এক মওলানা মসজিদে তুমুল মোটিভেশনাল স্পিচ দেন খুশি জলের বিরুদ্ধে। বলেন, খুশিজল হারাম বস্তু। খেলে মাথার রসায়নে গড়বড় হয়। নামাজের সময় সুরা ভুলে যায় প্রার্থনাকারী। খুশিজল আর সুরার মাঝে বিক্রিয়া করে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। খুশিজল পুরুষের মাঝে নারী আকাংক্ষা প্রবল করে। বিবির কাছে এই “চারুলতার প্রতি তরলতা” ধরা পড়লে জুতাপেটা খাওয়ার আশংকা থাকে। কী করবেন ভাই; জীবন তো ৭২ এর সংবিধানের বেহেশত না। জীবন এখন এরশাদের রাষ্ট্রধর্মের মুখ ঝামটা খাওয়া। নারী আকাংক্ষা প্রবল দেখলে স্ত্রী দিশা হারিয়ে বই লেখে, শত্রুর সঙ্গে বসবাস। আর বাংলালিক্স বুয়া আছে, যে তার নানী-দাদীর মতো টেলিফোনে আড়ি পাতে। ৭২-এর সংবিধানের সঙ্গে একটু ফোনে কথা বলার উপায় নাই। ৭২ সংবিধানের হুর-এ- লীগের সঙ্গে সোনারগাঁ রিসর্টে গিয়া, হাম তুম এক কামরেমে বান্দ হো বলে যে একটু লকডাউন কাটাবেন; সেই উপায় নাই।
রাষ্ট্রধর্মে আটকাইয়া বৌ-এর ঝাড়ি খাইয়া; কলকাতা থেকে মেদ ভুঁড়ি কী করির ডাক্তার দেখিয়ে স্লিম হয়ে ফিরে এসে, বার বার খেলা হবে বলে যে ভাইসাব; ৫০ বছর ধরে যার সঙ্গে সংসার তাকে ভাইয়া একটু ‘সবাই তো সুখি হতে চায়; তবু কেউ সুখি হয় কেউ হয়না’ গান শোনাতে চাইলে উনার বিবি দারোগার মেজাজে বলে, বুড়া বয়সে ঢং কইরো না। সারাজীবন খেলা হবে হবে কইয়া; প্রত্যেকটা ম্যাচেই তো হারলা। আমি সন্তান-নাতনি নিয়া ব্যস্ত হইয়া গেলাম; তোমার খেলার আশা ভেঙ্গে যাওয়ায়। কাউকে কখনো মুখ ফুটে বলিনি; তোমার খেলোয়াড় হিসেবে অসহায়ত্বের কথা। টিভি টকশোতে গিয়া প্রকাশ্যে নারীরে অপমান করায়; ৭২-এর হুরেরা খেলা হবে ভাইয়াকে এখন রাষ্ট্র-ধর্মের হেফাজত কারী ভাবে। ফলে জীবন তার খেলাহীন-মালাহীন; বাঁশী সংগীতহারা।
একসময় খেলা হবে ভাইয়াই মামুনুলকে বলেছিলো, আমগো দলের বিবি ঝর্ণা অতীব সুন্দর। তার পার্লারে চাঁদের আলো। সেই দিকে চোখ আছে অনেক বামুনের। তারে একটু হেফাজত করবা মামুনুল। বোনডারে দেখে রেখো।
মামুনুলের রাষ্ট্রধর্মের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কন্ঠ আপনার সবাই শুনছেন; সে যেভাবে ঠান্ডা গলায় কইলো, আপনি আগে বাসায় আসেন। আমার তো শুইনা হার্টফেইল হওয়ার জোগাড়। কীরকম জলপাই নারী চিন্তা করছেন; তাই তো বলি, মামুনুল কেন খালি খিলাফত আর জিহাদের কথা কয়। সারাদিন এইরকম, এ খাঁচা ভাঙ্গবো আমি কেমন করে” গানের রাষ্ট্রধর্মের কারাগারে থাকলে; যে কেউ আত্মঘাতি হইয়া বেহেশতের পাসপোর্ট জোগাড় করে ৭২ এর সংবিধানে চলে যাবে।
খেলা হবে ভাইয়ের নির্দেশকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিলো মামুনুল। তাই তো খেলা হবে ভাইয়ার শোকরানা আদায় করে সহমতের বোন ও দলের বিবি ঝর্ণার হেফাজত করতে মামুনুল সোনারগাঁ রিসর্টে গিয়েছিলো।
খেলা হবে ভাই সেটাকে ভুল বুঝে, কিংবা প্রেমহীন জীবনের ক্ষরার ঈর্ষা থেকে ফুট সোলজার পাঠায়; এই রাষ্ট্রধর্মের সামাজিক পুলিশেরা রিসর্টের ৭২ নম্বর কক্ষতে রাষ্ট্র ধর্মের শেকল তুলে দেয়। সৌদি আরবেও এইরকম ভাবে কেউ ঝর্ণা হেফাজতের কক্ষে ধর্মের শেকল দেয় না।
ধরো এই যে খেলা হবে ভাই, দলের সহমতযন্ত্র, গোয়েন্দা সংস্থার বাংলা লিক্স বুয়া, পুলিশ, প্রশাসন এমনকী বাতাবিত্তোর জার্নালের মাতৃরূপেণ সংস্থিতা হীরক দিদি; অথবা ধরো ফেসবুকের সাইবদর, জেন্টল পার্ক চাড্ডি; তা গো সবার যৌন জীবনই তো নিষ্ফলা মাঠের কৃষকতা। তাদের তো ঈর্ষা হবেই ৭২’এর ঝর্ণাধারার ভালোবাসা। প্রেমহীন মানুষ প্রেমের মর্যাদা কী বোঝে! তাই সবাই মিলে মামুনুলকে ‘সংশপ্তক’-এর হুরমতীর মতো ধরে ছাকা দিয়ে দিলো। এরা খুশিজল খায় প্রেমহীনতায়। আরে বোকা; খুশি জল হইতেছে ৭২-এর সংবিধানের ঝর্ণাধারার প্রেমে পান করার আবে-হায়াত।
আবার আমাদের শিশুরূপী বক্তা; পেটে একটু খুশিজল পড়লেই; খিলাফতের ডাক দেয়। প্রেম নাই যার জীবনে; সে ৭২-এর ভালোবাসার মর্যাদা কী করে বুঝবে। প্রেমিক মন তো তার। কিন্তু নারী তার খর্বাকৃতি দেখে হাসে। তাই তো ইন্টারনেটের হেভেনের ভিডিও-তে দেখতে চেষ্টা করেছে; ইহুদি-নাসারা নারীরা বামন দেইখা প্রাচ্যের নারীর মতোন ভেটকি মাইরা বলে কীনা যে, বামন হইয়া চাঁদের দিকে হাত বাড়াইও না। দুইটা খর্ব নায়কের দীর্ঘকায়া নদীতে সাঁতারের দুইটা ভিডিও সে মোবাইলে রাখছিলো।
গোয়েন্দা সংস্থার লোকেদের জীবনেও প্রেম নাই; একটু খুশিজল খেয়ে বাড়ি ফিরলে; রাষ্ট্র ধর্মের স্ত্রী এসে জার্মান শেফার্ডের মতো শার্ট শুঁকে তারপর ধরা পড়লে কম্বল প্যারেড করায়। তাই তারা শিশুরূপীর মোবাইলের আভাগার্দ ক্লিপের খবর মিডিয়ায় কর্মরত অবসরপ্রাপ্ত প্রেমহীন গোয়েন্দাদের হাতে দিয়ে দেয়। দীর্ঘকায় মানুষের জাহাজ চালনার অনুমোদনহীন কার্গোর ধাক্কায় ৩৪ জন মানুষের মৃত্যুর খবর ধামাচাপা দিতে সে; শিশুবক্তার মোবাইলে ফোনে রং দে বসন্ত পর্ণ পাওয়া’র ব্রেকিং নিউজ দেয়; ফেসবুকের জেন্টল পার্ক চাড্ডি থেকে মোদিভক্ত হয়ে জাতে উঠতে চাওয়া ফইন্নি মুছুম্মান সেকুলাঙ্গার গুলি রাষ্ট্র ধর্মের হেফাজতে ও মোদির রাষ্ট্রধর্মের উছিলাতে ‘ছি ছি ছি জাত গেলো’ বলে রব তোলে। এরা অনেকে আবার খুশিজল না খেয়ে ফেনসি-ইয়াবা খায়। প্রেমহীন জীবন তো তাই দিশা পায়না।
তাই আমি বলতে চাই, খুশিজল ও অন্যান্য নেশা হারাম। খেজুরের খুশিজল অল্প পান হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। কিন্তু ফেনসি ইয়াবা হৃদযন্ত্র ঝাঁঝরা করে দেয়। সাইবদরগুলি ঝপপট মরে; সহমতযন্ত্র ব্যাংকে হাজার কোটির লোন রেখে পটল তোলে। এসবই মাদকের কুফল। শেষ কথা, যার জীবনে শাবাব নাই; তার জীবনের শারাব হারাম। ৭২-এর ঝর্ণাধারাই সভ্যতা; চেয়ে দেখো ইউরোপ। প্রেম আছে-খুশিজল আছে-কল্যাণ আছে-আছে; সামাজিক ন্যায়বিচার আছে । এমনকী মদিনার মরুভূমিতে মরুদ্যান আছে; সেই খানে নক্সী চাঁদোয়ার নীচে স্বপ্নের আফরিন-আফরিন আছে; হুসনে জানা কি তারিফ মুমকিন নেহি। কিন্তু এই ফেইক মদিনার রাষ্ট্রধর্মের মরুভূমিতে খুশিজল নাই; যা আছে তা কেবল মরীচীকা। তাই এখন থেকে খুশিজল হারাম এই প্রেমহীন টেকাস্তানে।
হুজুরের বক্তব্য শোনার পর এক মুসল্লি জিজ্ঞেস করে, আপনি কী শরাব পান করেছেন মওলানা! প্র্যাকটিক্যাল নলেজ আছে; নাকি থিওরি ঝাড়লেন এতোক্ষণ। আমার আবার থিওরিটিক্যাল নলেজ অসহ্য লাগে।
মওলানা গম্ভীরভাবে বলেন, খোতবা শেষে ফার্মগেট মসজিদ ও রেডবাটনের মধ্যবর্তী জায়গায় দেখা করুন জনাব।
রেডবাটনের সামনে দাঁড়িয়ে মওলানা বলেন, আপনার কথায় যুক্তি আছে; খুশিজল পান না করে খুশিজলের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়া ঠিক হয় নাই।
মওলানা সাহেব আলখাল্লার পকেট থেকে একটা চায়ের কাপ বের করে বলেন, যান রেড বাটন থেকে এক কাপ খুশিজল নিয়ে আসেন। আজই প্র্যাক্টিক্যাল নলেজ নেবো। চায়ের কাপে পান করলে মহল্লার লোক ভাববে চা খাচ্ছি। যান নিয়ে আসেন জনাব।
মুসল্লি রেড বাটন পাবে গিয়ে বলে, দুই পেগ নিট খুশিজল দেবেন; কিন্তু দিতে হবে এই কাপে। একটু কুইক করেন ভাই।
বার টেন্ডার মুচকি হেসে বলেন, ও বুঝছি মওলানা সাহেব আবার আসছেন।
মুসল্লি দ্রুত নিট খুশিজল মেরে দিয়ে বলেন, শুকরিয়া জনাব।
মুসল্লি জিজ্ঞেস করেন, আমার জন্য কী রায় জাঁহাপনা; আমি কী খুশিজল পান করবো নাকি করবো না; আপনার প্র্যাক্টিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স এখন কী বলতেছে!
মওলানার ফোনের রিঙ্গারে বেজে ওঠে, আলগা করোগো খোপার বাঁধন; দিল ওহি মেরা ফাস গ্যায়ি।
মুসল্লি তাকিয়ে দেখে মওলানার স্মার্ট ফোনে ভেসে উঠেছে নাম্বার যেটা সেইভ করা হয়েছে, হেভেন-সেভেনটি টু নামে।
মওলানা বলেন, কাজের সময়; নামাজের সময় শারাব ও শাবাব হারাম। দিনের কর্ম শেষে খোদাকে পেতে চেষ্টা করতে হবে প্রেমের মাঝে। সেই প্রেমের অনুপান হচ্ছে খুশিজল। খোদাকে পেতে হয় প্রেমের মাঝ দিয়ে। এই লায়লা-মজনু, শিরি-ফরহাদের প্রেমের গল্প; সেইটা আপনার রুহের সঙ্গে খোদার রুহের প্রেমের গল্প। খোদার প্রেমে দিওয়ানা হইতে পারলে; পৃথিবীটাই তখন বেহেশত। আর একটা কথা ভাই, কুরান শরিফের প্রথম শব্দ হচ্ছে, পড়ো। পড়তে হবে; “শরাব ফুরিয়ে যাবে; প্রিয়ার নীল চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে; কিন্তু গ্রন্থ হচ্ছে অনন্ত যৌবনা।”
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া