রানা প্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, খাপড়া ওয়ার্ডের রাজনৈতিক হত্যার স্মৃতি সবকিছুই মন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, করোনা অতিমারীর ভয়াবহ ছোবলে ৷
উপ মহাদেশের সকল মানুষের সামনে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তথা মৌলিক চাহিদার বিষয়টি প্রশ্নের সম্মুখীন৷কর্পোরেটদের হাতে চলে গেছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সকল উপকরনের চাবিকাঠি৷শুধুমাত্র সংখ্যগরিষ্ঠ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয়, সমাজের সকল স্তরের মানুষ আজ এক কঠিন জিজ্ঞাসার সামনে ৷ চিকিৎসা নিয়ে সঙ্কট শুধু বাংলাদেশে নয়, উপ মহাদেশের সর্বত্র ৷
ঠিক সেসময় অগ্রিম দেয়া অর্থের বিনিময়ে টিকা পায়নি ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ ৷ কথাটা যিনি বলছেন তিনি সরকারের কোন মন্ত্রী বা কর্মকর্ত নন ৷ তাহলে কোন অধিকারে সে কথা বলছেন ? চুক্তির গ্যারান্টার সরকার অর্থাৎ অর্থ দিয়েছেন ৷ সে অর্থ জনগনের আমানত ৷ মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কমিশন নিবেন আর অসুবিধায় পড়লে সরকারের দায় চাপাবেন? সেরকম গণতান্ত্রিক জবাবদিহীমূলক সরকার থাকলে
এতদিন কোম্পানী লাটে উঠত ৷ কিন্তু কোম্পানীর প্রধান কর্তা আর সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মাখো মাখো সম্পর্ক জেনে বলতে বাধ্য হচ্ছি,কে যে সরকার আর কে যে কোম্পানী তা বোঝা খুব কি কষ্টকর ? সেই বিজ্ঞাপনের ভাষার মত “দুজনে দুজনার ” ৷
ভারতের এই খেলা আজকের নয়,অনেক পুরান ৷ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করা,পদ্মার পানি বন্টন চুক্তি করেও বাস্তবায়ন না করা , তিস্তার পানির বন্টনে কেন্দ্র রাজ্যর সম্পর্ক দেখিয়ে নাটক করা সহ অনেক প্রশ্ন জমা আছে ৷ এল, সি করা পিয়াজের সরববাহ না করাটা আন্তর্জাতিক বানিজ্যের নিয়মের সুস্পষ্ট লংঘন ত প্রতি বছরের চিত্র ৷
প্রশ্ন হল চুক্তি ভঙ্গের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোন সরকার ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেনি কেন ? কারণ একটাই, সবাই ভারত তোষণ করে ক্ষমতায় থাকতে এবং যেতে আগ্রহী ৷ সেজন্য ভারতের শাসকরা বারংবার আস্কারা পেতে পেতে, অগ্রিম টাকা পেলেও ভ্যাকসিন সরবরাহের বিষয়ে অমানবিক সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হয়নি।
আজ ভারতের জনগণ বুঝতে পারছে তাদের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা ৷ অক্সিজেন নেই , বেড নেই , ওষুধ নেই , এম্বুলেন্স নেই , মানুষ মৃত্যুর পর দাহ এবং কবর দেবার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই ৷ সবদিকে থেকে মহা দুর্যোগের মধ্যে আছে সে দেশের মানুষ ৷ আমাদের এই দুর্যোগের মধ্যে থেকেও, জীবন বাঁচানোর কোন উপকরন বেশী থাকলে তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই ৷ সেই চিরন্তন মানবিক মূল্যবোধে আমরা বিশ্বাস করি ৷
ভারত বিরোধীতা মানে সাম্প্রদায়িকতা নয় ৷ ভারতের সিংহভাগ জনগণ এই সকল শাসক ও তার সহযোগীদের দ্বারা শেষিত ৷ শোষিত জনগন শুধু মুসলমান নয় , আদিবাসী , দলিত , নিম্নবর্গের মানুষ কে নেই ? সেখানেও প্রচুর প্রগতিবাদী মানুষ আছেন, তারাও প্রতিবাদ করেন, জেলে যান, মৃত্যু হয় ক্রস ফায়ারে ৷
ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক সরকার ও অতীতের সেকুলার প্রলেপ দেয়া সরকার কোন সময়ই আমাদের বন্ধু হয়ে দেখা দেয়নি, কথাও রাখেনি৷ তাই আসাম্প্রদায়িক , মানবিক রাজনীতির চর্চা করা দরকার৷ তাহলে মাথা উঁচু করে, আত্মপরিচয় নিয়ে দাঁড়াতে পারবেন৷ না হলে, এই প্রতারনা চলতেই থাকবে ৷ সিদ্ধান্ত আপনার।
–ইফতেখার আহমেদ বাবু, সোশ্যাল এক্টিভিস্ট
( মতামত ও বানান রীতি লেখকের নিজস্ব)