পারবেন আফা ফেসবুকে আবেদন হারিয়েছেন। তার চ-বর্গীয় গালাগালের সমৃদ্ধ ভাষার তোড়ে; দেশপ্রেম তাকে গুডবাই বলে জানালা দিয়ে পালিয়েছে। ওদিকে ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার সৈনিকরা ক্ষমতার গরম আন্ডা দিয়ে নাশতা করতে করতে; পাওয়ার প্ল্যন্টের চৌকিদার হয়ে পড়ায় ধীরে ধীরে জনজীবনে তাদের আবেদন যেমন ফুরিয়ে এসেছিলো; ঠিক তেমনি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সৈনিকেরাও ক্ষমতার ডিম দিয়ে প্রাতঃরাশ সম্পন্ন করতে করতে তাদের মনের লতা অঙ্গ বেয়ে পাওয়ার প্ল্যান্টকে জাপটে ধরা মাত্র; জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করে।
তবু শেষবার পাওয়ার পোল ডান্সের আসর বসায় পারবেন আফা। ৭১-এর রাজাকারদের মতো ২১-এর রাজবদরেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করতে শুরু করে। সাইবার ল’র ব্লাসফেমি আদলের কালাকানুনে লেখক-সাংবাদিক-কার্টুনিস্টদের তালিকা করে রাজবদরেরা সাইবদরদের হাতে তুলে দেয়। ৭১-এর রাজাকারেরা দেশের প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলো তাদের হত্যা করতে। ২১-এ একই কাজ করছে রাজবদরেরা।
পারবেন আফা পাওয়ার পোল নৃত্যের সময়, দেশপ্রেমের কীর্তন গায়।
“মুন্নীর বদনাম হলো দেশপ্রেম তোর তরে,
মুন্নীর বদনাম হলো সরকার ডার্লিং তোর তরে”
এরপর পান চিবুতে চিবুতে আজকের গল্পটা পাড়ে; “রাজাকারদের সঙ্গে রাজবদরের তুলনা; পবিত্র মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপহাস চলছে। রাজাকার আমাদের সূর্যসন্তানদের হত্যার জন্য তালিকা করেছিলো। ওটা ঘৃণিত চরিত্র।
এমন সময় একটা ম্যাগপাই পাখি কিচির মিচির করে বলে, তুই রাজবদর; লেখক মুশতাকের মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী। তোরাই তো তালিকা করে বুদ্ধিজীবীদের, দেশের সূর্য সন্তানদের নামের তালিকা তুলে দিস সাইবদরদের হাতে।কার্টুনিস্ট কিশোর অন্ধ হয়ে যাচ্ছে; তোরাই তো এসময়ের কাজল-দিদারুলের মতো প্রতিবাদীদের হত্যা করতে চাস; ডাইনি
রাজভোঁদড় কোথাকার।
পারবেন আফা রেগে টং হয়ে যায়, ম্যাগপাই পাকিটা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি।
মুজিব বর্ষে কপি পেস্ট বই বিক্রির প্রস্তুতি নিয়ে; করোনার কারণে বিক্রি বাট্টা ভালো না হওয়া ইতিহাসান ভাই বলেন, এই পাকি তারেকের বন্দু! “যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্রে” লিপ্ত। ওকে আমরা আমাদের বলদায়তন থেকে ধাওয়া দিয়েছিলাম।
ম্যাগপাই পাখি জিজ্ঞেস করে, কোন তারেক! তারেক তো রাজভোঁদড়দের ললাট লিখন। ক্ষমতায় যেই থাকুক; তারেক একটা থাকেই লটর-পটর করার জন্য।
পুঁটি রহমান হুংকার দেয়, পাকিটা জামাতের। “যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্র” করতেছে।
সরকার সমর্থনের ও অন্যায়ের জাস্টিফিকেশানের নামে ফেসবুকে চ-বর্গীয় ভাষা ব্যবহার করায়; সরকারের সাইবার সমর্থক ব্রিগেড থেকে চাকরি হারানো ছিপিউল্লাহ এসে চুক চুক করে বলে, পরিতাপের বিষয় আমগো পরানের প্রিয় আল-বাতাবি টিভিতেও এই ম্যাগপাই পাকি গান গায়।
পারবেন আফা বিস্মিত হয়, তাই নাকি!
এইসময় পাওয়ার পোল ডান্সের আসরে প্রবেশ করে, চা-আনিস । আগে বাদশাহ আলমগীরের জৌলুস থাকলেও এখন ভাগ্য দোষে ক্ষমতার বেহেশতের দরজায় চা বিক্রি করে সে। সবাই, চা-আনিস বলে হাঁক দেয়। কোথায় হারিয়ে গেলো আগের সেই সোনালী দিন।
চা আনিস খেঁকিয়ে ওঠে, সূক্ষ রাজাকার এই পাকিটি।
সাইবার ব্রিগেড থেকে চ-বর্গীয় গালির দায়ে চাকরি হারানো মূল্যায়ন হলোনা লীগের দ্রাবিড় সংহতির লোকেরা; পারবেন আপার পাওয়ার পোল ডান্সে অনেকদিন পর বিনোদনহীন জীবনে একটু বিনোদন খুঁজে পায়। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শিয়াল পণ্ডিত বলে ওঠে, লাভ ইউ আফা।
রাজভোঁদড় গোবিন্দ কুমার, তরফদার, চতুরী, আকলিমা, রে রহমান, রুবন, শান্তনু তখন সমস্বরে, ল্যাব ইউ ল্যাব ইউ আফা বলে।
এই পাওয়ার পোল ডান্স ফুরিয়ে গেলে “পড়ে থাকে সাজঘর; জরির পোশাক আর মেয়েটির পরচুলো। জীবনটা কিছু নয় শুধু একমুঠো ধুলো।” মূল্যায়ন হলোনা লীগের বেকার ছিপি শ্রমিকেরা একে একে ফিরে যেতে থাকে বেকারত্বের ধূসর ঘর অথবা কারাগারে। এদের চ-বর্গীয় গালে অতিষ্ট হয়ে সরকার তাদের ফেসবুকে হ্যাপি-ওয়ার্কস-এর প্রণোদনা প্যাকেজ বাতিল করেছিলো। সেই থেকে তারা স্বপ্রণোদিত পাওয়ার পোল হয়ে কাক বসার পরিত্যক্ত সন্ধ্যা-দুপুর-বিকেল হয়েছে। যে জীবন শালিকের, দোয়েলের, ম্যাগপাইয়ের; তার সাথে আর তাদের হলো না কো দেখা।
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
এডিটর-ইন-চীফ, ই-সাউথ এশিয়া