সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৯শে জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলছে। অনশনে একের পর এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। আজ সোমবার সকাল সাতটা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৭ জন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও কেউ অনশন ভাঙেননি। এমন অবস্থার মধ্যেও কর্মসূচি চালিয়ে যেতে তাঁরা অনড়। ইতিমধ্যে উপাচার্য ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের বাসভবনে পুলিশ সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে যাতায়াতের সড়কে শিক্ষার্থীরা রাতভর অবস্থান নিয়ে ছিলেন। তারপরও নির্লজ্জ বেহায়া ভিসি পদত্যাগ করবেন না বলেই মন স্থির করে রেখেছেন। এমন নির্লজ্জ ভিসির সমর্থনে পদত্যাগে প্রস্তুত আছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৩৪ ভিসি !!
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নামের শিক্ষকদের একটি সংগঠন গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশে, বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরা আচার-আচরণে প্রায়ই শাসকের ভূমিকায় আবির্ভূত হন এবং শিক্ষার্থীরা যেন প্রজা—এমন আচরণ করেন। তাঁদের শাসন একপর্যায়ে স্বৈরশাসনে রূপ নেয়, আন্দোলনকারীদের দমন করতে কখনো ক্ষমতাসীন দলের সংগঠন ছাত্রলীগ, কখনোবা পুলিশকে লেলিয়ে দেন তাঁরা। অথচ উপাচার্য-প্রভোস্ট—এসব পদে শিক্ষকেরাই থাকেন। নিজের পদ-গদি রক্ষার জন্য তাঁরা শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করতে পিছপা হন না।
শিক্ষকদের এই দলবাজিতে আর তেলবাজিতে বাংলাদেশে শিক্ষার মান লজ্জাজনক পর্যায়ে যেয়ে ঠেকেছে। যে দেশে শিক্ষকের মান যত ভালো, সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা তত উন্নত। আমেরিকায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসম্মত শিক্ষার ২০ শতাংশ নির্ভর করে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ওপর। কিন্তু ৮০ শতাংশ নির্ভর করে যোগ্য শিক্ষকের ওপর। আমাদের দেশের শিক্ষার মান ও শিক্ষা বাজেট দুটিই দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং’-এ আমাদের শীর্ষ দুই বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট এবং ঢাবির অবস্থান ৮০১-১০০০ এর মাঝে।
উল্লেখ্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্বের তাবৎ বেহায়ার জন্ম মনে হয় বাংলাদেশে ! ক্ষমতার জন্য এমন লালায়িত গোষ্ঠী পৃথিবীতে আর খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এ কারণেই আজ দেশ চলে গিয়েছে নষ্টদের দখলে!
– এন আফরোজ রোজী, লেখক