এটা ভয়ংকর একটা পৃথিবী; আশীর্বাদ ও দোয়া যেখানে ধর্মীয় ব্যাপার।
গত এগারোই মে আল জাযিরার একান্ন বছর বয়েসী অভিজ্ঞ সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহকে ইযরায়েলি স্নাইপার সজ্ঞানে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে হত্যা করলে; পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলো তাকে শহীদ আখ্যা দেয়।
শিরীন ছিলেন ফিলিস্তিন-এমেরিকান। দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন পূর্ব জেরুযালেম-এ। মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের হৃদয়বিন্দুতে বসে তিনি সাংবাদিকতা করতেন। তিনি দুদিন শহীদই ছিলেন; কিন্তু এরপর যখনই পাকিস্তানি টিভিগুলো আবিষ্কার করে, তিনি প্যালেস্টাইনের অধিকারের পক্ষে উচ্চকিত হলেও মুসলমান নন, একজন খ্রিস্টান, চট করে তিনি শহীদের মর্যাদা হারিয়ে কেবলই নিহত বলে পরিচিতি পান টিভিগুলোতে। তার মানে যেহেতু তিনি মুসলিম নন, সেহেতু তিনি শহীদ নন। পাকিস্তানি মিডিয়া তখন আর আগ্রহী নয় এমনকী মরহুম শব্দটি তার নামের আগে বলতে, যেহেতু মরহুম শব্দটি রহমত বা আশীর্বাদ শব্দ থেকে এসেছে।
শিরীন আবু আকলেহ বেথলেহামের ফিলিস্তিনি-আরব পরিবারে জন্ম নেন ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারী। তিনি প্যালেস্টাইন সম্পর্কিত সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রতিবেদন করেছেন। দ্বিতীয় ইনতিফাদাসহ ইযরায়েলি সেনার গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনিদের জানাজা কিছুই বাদ যায়নি শিরীনের ২৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে। তার সাংবাদিকতা ফিলিস্তিনি ও আরবদের সাংবাদিকতার পেশায় আসতে অনুপ্রাণিত করেছিলো। তিনি ঐ এলাকার ঘরে ঘরে পরিচিত একটি নাম; আরব মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনকালে; পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইযরায়েলি সেনা হামলার খবর সংগ্রহের সময় নিহত হন।
.
পাকিস্তানের মুসলমান মিডিয়ার জন্য তিনি শহীদ নন; যেহেতু তিনি মুসলমান নন। সম্প্রতি তিনি হিব্রু শিখছিলেন; ইযরায়েলি মিডিয়ায় প্যালেস্টাইন বিরোধী প্রচারণা আরো ভালোভাবে শিখছিলেন; যেন এর ঠিক ঠাক উত্তর দেয়া যায়। মুসলমান সাংবাদিকদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়না; যারা লড়াই ক্ষেত্রে শিরীনের ধারে কাছে রয়েছেন। শিরীন বার বার গ্রেফতার হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকবার; শুধু প্যালেস্টাইনের ইযরায়েলি নৈরাজ্য ও নৃশংসতার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে।
আমি একজন মুসলমান। আমি একজন সাংবাদিক। এবং আমার কাছে শিরীন আবু আকলেহ একজন শহীদ।
মুনাযযা সিদ্দিকীঃ সাংবাদিক, কলামনিস্ট, (জিও-নিউজ), করাচী, পাকিস্তান