এইমুহূর্তে রাজনীতি নিয়ে যে যা বলুক না কেন, বিশ্ব রাজনীতিতে একের পর এক ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর সবাই মূলতঃ উন্মুখ হয়ে আছে একটি বিষয়ে জানার জন্যে- কি হবে বাংলাদেশের! কি হতে পারে বাংলাদেশে!
আমরা যে যেভাবেই বর্ণনা করিনা কেন, আসলে বাংলাদেশের জনগণ এক রুদ্ধশ্বাস নিয়ে অপেক্ষমান আজব আওয়ামী গণতন্ত্র থেকে মুক্তির জন্যে। যে জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অপেক্ষমান ছিল স্বাধীনতার জন্যে, প্রায় তিনগুন বেশী জনগোষ্ঠী এখন অপেক্ষা করছে মুক্ত নির্ভীক এক নাগরিক জীবন লাভের প্রত্যাশায়!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি কি এই অপেক্ষার জ্বালা বোঝেন? ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে যে কারনে দীর্ঘদিন আপনি অপেক্ষমান ছিলেন, আপনার কি মনে হয়না যারা আপনার আমলে আপনার মতো একই পরিনতি ভোগ করেছে, তারাও অপেক্ষমান? সময় কিন্তু ঘুরে ঘুরে চলে চেয়ার সিটিংয়ের মতো। আজ আপনার কাল হয়তো অন্যের। কিন্তু এই স্বাধীনতা উত্তর ২ গুন বৃদ্ধি পাওয়া নতুন জনগোষ্ঠী কি চায় সেটা কি আপনি ভেবেছেন কখনো? আপনার বিশাল গবেষণা সেল কি কোন #তথ্য ও তত্ত্ব আপনার কাছে উপস্থাপন করেছে? না করে থাকলে আপনার গবেষণা সেল আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্মোহ রিপোর্ট দিতে বলেন; আপনার তাতে উপকার হলেও হতে পারে! তবে সত্যি বলতে কি আপনার সময় ফুরিয়ে আসছে এটা মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।
বিএনপি এখন আর জিয়ার বিএনপি নেই; নেই খালেদা জিয়ার বিএনপিও। এখন এটি তারেক রহমানের বিএনপি। কি কি কারনে তিনি রাগ করেন, কোন ভুল করলে সেটিকেই তিনি যেমন আঁকড়ে থাকতে পছন্দ করেন, কেন তিনি মেধাবী নেতৃত্বের সমাগম ঘটাতে সক্ষম হচ্ছেন না, সেগুলো নিয়ে বলতে চাই না। তবে জেনারেল জিয়া তার নিজের চেয়েও যোগ্য লোকদের সমাগম ঘটিয়ে একটি দল ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার পত্তন করেছিলেন, যা ভারতীয় আগ্রাসনের বিপরীতে অবস্থানরত জনগোষ্ঠীর কাছে শতভাগ সমাদৃত হয়েছিল। তারেক রহমানের বিএনপি কি সেই জনগোষ্ঠীকে আশ্বস্ত করতে পারছে বা তেমন রাজনৈতিক সংগঠন ও লিটারেচার তৈরি করতে পেরেছে যা একটি জাতিকে মুক্তির পথপ্রদর্শন করতে পারে? রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা থেকেও তারা অনেক দূরে। নির্মোহভাবে খোঁজ নিলে তারেক রহমান শুধু হতাশই হবেন না; তিনি আশ্চর্যও হবেন! তবে বিএনপির প্রতিপক্ষের মেধার বিপরীতে যাদের তিনি কাজ করাচ্ছেন, সেই প্রতিপক্ষের সাথে পাল্লা দেয়ার মতো মেধা কারো চোখে পড়ছে বলে অন্তত আমি পাইনি।
যদি বিএনপি মনে করে থাকে আওয়ামী শাসনে অতিস্ট জনগোষ্ঠী এমনিতেই বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, সেটি ভাবার সময়কাল আর আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের অবস্থান এখন অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ অনেক শক্তির কাছেই। তাই যাদের এই অঞ্চলে স্বার্থ রয়েছে, রাজনীতি ও জনগণের ইচ্ছাকে তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে, আগামীতেও করবে। এই মুহূর্তে এটা ঠেকানোর ক্ষমতা বিএনপিরতো নেইই কোন কোন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগেরও নেই আর। বরং দুই দলই এই শক্তিগুলোর তাঁবেদারি করতে চাইছে। এমনকি করছেও।
সর্বশেষ আমরা জানি; পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়া প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলতে বাধ্য হয়েছেন, সামরিক বাহিনী তার দেশের জন্য তার চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ; সামরিক বাহিনী না থাকলে দেশের অস্তিত্বই সংকটে পরবে!
আমি ছোট একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে আজকে বলছি; বাংলাদেশের রাজনীতিতেও সামরিক বাহিনী এক নিয়ামক শক্তি; যাকে উপেক্ষা করলে আওয়ামী লীগও এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবে না যেমন, তেমনি বাংলাদেশেরও অস্তিত্ব সংকট হবে সামরিক বাহিনী ধ্বংস হলে। তাই সামরিক বাহিনীকে উপেক্ষা করে নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না বা ক্ষমতায় থাকতেও পারবে না। (চলবে)
– ‘ভূমিপুত্র’ সে খ মহিউদ্দিন আহমেদ
প্রেসিডেন্ট, লিবারেল পার্টি বাংলাদেশ