাজমুল হুদা পারভেজ ও তার কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ আমার শ্বশুর বাড়িতে যাই। শ্বশুরবাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করেও আমার স্বামীর সাড়া পাই না। এমন সময় আমার স্বামীর বড় ভাই এম এ আজিজ ও ছোট ভাই এস এম নিজাম উদ্দিনসহ আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি বেরিয়ে আসেন। আমি শ্বশুর ও শাশুড়ির পায়ে সালাম করতে গেলে তারা পা সরিয়ে নেন এবং আমাকে পুত্রবধূ হিসেবে অস্বীকার করেন। তারা সকলেই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে আমার শাশুড়ি আমার প্রতি মারমুখি হয়ে তেড়ে আসেন। তিনি এই সময় বলেন, আমার ছেলে যা চেয়েছে তা পূরণ করতে পারলে এই বাড়িতে আসবে। তিনিও তার ছেলের যৌতুক চাওয়ার বিষয়টি সমর্থন করেন, এটা তার এই কথায় বুঝতে পারি আমি।
পারুল বলেন, শ্বশুরের পরিবারের সবাই মিলে আমার সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। একপর্যায়ে আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি, আমার শাশুড়ির অসুস্থতার কথা বলে প্লাবন বাড়ি এসেছে। সে বলেছিল শাশুড়ি মরণাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। আমি এখন দেখছি, শাশুড়ির কোনো অসুস্থতাই নেই। তিনি আমাকে মারতে আসছেন। তখন আমার ভাসুর-দেবর মিলে বলতে থাকেন প্লাবন বলে গেছে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে দিতে হবে অথবা নগদ ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দিতে হবে, তাহলেই তুমি স্বীকৃতি পাবে। আমি এর প্রতিবাদ করলে পরিবারের সবাই মিলে আমাকে চড়-থাপ্পড় ও চুল ধরে টানা-হেঁচড়া করতে থাকে। এতে আমি শারীরিকভাবে আহত হই এবং আমার সামাজিক মর্যাদা হেয়প্রতিপন্ন হয়। আমার সঙ্গে থাকা সাংবাদিকরা আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।
তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, পরে সেখান থেকে আমি মামলা করার জন্য চিলমারী থানায় যাই। থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা আমাকে বলেন, যেহেতু আপনাদের বিবাহ, সংসার সবই ঢাকায়, তাই ঢাকায় গিয়ে মামলা করেন। পরদিন ঢাকায় ফিরে আসি এবং পরে মামলা করি।