কাজাখস্তানে অব্যাহত সরকার সমালোচনার ভয়ে ভিন্নমত নিয়ন্ত্রণ কমিশন নতুন আইন আপলোড করেছে সরকারি ওয়েবসাইটে। এর আগে প্রণীত ডিজিটাল লাফটার সিকিউরিটি এক্ট ও ক্রাইং সিকিউরিটি এক্ট দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি ভিন্নমতের সমালোচনা। সেই প্রেক্ষিতে এলো ভিন্নমত নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইন। এই আইনের অধীনে গুম-খুন-দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি-লাইলাতুল ইলেকশন; যাই ঘটুক কাজাখেরা বাধ্য হবে সহমত ভাই বলতে। কেউ যদি টোকায়েভ সরকারের উন্নয়নের ঢোলকে বেহুদা বলে; সেই ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি অনাবাসী কাজাখ হয়; যেহেতু তাকে ধরা যাবে না; কিংবা পাসপোর্ট বাতিল করলে সে পশ্চিমা বেহেশতের পাকাপোক্ত পাসপোর্ট পেয়ে যাবে; তাই বিন্দুমাত্র ভিন্নমত পোষণকারী কোন ফেসবুক পোস্ট কাজাখস্তানের অভ্যন্তরে কেউ শেয়ার করলে; তাকে দড়ি করে বেঁধে নিয়ে গিয়ে মুশতাকভস্কি কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে নতুন আইন অনুসারে।
ভিন্নমত নিয়ন্ত্রণ কমিশন ফেসবুক ও ইউটিউব নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দাবী করেছে মার্ক জুকারবার্গ ও বিল গেটসের কাছে। কাজাখ ভিন্নমত নিয়ন্ত্রণ কমিশনের দাবী, ফেসবুক ও ইউটিউবের প্রতিনিধিকে বসতে হবে রাজধানী নূর সুলতানের সরকারি সচিবালয়ে চেয়েছিলাভ দুধস্কি পেলাভ ছানাস্কি ও সুইস হাছানস্কির দপ্তরে। আর পশ্চিমা কোন প্রতিনিধি নয়, ফেসবুক ও ইউটিউবকে নিয়োগ করতে হবে দেশি কাজাখ ভোদাইস্কি; যাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে গিয়ে গুম করে ফেললেও এতিমের খোঁজ কেউ নেবে না। কাজাখ ভিন্নমত নিয়ন্ত্রণ ও দমন কমিশনের এতোসব মামুবাড়ির আবদার ফেসবুক-ইউটিউব মেটাবে; নাকি বিগ ব্রাদার হতে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার মতো বৃহত্তর বিগ ব্রাদারের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে টোকায়েভ প্রশাসন; সেটাই এখন দেখার বিষয়।
টোকায়েভ সরকারের থিংক ট্যাংক গ্রুপ ‘ক্রাই’ ভিন্নমত নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এই নতুন আইন উন্নয়ন, জিডিপি, ব্যাংক রিজার্ভ ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখবে।
টোকায়েভ সরকারের অনশন ভঙ্গ কমিশনের প্রধান বলেছেন, উন্নয়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রতিহত করতে একটি চিন্তা নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োজন। কারণ আগামীতে আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আমার হাতে শরবত পান করে অনশন টুটিতে রাজি হবে বলে মনে হয় না। লাসভেগাস কোমল ভাইরাস যেমন টেলিফোনে আড়ি পেতে কথকতা রেকর্ড করে; তেমনি একটি ভাইরাস মানবদেহে প্রতিস্থাপন করতে হবে; যাতে জনগণের কপোট্রনিক সুখ দুঃখ সম্পর্কে রিপোর্ট ও আপডেট পাওয়া যায়।
টোকায়েভ সরকার চিন্তা নিয়ন্ত্রণ ডিভাইস আমদানির জন্য ইজরায়েলের শরণাপন্ন হবে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তেল আভিভে কাজাখ রাষ্ট্রদূত আজিজায়েভ। তিনি টেলিফোনে জানান, বাতাবি লেবু আর বাতাবি চলচ্চিত্র-নাটকের পিছে অযথা অর্থ অপচয় হয়েছে এতোকাল। কাজাখস্তানের উন্নয়ন ও দেশপ্রেম বিষয়ে এতো মিডিয়া প্রচারণা চালানোর পরেও; দেশের বিরুদ্ধে যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্র থামেনি।
কাজাখস্তানের যে স্যাটেলাইটটি বিশ্ব বাজার থেকে কোন ভোক্তা না পেয়ে লোকসান গুণছে; সেই স্যাটেলাইটটিকে কাজাখস্তানের নাগরিকের ড্রইং রুমে কী আলোচনা চলছে ‘নাইট ভিশন’ ক্যামেরা দিয়ে তার ভিডিও সংগ্রহের কাজে লাগানো যায় কীনা; সে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে বলে সূত্র জানাচ্ছে।
ভিন্নমত ও চিন্তা নির্মূল কমিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যে ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাঝ দিয়ে কাজাখস্তানের স্বাধীনতা এসেছিলো; তাকে সুসংহত রাখতে ভিন্নমত ও চিন্তা নির্মূল এখন সময়ের দাবী। ষড়যন্ত্র করে কাজাখ দেশটাকে গন্ধমাদন পর্বতের মতো তুলে নিয়ে গিয়ে এমেরিকার টেক্সাসে স্থাপনের ‘যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্র’ চলছে।
ওদিকে ভিন্নমত ও চিন্তা নির্মূলের কাজে পথে-ঘাটে হেলমেট পরে হাতুড়ি নিয়ে ঘুরছে টোকায়েভ সরকারের টোকাইয়েরা। লঞ্চঘাটে, পার্কের বেঞ্চিতে কাউকে একা বসে কিছু ভাবতে দেখলে সরকারি টোকাইয়েরা তাকে চ্যালেঞ্জ করছে, ঐ মিয়া কী ভাবেন এতো; নিশ্চয়ই সরকার বিরোধী চিন্তা করছেন। নইলে আপনার কপালে এই রকম ভাঁজ পড়লো কেন! দ্রব্যমূল্য ঘোড়া উন্নয়নের পিঠে সওয়ার হওয়ায় ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের পাশে স্যুট-টাই-রেশমী বস্ত্র পরে দাঁড়িয়ে থাকা জনতাকে চিন্তা নির্মূল কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা গিয়ে জিজ্ঞেস করছে, অই মিয়া কী ভাবেন এতো! মধ্যবিত্ত বলে আবার মুখ লুকাচ্ছেন কেন। মধ্যবিত্ত আবার কী! কাজাখস্তানের স্বাধীনতার ও দেশপ্রেমের স্বপক্ষের বিত্তবান আর বিপক্ষের বিত্তহীন; এই দুটি শ্রেণী থাকতে হবে। এর বাইরে কোন বিত্ত চিন্তার সুযোগ নাই।
টোকায়েভ সরকারের বিরোধী চিন্তা দমনে ইজরায়্যেলি কোমল ডিভাইস এসে পড়ার আগেই, এক দেশপ্রেমিক ওষুধ কোম্পানি ঘোষণা করেছে তারা কাজাখভ্যাক্স নামে একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের দ্বার প্রান্তে। বানরের দেহে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য গাছে গাছে বানর খুঁজছে তারা। কাজাখ দেশপ্রেমিক ডাক্তার এসোসিয়েশানের নেতা ডা চম্পকস্কি অভিমত রেখেছেন, ট্রায়ালের জন্য আবার বান্দর লাগবে কেন! ডিজিটাল লাফটার ও ক্রাইং সিকিউরিটি এক্টে গ্রেফতারকৃত কিশোরদের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা হোক, তারা পুলকিত হয়ে বলে ওঠে কীনা, কাজাখস্তানের উন্নয়নের সরকার, বার বার দরকার!
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
এডিটর-ইন-চীফ ই-সাউথ এশিয়া