মামুনুল যে নাশকতার অপরাধ করেছে হেফাজতের নেতা হিসেবে; ঠিক সেই অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব; প্রচলিত আইনে। কিন্তু পুলিশ প্রধান মি বেনজীর বললেন, বিতর্ক এড়িয়ে যেতে অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলা হয়েছে।
রিসর্টে ভাড়া করা কক্ষ একটা প্রাইভেট স্পেস; সেখান থেকে ‘নারীসহ’ মামুনুলকে গ্রেফতার; নারীকে বে-আইনি ‘মাল’ হিসেবে বিবেচনা করা; এরকম আদিম ঘটনা এখন আর সৌদি আরবেও ঘটে না। দুবাই-এ লিভ টুগেদারেরও অনুমোদন রয়েছে। কথিত ইসলামি রাষ্ট্রগুলো সংস্কারের মাধ্যমে সভ্যতার পাদপ্রদীপে পৌঁছাতে চেষ্টা করছে। ফ্রিডম অফ চয়েস বা ইচ্ছার স্বাধীনতার গুরুত্ব বুঝতে চেষ্টা করছে।
সেইখানে বাংলাদেশ; ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘অসাম্প্রদায়িকতা’-র লিপ সার্ভিস দিয়ে পার্ক থেকে প্রেমিক-প্রেমিকা গ্রেফতার করে; সমুদ্র সৈকতে উন্নয়নের পুলিশ দম্পতির কাছে নিকাহনামা দেখতে চায়। মামুনুলকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে তার এতো অপরাধ রেখে যা অপরাধ নয়; সেজন্য তাকে পাকড়াও করায়; তাকে ধরেও রাখতে পারেনি পুলিশযন্ত্র।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে এসে এই ‘মামুনুলের দুশ্চরিত্রে’-র সমালোচনা করলেন। ইসলামের চোখে এভাবে রিসর্টে যাওয়া সহি নয়; এমন বিশুদ্ধ ইসলামি চিন্তার আবেশে আমাদের বিমুগ্ধ করলেন। মানে তিনি এই স্টিং অপারেশনটিকে ওন করলেন।
অথচ মামুনুল হেফাজতের ফুটসোলজার দিয়ে ‘শাল্লায় আল্লার ভীতি’ রচনা করে হিন্দু গ্রামে হামলার পরিবেশ সৃষ্টি করলো; এরপর মোদি বিরোধী বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ না রেখে তাকে সহিংস করে তুললো। ১৪ টি প্রাণ ঝরে গেলো এই মাংসের কারবারে। তাদের ব্লাড মানি দাবি করছে হেফাজত। যেহেতু হেফাজতকে সরকারের প্রয়োজন; সরকার সমালোচকদের নাস্তিক বা কাফের ট্যাগ দিয়ে দেশ থেকে উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে; তাই সংগঠন হিসেবে এর কোন বিচার হলো না; বাবুনগরীও রয়ে গেলো ব্লাড মানি সংগ্রহ করে চর্বি বাড়ানোর সংকল্পে।
হেফাজতের বিক্ষোভে মোদি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন; আর হাসিনা সরকার বিক্ষোভকারীদের শায়েস্তা করবে; এই আশা প্রকাশ করেছে নতুন দিল্লি; জি নিউজে প্রকাশিত সংবাদ থেকে আমরা তা জানতে পেরেছি। কাজেই বিক্ষোভকারীদের অন্যতম নেতা মামুনুলকে নারীসহ রিসর্ট থেকে ধরে; এই “কলতলার গান্ধা কইরা দেয়া” মেথডের প্রতিশোধের শিয়াল ও যৌবনজ্বালার
যৌন সুড়সুড়িময় গপ্পোটি মোদির জন্য উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে জেন্টল পার্কের চাড্ডি যন্ত্রেরা।
এখন অপরাধী মামুনুলকে তার নাশকতার মতো বড় অপরাধের জন্য না ধরে; বে আইনিভাবে রিসর্ট থেকে ‘নারী বা মাল’-সহ গ্রেফতার করে; বাংলাদেশ সরকার এই সিগন্যাল দিলো; এখন নিকাহনামা নিয়ে ঘুরতে হবে দম্পতিদের। এই ঘোরতর ইসলামিকরণ; যা সৌদি আরবের চেয়েও প্রকট; তাকে যদি কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার লাস্যে ও পোগোতিচিলতার হাস্যে গ্রহণ করি আমরা; তাতে শেষ পর্যন্ত ক্ষতি বাংলাদেশ সমাজের।
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া