মোল্লা মামুনুল হক কখনোই সরকারের পতন চায়নি; মোল্লা মামুনুল এই পর্যন্ত যা করেছে তা সরকারের ক্ষতির কারন হয়নি। এতো মানুষ মেরেছে সরকার, এ পর্যন্ত তা নিয়ে মামুনুলের কোন হুমকি শুনিনি। বরং তিনি এতোটাই নিশ্চিত ছিলেন যে আয়েশ করতে স্ত্রী নিয়ে রিসোর্টে চলে গেছেন। এমনকি এতোটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, ফোনেও কথা বলেছেন বিভিন্ন জনের সাথে। কিভাবে তিনি এতো নিশ্চিত ছিলেন? একথা সবাই জানে যে মামুনুলের পিতার সাথে শেখ হাসিনা সরকারের চুক্তিটি এখনো বহাল আছে, এবং এটি বাতিলের ঘোষণা কোন পক্ষই দেয় নাই।
দেশের রাজনৈতিক নেতারা যেখানে এই সরকারকে উৎখাত করতে চায়; সেখানে
রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসের এই অরাজনৈতিক (?) নেতা বলেন আপনি যতদিন খুশী যেভাবে খুশী ক্ষমতায় থাকেন; কিন্তু মোদীকে বাংলাদেশে আসতে দিয়েন না। বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের গোয়েন্দা সুত্র জানিয়েছে, মোল্লা মামুনুল হক ও অন্যদের সরকার টাকা পয়সা দিয়েই মোদী বিরোধী এই নাটক করিয়েছে।
এবারে প্রশ্ন আসবে কেন এই নাটক?
প্রথমত, মোদী সরকারের সাথে একটা বারগেইন পয়েন্ট তৈরি করার জন্য, যা দিয়ে মোদীদের বুঝানো যায় যে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনে নিজের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা করতেও দ্বিধা করে না, তাই এই সরকারকেই ভারতের উচিত সমর্থন অব্যাহত রাখা।
দ্বিতীয়ত, চীনকে বুঝানো যে দেখো আমি ভারতের বিরুদ্ধেই আছি, আমিই টাকা পয়সা দিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করাতেও পিছপা হই না।
তৃতীয়ত, হেফাজতে ইসলামে সরকার বিরোধীদের নেতৃত্ব একটু বেশী পোক্ত হয়েছে, যা সরকারের জন্য সম্ভাব্য হুমকির কারন। তাই এটিকে নিজেদের লোকদের নেতৃত্বে পোক্ত করার জন্যই এই আন্দোলন, হত্যা এবং অন্যান্য ঘটনার দ্বারা নাটক চালানো হচ্ছে। এবং হেফাজতের শক্তিকেও খর্ব করে দেয়া যাচ্ছে।
চতুর্থত, উপরি পাওনা হিসেবে দুটো হয়েছে, এক, পাশ্চাত্যকে দেখানো গেলো সম্ভাব্য ইসলামী জঙ্গির উত্থান ঠেকাতে আওয়ামী সরকারের বিকল্প নেই; দুই, দেশের নাগরিকদের আরও একবার হুমকি দেয়া যে প্রয়োজনে সরকার রক্ষায় হত্যাযজ্ঞ চালাবো।
মামুনুল হককে একের পর এক সন্দেহজনক ঘটনার সাথে জড়িয়ে বিখ্যাত বানানো হচ্ছে, সেই সাথে বানানো হচ্ছে যে সে ভারত বিরোধী, পাকিস্তান পন্থী, সরকার বিরোধী এবং আসলে যে সকল স্ক্যান্ডাল ছড়ানো হয়েছে তা সরকার পক্ষ করেছে। এইভাবে তাকে সাচ্চা এক বিরোধী নেতায় পরিবর্তন করা হচ্ছে। কিভাবে?
এক, মামুনুলকে রিসোর্টে পাওয়া গেছে স্বাভাবিক অবস্থায়, বিবস্ত্র অবস্থায় না।
দুই, তাকে রিসোর্টে আক্রমন করেছে সরকার পক্ষের লোকজন, পুলিশ সাংবাদিক সবই এসেছে, পুলিশকে পরে আবার সাইজও করা হয়েছে। সবই এজেন্সির কাজ।
তিন, এরপর তার আরও স্ত্রী পাওয়া গেছে, কিন্তু তার পিতার স্ত্রীকে বিবাহের প্রচারনা দিয়ে সবকিছুকে সাধারন মানুষের কাছে সন্দেহজনক বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
চার, তাকে মানিব্যাগ চুরির মতো মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে তার ইমেজকে বাড়ানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে মামুনুল সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। সে আসলেই সরকার বিরোধী।
পাঁচ, এখন তাকে পাকিস্তানের সাথে সম্পৃক্ত, আরও অনেক কিছু দেখিয়ে ভারত বিরোধী শক্তির কাছে সহানুভূতিশীল করে দেয়া হচ্ছে।
লক্ষ্য একটাই মামুনুল হককে একজন সাচ্চা ভারত বিরোধী, আওয়ামী সরকার বিরোধী নেতা বানিয়ে দেয়া যা আসলে শেখ হাসিনা সরকারের জন্যই মঙ্গলময় হবে। মাঠে এমনতর আরও কিছু কিছু নেতা বানানো আছে। ইতিমধ্যেই তারা সফলতাও দেখিয়েছে।
বিএনপি নিজে নিজেই আগামী ২০২৩ সালের নির্বাচন কেন্দ্রিক হয়ে সরকারের সহায়ক শক্তি হয়ে যাওয়ায় সরকার অনেকটাই রিল্যাক্স অবস্থায় রয়েছে; এমনকি করোনাও সরকারের জন্য লাভজনক হয়ে দেখা দিয়েছে।
– শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ, রাজনৈতিক, আইন ও সমাজকর্মী