আজ ৪ জানুয়ারি, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাদিবস। ‘ছাত্রলীগ’ নামটার সাথে একসময় আমাদের প্রচণ্ড আবেগ যুক্ত ছিলো। এখনও অনেক স্মৃতি অমলিন।
কৈশোরে, স্কুলছাত্র থাকাকালে যখন ছাত্রলীগের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলাম, তখনও সংগঠনটি বিভক্ত হয়নি। ১৯৭২ সালে যখন ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়, তখন আমাদের পরিবারের রাজনৈতিক অবস্থানের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে প্রভাবিত হয়েছিলাম সাতকানিয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম-বিন খলিল ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল মাবুদের দ্বারা।
বিভক্ত ছাত্রলীগের দুটো অংশ ছাত্রলীগ (রব-সিরাজ) ও ছাত্রলীগ (সিদ্দিকী-মাখন) হিসেবে পরিচিত হয়। আ স ম আব্দুর রব ডাকসুর ভিপি ও শাহজাহান সিরাজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। নূরে আলম সিদ্দিকী ছাত্রলীগের সভাপতি ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন ডাকসুর জিএস। আমাদের অবস্থান ছাত্রলীগ (রব-সিরাজ)-এর পক্ষে। আমরা লড়ছি শ্রেণি সংগ্রামকে তরান্বিত করে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য- এ ঘোষণা সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের তারুণ্যের চেতনায় ঝড় তুলেছিলো।
তারপর ধারাবাহিকভাবে ছাত্রলীগ (আম্বিয়া-মাহবুব), ছাত্রলীগ (মাহবুব-মান্না), ছাত্রলীগ (মান্না-আখতার), ছাত্রলীগ (মুনির-হাসিব)। ১৯৮০ সালে আবার বিভক্তি। আমরা হয়ে গেলাম ছাত্রলীগ (আজাদ-সিদ্দিকী)। নবগঠিত বাসদের ছাত্রসংগঠন। তারপর ছাত্রলীগ (আখতার-বাবলু)। ‘৮৩ সালে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস জিয়াউদ্দিন বাবলু সামরিক জান্তার সাথে হাত মিলায়। তাকে বহিষ্কার করার পর সহ-সম্পাদক শেখর দাস গুপ্তকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। আমরা হয়ে গেলাম ছাত্রলীগ (আখতার-শেখর)। ‘৮৩ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত হয় আমার ছাত্ররাজনীতির জীবনে ছাত্রলীগের শেষ সম্মেলন। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হই। নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামানুসারে আমরা পরিচিত হলাম ছাত্রলীগ (আখতার-জহির) হিসেবে। সম্মেলনের পর মাত্র দুমাসের মাথায় আবার বিভক্তি। আমাদের নতুন পরিচয় ছাত্রলীগ (ওয়ারেস-জহির)। তবে, সে পরিচয় নিয়ে আমরা বেশিদিন পথ চলিনি। ছাত্রলীগের নাম পরিবর্তন করে ১৯৮৪ সালের ২১ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।
ছাত্রলীগ করার সময় স্কুল ও ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সাতকানিয়া থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক-সাংগঠনিক সম্পাদক-সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রথম অংশগ্রহণ করেছিলাম ১৯৭৩ সালে, পল্টন ময়দানে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর হিসেবে প্রথম অংশগ্রহণ করেছিলাম ১৯৭৮ সালের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হলের অডিটোরিয়ামে ।
১৯৮৪ সালে সংগঠনকে ব্র্যাকেটমুক্ত করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার পর সাড়ে ১২ বছর সে সংগঠনের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করেছি। জীবনের সেরা সময়টা এ সংগঠনের জন্যে ব্যয় করেছি। কিন্তু, সে সংগঠনটিও এখন তিন ধারায় বিভক্ত। রাজনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে আমি যে ধারার সাথে সম্পর্কিত, তারা নতুন বছর ২০২১ সালের শুরুতেই নতুন নাম নিয়ে নতুন করে শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তাদের প্রতি সংগ্রামী শুভেচ্ছা,
তাদের জন্যে অনন্ত শুভকামনা!
– বেলাল চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক সংগঠক