হাকিকুল ইসলাম খোকন
আজ ১৭ নভেম্বর তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মজলুম জননেতা বলে খ্যাত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এইদিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
টাঙ্গাইলের সন্তোষে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। তবে করোণা সংক্রমণের কারণে এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অধিকারবঞ্চিত অবহেলিত মেহনতি মানুষের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় আজীবন নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় সংকটে জনগণের পাশে থেকে মওলানা ভাসানী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশ ও জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। ক্ষমতার কাছে থাকলেও ক্ষমতার মোহ তাকে কখনও আবিষ্ট করেনি। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন নির্মোহ, অনাড়ম্বর ও অত্যন্ত সাদাসিধে। তার সাধারণ জীবনযাপন এ দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন।
শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য মাওলানা ভাসানী আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার আদর্শিক ঐক্য ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ছিল। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন মওলানা ভাসানী।
১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে মওলানা ভাসানীর জন্ম। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও মওলানা ভাসানী তার জীবনের বড় অংশই কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। তিনি তার কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। মওলানা ভাসানী দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের মুক্তির জন্য সারা জীবন আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন। তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে গঠিত প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতিও ছিলেন তিনি।
মাওলানা ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন। বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং ক্যাম্পাসে অবস্থিত শাহ্ নাসিরউদ্দিন বোগদাদী এতিমখানায় কোরআন খতম ও এতিমদের জন্য খাবার পরিবেশন করা হবে। এ সময় মাওলানা ভাসানীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ ও জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগত সকলকে মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং গণজমায়েত পরিহারসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাসমূহ মেনে চলতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হলেও মওলানা ভাসানীর জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকীতে কেন্দ্রীয়ভাবে দলটির কোন কর্মসূচী নেই।