সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট
ইংল্যান্ডে এটা প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে মাদক মামলায় এই প্রথম এমনটি হলো। মাদক মামলায় নিম্ন আদালতে পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি শরীয়তপুরের মতি মাতবরের সাজা বাতিল চেয়ে তাঁর করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে তাঁকে কারাগারে না পাঠিয়ে সাজা স্থগিত করে সংশোধনের জন্য প্রবেশনারি কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে বৃদ্ধ মায়ের সেবা করাসহ তিনটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যে সব শর্ত ভঙ্গ করলেই যেতে হবে কারাগারে।
বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্টের একক বেঞ্চ রোববার এ রায় দেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে হাইকোর্টে প্রবেশন বিশেষ আইনে প্রথম রায়। রায়ে প্রবেশনের সুযোগ চেয়ে আনা আবেদন গ্রহণ করে আসামির রিভিশন পিটিশন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। আবার কেউ কেউ বলেছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশনে পাঠানোর এটা দ্বিতীয় নির্দেশনা হাইকোর্টের। তবে কোনো মাদক মামলায় এই প্রথম এ ধরনের রায় দিলেন হাইকোর্ট। এর আগে দণ্ডবিধির একটি মামলায় হাইকোর্ট এক আসামিকে প্রবেশনে পাঠিয়েছিলেন। আইনজীবীরা উচ্চ আদালতের এই রায়কে যুগান্তকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মতি মাতবরের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেওয়া শর্তে বলা হয়েছে, ৭৫ বছর বয়স্ক মায়ের সেবা করতে হবে। দশম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণি পড়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। আইন অনুসারে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না। দেড় বছর তাঁকে থাকতে হবে প্রবেশনারি কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে। এসব শর্ত না মানলে তাঁকে কারাগারে যেতে হবে। আর প্রবেশনারি সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করলে তাঁর সাজা মওকুফ হয়ে যাবে। তাঁকে আর কারাগারে যেতে হবে না। আর সময়ে সময়ে আসামির বিষয়ে আদালতে লিখিত প্রতিবেদন দিতে প্রবেশনারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট রুহুল আমীন ও আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এনামুল হক মোল্লা। এ সময় ঢাকা জেলা প্রবেশনারি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান মাসুদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। গতকাল রায় শেষে তাৎক্ষণিক আসামিকে তাঁর তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের জানান, ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মতি মাতবরসহ দুজনকে আসামি করে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়। বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি দুই আসামিকে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে রায় দেন ঢাকার ৩ নম্বর যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত। মতি মাতবর এই রায়ের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল আবেদন করলে তা খারিজ করে দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১ জুলাই হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন তিনি।
একই সঙ্গে জামিনের আবেদন করেন। হাইকোর্ট তাঁকে ওই বছরের ৯ জুলাই জামিন দেন। এ ছাড়া রিভিশন আবেদনের ওপর শুনানিকালে আসামিকে প্রবেশনে পাঠানোর আবেদন করা হয়। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৭ অক্টোবর এক আদেশে ১০ দিনের মধ্যে আসামির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও টিন নম্বর খুলে দিতে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের আলোকে পদক্ষেপ নিয়ে ২১ অক্টোবর ঢাকা জেলার প্রবেশন অফিসার হাইকোর্টকে অবহিত করেন। পরে আদালতের আদেশ অনুসারে প্রবেশন কর্মকর্তা গত ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে আসামির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করা হয়।