একটু আগে মুনিয়ার হত্যাকাণ্ড নিয়ে টু শব্দটি না করা ‘কালের কন্ঠ’র ইমদাদুল হক মিলনরে আনফ্রেন্ড করে দিলাম কারণ এই মুহুর্তে উনি গর্ব করতেছেন গত ১০ বছর ধরে সম্পাদক! গতকাল ‘দেশ রূপান্তর’-এর একজন সিনিয়র সাংবাদিককে বললাম- শুধু মুনিয়াইতো না আপনাদের সহকর্মী সাগর রুনির রক্তও আপনাদের হাতে! তনুকে ভালুকে খেয়েছে টাইপ ফালতু প্রোপগান্ডা ছাড়া গত কয়েক বছরে আপনাদের একটা ঠিকঠাক ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের উদাহরণ দেখাইতে পারবেন?
যে সাংবাদিকরা বিভিন্ন পোস্টে, ইনবক্সে মিনমিন করে ‘তারা কেন মুনিয়াকে নিয়ে সত্য রিপোর্ট করতে অপারগ’, বসুন্ধরা গ্রুপের কত্তো ক্ষমতা, তারা কত্তো অসহায় বলে জানিয়েছেন, তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি- ২০০৮ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় এক প্রেস কনফারেন্সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের দিকে নিশানা করে যে লোকটি জুতা ছুড়ে মেরেছিল সে আর কেউ না, ছিলো একজন সাংবাদিক- আল জাহিদি।
জাহিদি বুশকে দুইপায়ের জুতাই ছুড়ে ক্ষান্ত হননি, বরং প্রথম জুতাটা ছুঁড়ে বুশকে প্রকাশ্যে বলেছিলেন- This is a farewell kiss from the Iraqi people, you dog! (এটা ইরাকিদের পক্ষ থেকে বিদায়ী চুমু, কুকুর!) একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সাংবাদিক এই জিনিস যুদ্ধরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে করতে পারলে আপনারা একেকটা ক্রিমিনাল কোম্পানির আজ্ঞাবহ দাস সম্পাদক বসদের সাথে অন্তত এইটা করতে পারেন না?
এই বছরই ভারতের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহের নিউজ করে ‘এবিপি আনন্দ’ থেকে ঘোষণা দিয়ে রিজাইন করেছেন রক্ষিত সিং নামের এক জার্নালিস্ট, যাকে বলা হয়েছিলো- কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করতে!
রক্ষিত বলেছিলেন- আমার বাবা-মা রক্ত পানি করা টাকায় আমাকে মিথ্যা বলতে শেখাননি। সাংবাদিকতার ১৫ তম বছরে এসে বছরে ১২ লাখ রুপির জব ছেড়ে দিয়ে উনি বলেছেন- আমি যদি আমার অবস্থানের কারণে চাকরি না পাই, তাহলে একটা মুদি দোকান দিব বা ভিক্ষা করবো, কিন্তু মিথ্যা বলবো না!
এমনকি কর্তৃপক্ষ হিসেবে মিথ্যা বলায় অভিযুক্ত হয়ে এই বছরই সাউথ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের আটজন সাংবাদিক একসাথে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন!
রাশিয়ার বিলিয়নিয়ার আলেক্সান্ডার শিসকিনকে তার শত্রুরা রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছের লোক হওয়ায় তারা ব্রিটিশ মিডিয়া, এমপি বেশ কয়জনকে ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগে ব্রিটেনের জেলে পাঠাইছিল আর সেইসাথে ব্রিটিশ কোর্ট সেই লোকের সম্পত্তি ক্রোক করছিলো!
আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটর এক সাংবাদিক এই তথ্য বের করার পরে শেষ মুহুর্তে আল জাজিরা জানায়- তারা এই নিউজ প্রচার করতে পারবেনা! জবাবে সেই সাংবাদিক- এই বালের চাকরি করলাম না বলে আল জাজিরার চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন!
২০২০ সালে খোদ আল জাজিরার রিপোর্টই বলতেছে- ৭০ জন সাংবাদিক একসাথে রিজাইন করেছেন হাঙ্গেরির ইন্ডেক্স হু নামের বহুল প্রচারিত নিউজ পোর্টালটা থেকে, কারণ তাদের অভিযোগ ছিলো সরকার নিউজের ওপর হস্তক্ষেপ করতেছিল!
এতকিছু জেনেও, বুঝেও অন্তরে মোহর মাইরা যেসব সাংবাদিকরা এখনো হাত কচলাতে কচলাতে রুটি রুজির দোহাই দিতে দিতে ফাঁস থেকে নামানো লাশ হওয়া ইন্টারে পড়া মুনিয়া কেমনে কাপড় বদলের মতো করে প্রেমিক বদলাতেন এবং তাদের বাপ আনভীর সোবহানরা কেমন লক্ষী পক্ষী ছিলেন টাইপ নির্লজ্জ নিউজ ছাপতেছেন, হত্যার অথবা আত্মহত্যার প্ররোচনাকে হালাল করতেছেন, আমার বিশ্বাস তাদের বাপ-মা দূর্ঘটনায় মরলেও এরা এদের নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী বসদের সাথে হাত মিলায়ে নিউজে লিখবেন- বাবা-মা কেমনে দুর্ঘটনা বদলাতেন!
এদের জন্যই সম্ভবত হুমায়ূন আজাদ বলেছিলেন- সবাই যীশু হতে চায়, কিন্তু ক্রুশবিদ্ধ হতে ভয় পায়!
আমি আশাকরি ভবিষ্যতে আমার এইসব আচানক মেরুদণ্ডহীন সাংবাদিক বন্ধুদের দেখায়ে নাতি-নাতনীদের বলবো- সবাই সাংবাদিক হতে চায়, কিন্তু সত্য প্রকাশে ভয় পায়! যেমন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ফাঁকা মাথার নির্বোধগুলা- বুঝলা?
– জান্নাতুন নাঈম প্রীতি