আসলে আমরা কি রাজনীতি করছি? কোন রাজনীতি করছি? বা আদৌ কি আমরা রাজনীতি করছি? এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি অনেকদিন ধরেই। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিস্ঠ পক্ষ রাজনীতি করছে এটা আমি হলফ করে বলতে পারি; কারন তারা যা যা করছেন তা কোন না কোন রাজনীতির ধারায়ই পরে। হতে পারে সেটি দুষ্টু রাজনীতি; কারো কারো মতে অপ- রাজনীতি; তবে রাজনীতি নিঃসন্দেহে; যেখানে আমরা যারা এটাকে পছন্দ করছি না, তাদের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে; এমনকি কেউ কেউ জীবন সংশয়ে দিনাতিপাত করছেন। কিন্তু এই রাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা কোন রাজনীতি করছি? যা করছি সেখানে রাজনীতিটা কোথায়?
আমার জানামতে সরকার পক্ষ একটি আদর্শ নির্ধারণ করে তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন; প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়ে সেই আদর্শকে পরিপুস্ট করছেন প্রতিনিয়ত। এরই ধারাবাহিকতায় পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা তাদের আদর্শিক লেবাসে জড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন; এটা তাদের সার্থকতা, সফলতা। সেই আদর্শ ও প্রায়োগিক সিস্টেমকে আমার পছন্দ না হলেও, যারা সেটি পছন্দ করছেন, ধারন করছেন, তারা সেটি এগিয়ে নিচ্ছেন, নিবেন, এটাই বাস্তবতা। কিন্তু আমরা সেই আদর্শের বিপরীতে কি কোন আদর্শ ধারন, প্রচার বা বিকশিত করার চেষ্টা করছি কি? বা আদৌ কোন আদর্শ কিভাবে ধারন করে, কিভাবে প্রয়োগ করতে হয় সেটি বোঝার মতো বোধ আমাদের রয়েছে কিনা সেটাই এখন বিবেচনার বিষয়। সমস্যা হচ্ছে ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে আমাদের (সরকার পক্ষের বিপরীতে অবস্থিত সবাই) মধ্যে এই সকল আদর্শিক বিষয়গুলো শিকয়ে তুলে দেয়া হয়েছে, যে কারনে আজকের এই ধারাবাহিক বিপর্যয় চলছে চলবে, যতক্ষন পর্যন্ত না এই অবস্থার পরিবর্তনে রাজনৈতিক ও আদর্শিক ধারার সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া না হয়।
আমরা ভুলেই গেছি, রাজনৈতিক কর্মসূচির নাম রাজনীতি নয়, যদি না তা আদর্শের উপর ভিত্তি প্রণীত হয়। বিভিন্ন দল এখন কর্মসূচী পালন করে; রাজনীতি নয়, কারন এদের অধিকাংশ এখন আদর্শ ধারন করে না; আদর্শ ধারন করা বোঝেই না। এরা হচ্ছে ব্যক্তি সর্বস্ব ও মোসাহেব নির্ভর এক একটি রাজনৈতিক নামধারী ক্লাব মাত্র। এরা বুঝতেই চায় না সরকারে অবস্থারতপক্ষ কেন অন্যপক্ষকে এমন সুযোগ দেবে যাতে তাদের রাষ্ট্র ক্ষমতাই বেহাত হয়? পুঁজিবাদী বিশ্ব- রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এমন দরবেশ টাইপ আদর্শের কি কোন উদাহরন রয়েছে?
রাজনীতিতে অবশ্য একটা বিষয়ে সরকার ও প্রতিপক্ষের দারুন মিল, সেটি হচ্ছে প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, আর সে জন্য রাজনৈতিক আক্রমনের পরিবর্তে ব্যক্তি আক্রমন হচ্ছে সকল পর্যায়ে। চরিত্র হরন হচ্ছে সর্বত্র। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে হ্যান্ডকাফ পরে কিন্তু বন্দী সোসাইটি গার্লদের রানীর মতো আপ্যায়ন করা হয়। কারন একটাই আদর্শিক রাজনীতির অভাব। সরকারপক্ষ বলছি এই কারনে যে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগও আদর্শহীন হয়ে পড়েছে, এটা বুঝেই নীতি নির্ধারকেরা রাষ্ট্রযন্ত্রকেই তাদের আদর্শিক অবস্থানে পরিবর্তিত করে নিয়েছে। প্রতিপক্ষ আমরা যদি এটি বুঝতে না পারি তবে বনবাসে আরও বহুকাল থাকতে হলেও আশ্চর্য হবো না।
–শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ,
প্রেসিডেন্ট, লিবারেল পার্টি বাংলাদেশ