এক. গত কিছুদিন ধরে ফেইসবুকে সে ভাবে যেতে পারছি না। কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ও সুহৃদের অনুপ্রেরণায় একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিয়ে কাজ করছি। করোনা কালে সময়টা এ নিয়ে একদিকে ভালোই কাটছে। যদিও এ কাজ করতে গিয়ে লেখালেখি ব্যাপকভাবে কমে গেছে। বিশেষকরে ফেইসবুকে গত কিছুদিন ধরে লেখালেখি প্রায় নেই বললেই চলে। এরমধ্যেও একটু সময় পেলেই ফেইসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে মাঝে মাঝে ঢু মেরে দেখি। শুক্রবার সকালে একটু দেরীতে ঘুম থেকে উঠেই সুযোগমত ম্যাসেঞ্জার চেক করলাম। সেখানে এক গ্রুপে একটি ভিডিও পোস্ট দেখলাম করোনার ভেকসিন নিয়ে। খুবই বিস্মিত হলাম কেমন করে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এরা যে সব ক্ষেত্রে নির্দোষ আশার সওদাগর তা নয়, কিছু লাইক কমেন্ট সিকার এবং সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে ব্যবসা করার জন্যও কিছু মানুষ মাঠে নেমেছে অর্ধ্ব সত্য বা ভূয়া তথ্য নিয়ে। এরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এবার খুলেই বলি প্রিয়দর্শিনী নামের একটা পেজের পোস্ট ‘করোনার ভ্যাক্সিন 💕 সারা গিলবার্টের সুপার ভ্যাক্সিন চ্যাডক্স-১: সুখবর মে মাসেই‘। ওই ভিডিও পোস্টে বলা হচ্ছিল মে মাসের মধ্যে জানা যাচ্ছে টিকাটা কাজ করছে কি না। এমন কিছু তথ্য দেয়া হচ্ছিল যা নিয়ে সন্দেহ হলে তথ্যের উৎস জানতে চেয়ে মন্তব্য করার পর তারা আমার মন্তব্য ডিলিট করে দেয়।
দুই. নিউজ পোর্টালের প্রয়োজনেই গত বুধবার ব্রিটেন সরকারের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং-এর লাইভ দেখছিলাম। সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডমিনিক রাব বলছিলেন, বর্তমানে চলমান সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা দ্রুত অবসানের সাথে সাথে দ্বিতীয় দফায় সর্বোচ্চ মাত্রার ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে দ্বিতীয় দফার লকডাউন অর্থনীতির দুরবস্থাকে দীর্ঘায়িত করবে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে চলমান ১০ নাম্বার ডাউনিং স্ট্রিটে চলমান এ ব্রিফিং-এ প্রথমত প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সরকারের পক্ষে উপস্থিত থেকে সরকারের নানা কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারে বক্তব্য দিতেন। বলা হয়ে থাকে, সংকটের প্রারম্ভিক স্তরে আমেরিকা, ইটালী, স্পেনের মত দেশগুলোর মত ইউকে সরকার ও যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে করোনাকে নিয়ে ভাবেনি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজেই গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কোবরা কমিটির ৫টি সভায় উপস্থিত না থেকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এর ফলাফল কি হচ্ছে তাতো সবার জানা।
সে যাক মার্চের শেষদিকে জনসন করোনা আক্রান্ত হবার পর ব্রিফিং-এ কোন সিনিয়র মন্ত্রীর সাথে শীর্ষ পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাধারণত উপস্থিত থাকেন। গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী র সাথে উপস্থিত ইউকে’র চীফ মেডিক্যাল অফিসার প্রফেসর ক্রিস হুইটি বলেন, এটা ভাবা পুরোপুরি অবাস্তব যে জীবনযাত্রা খুব শিগগির স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। প্রফেসর ক্রিস হুইটি বলেন আমাদেরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ এই দুর্যোগ স্বল্পসময়ে মোকাবেলা করা বা পরিস্থিতির খুব শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে আসার আশাবাদ খুবই ক্ষীণ। ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মাধ্যমে এর থেকে বেরিয়ে আসার যে সুযোগ তাও যে আগামী বছর নাগাদ আমরা হাতে পাব তার সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ। তিনি বলেন এই কারণে এই রোগটা খুব শিগগির হারিয়ে যাবে বা চলে যাচ্ছে বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন আমাদেরকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে আমরা এমন একটা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করছি আর বিশ্বব্যাপী যা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের করে যেতে হবে। মি: হুইটি আরো বলেন মানুষের এটা ভাবা উচিত নয় যে হঠাৎ করে কোভিড১৯ সংক্রান্ত মৃত্যুর ঘটনা কমে আসবে।
তিন. কথাগুলো বলছিলাম এ জন্য যে, যে দেশের ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু সত্য কিছু অর্ধ্ব সত্য এবং কিছু পুরো মিথ্যা তথ্য দিয়ে আশার সওদাগররা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, সে দেশের নীতিনির্ধারকরা সমস্যাটিকে কিভাবে দেখছেন সে ব্যাপারে সামান্য ধারণা দেয়া। যে কোন দু:সময়ে উদ্বেগের সাথে সাথে মানুষ মনে আশা পাবার মত অবলম্বন খোঁজে। অন্য আর দশটা হুজুগের মত আশা, নিরাশা, অনুভূতির চাষবাস এবং ব্যাপক ফলনের ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষিণ এশিয়া যেন পৃথিবীর এক উন্নত উর্বর ক্ষেত্র। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার এক ব্যাপক প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ ভূমিকাও গোপন কিছু নয়। উন্নত অনুন্নত দেশের মিডিয়া এক্ষেত্রে মাত্রাভেদে যেন একই পথের পথিক। কমবেশি ব্রিটেনের সব পত্রিকায় উপরোক্ত ব্রিফিংয়ের বক্তব্যগুলো তুলে ধরা হলেও ভ্যাকসিন নিয়ে জীবনযাত্রা যে খুব শিগগির স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে না এ বক্তব্যকে তারা সেভাবে হাইলাইট করেনি। তার পরিবর্তে বিবিসি গুরুত্ব দিয়ে মাসের বাকি আটদিনের মধ্যে অর্থাৎ মাস শেষে দিনে ১০০ হাজার টেস্টের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্পর্কিত তথ্য শিরোনাম করেছে। ব্রিটেনের অন্যান্য পত্রিকা ও প্রায় একই ধারা অনুসরণ করে। মিডিয়ার সাধারণ কিছু প্রবণতা বড় দাগে কিছুটা মিললেও এটিচ্যুডের ক্ষেত্রে পার্থক্য যেন আকাশ পাতাল। একটা কথা বোধহয় প্রসংগত বলাই যায়- প্রতিদিনের অনলাইন লাইভের ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিশেষত: মন্ত্রীরা কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ব্যক্তির মত যেভাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নগুলোকে এড্রেস করেন, তা উন্নত দেশে সাধারণ ব্যাপার হলেও আমাদের মত দেশগুলোর মানুষের কাছে দেখার মতই কিছু। মাননীয় মাননীয় চাটামিতো কল্পনাই করা যায় না।ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসির এটা যেন এক ধরণের সৌন্দর্য্য। চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মিডিয়ার এই প্রচন্ড (কিছু ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলক) ভূমিকা সব সময় অনুভূত হয়।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের ইতোমধ্যে জানা হয়ে গেছে গত বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ড টীমের ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে এ সংক্রান্ত প্রায় সত্তরটিরও বেশি গবেষণায় ইউকের অক্সফোর্ডের পাশাপাশি ইম্পেরিয়াল কলেজের একটি গবেষণাসহ ইউকে‘র দুটি এবং আমেরিকা ও চীনের একটি করে সবমিলিয়ে চারটি গবেষণা হিউম্যান ট্টায়াল পর্যায়ে গেছে। অক্সফোর্ড টীমের নেতৃত্বদানকারী প্রফেসর সারা গিলবার্ট গত রোববার বিবিসির Andrew Marr Show অনুষ্ঠানে পরীক্ষায় প্রমাণিত হবার আগেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সাধারণভাবে ১৮-৫৫ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবকের উপর হিউম্যান ট্রায়াল যদি সফল হয়, এরপর তা প্রয়োগ করা হবে বয়স্ক মানুষের উপর। এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালের সবচেয়ে জটিল এবং ঝুঁকি পূর্ণ স্তর হবে এটি।
সব পর্যায় কার্যকর প্রমাণ হলে প্রফেসর সারা গিলবার্ট আশা করেন ভ্যাকসিনটি সেপ্টেম্বরে ল্যাবরেটরি থেকে ( ল্যাব থেকে জ্যাব) কারখানায় উৎপাদনে যাবার জন্য প্রস্তুত হবে। তিনি ব্যাপক উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইউকে‘র সক্ষমতা বিবেচনায় এখনি তার উৎপাদনে যাবার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন প্রয়োজনে ব্যাপক উৎপাদনের কাজটি করা যাবে তবে তা ছোটখাটো কোন কাজ নয়।
চার. প্রিয়দর্শিনীর সেই ভিডিও ক্লিপের ব্যাখ্যাগুলো এবার শুনি ভদ্রলোক প্রথমে বলছিলেন এটা সুপার ভ্যাকসিন বলা হচ্ছে এ কারণে যে এটা খুব দ্রুততম সময়ে আমাদের কাছে চলে আসবে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এরপর বললেন এটাকে বলা হচ্ছে সুপার ফাস্ট, তার মানে প্রচলিত ভ্যাকসিন টিকাগুলো আসতে দেড় থেকে দু বছর সময় লাগে? তারমানে ২০২০ সালে একটাও আসার কথা না …..। বাট চার্ডক্স-১ নামের এটি খুব দ্রুতই আসবে। …তিনি বলছিলেন বৃহস্পতিবার যখন তিনি ভিডিও আপলোড করছিলেন তখন হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে।এ নিয়ে অনুসন্ধান করেও সাধারণভাবে সুপার ভ্যাকসিন বা সুপার ফাস্ট জাতীয় কোন টার্মই খুঁজে পাওয়া যায় নি। যা পাওয়া যাচ্ছে তা হলো সুপার ফাস্ট ব্রডব্যান্ড! ভদ্রলোক আবার ব্যাখ্যা দেন এটা সুপার ফাস্ট ভ্যাকসিন এ জন্য যে এটা একবার প্রয়োগ করলে আর দ্বিতীয় বার প্রয়োগ করতে হবে না। তিনি তথ্য দেন মার্চে এটার কাজ শুরু হয়েছে। অথচ যাছাই করে জানা যায়- ভ্যাকসিনটির কাজ শুরু হয়েছিল জানুয়ারিতে। তিনি বলছিলেন ক্লিনিক্যাল একটা ডোজ দিলেই এটার ইফেক্ট জানা যাবে। মে মাসের মধ্যেই জানা যাবে যদি প্রুফ হয় সেপ্টেম্বরে দোকানে পাওয়া যাবে? এই তথ্যটি ভুল ও বিভ্রান্তিকর। কেন তা পরে বলছি। তিন নাম্বার – তারা আগেই ম্যানুফেকচারিং করে রাখছে। অলরেডি ৭টি দেশে এটার কাজ চলছে। আমাদের প্রতিবেশী ইন্ডিয়াতেও নাকি এটার উৎপাদন চলছে! এ তথ্যটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। অথচ আশার ব্যাপারী ভদ্রলোক জোর দিয়ে বলছিলেন প্রতিবেশি দেশে যেহেতু হচ্ছে সেহেতু আমাদের পাওয়া যেন সময়ের ব্যাপার।
চার. এখানে যে বিভ্রান্তি অনলাইন লাইক সিকার বা হিট ব্যবসায়ীদের মনের মাধুরী মিশিয়ে একটা ভিডিও বা রচনা লিখতে অনুপ্রাণিত করেছে ড: সারা গিলবার্টের উপরেল্লেখিত প্রস্তাব। তিনি বলেছেন তিনি তাঁর গবেষণার ব্যাপারে ৮০ ভাগ আশাবাদী এবং তাঁর উদ্বেগ গবেষণা যদি সেপ্টেম্বর নাগাদ সফল হয় তখন প্রচুর পরিমাণে ( মিলিয়ন মিলিয়ন) উৎপাদন করার মত ব্যবস্থা ইউকে‘র সেভাবে নেই। এখানে অন্য সাতটি দেশে এমনকী আমাদের প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া তে উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে তথ্যটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। অক্সফোর্ডের সাথে যৌথ প্রচেষ্টায় সারা গিলবার্টের একটা ছোট কারখানা আছে। সেখানে টেস্টিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় উৎপাদন করার চেস্টা করা হয়। টেস্টিং এর শেষ পর্যায়ে সাধারণত অনেক বেশি মানুষের উপর প্রয়োগ করতে হয়।
আমাদের আশাবাদী য়্যুটুবার যাই বলেন না কেন এই ভ্যাকসিন সফল হলে ইউকের মানুষ কখন পাবে তা নিয়েও উপস্থাপক Andrew Marr নিজে তাঁর Show তে বারবার প্রশ্ন করলেও সারা গিলবার্ট ও সংশ্লিষ্টরা তা নিশ্চিত করতে পারেননি। সারার টীম ৪/৫ বছরের কাজ তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে গত চার মাসে সম্পন্ন করেছেন। সরকার ইম্পেরিয়াল ও অক্সফোর্ডের এ দুটি টীমকে ৪২.৫ মিলিয়ন ফান্ডও দিয়েছে যা গেল সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন।যার মধ্যে অক্সফোর্ডের টীমকে দেয়া হয় ২০ মিলিয়ন ।
পাঁচ. আশার সওদাগরের অলীক আশার আলোক প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনলাইন লাইক সিকিং আর মহামারীর মত প্রাকৃতিক ভয়াবহ দুর্যোগকে আর দশটা কঠিন সমস্যার মত চেতনার তুবড়িতে প্রশাসনের শক্তি ও সহমত ভাইদের সৌল্লাসের মধ্যে দমনের ইচ্ছা যেন এক সূত্রে গাঁথা। একদিকে এটা সর্দি কাশির মত রোগ, আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী টাইপের ডায়ালগের ফাঁপা আওয়াজ অন্যদিকে অবদমিত নাগরিক ও রাজনৈতিক শক্তির অনুপস্থিতিতে মাঠ গরম করা বলুন ঠিক কিনা গোষ্ঠীর – মুসলমানদের করোনা হয় না, মাস্ক লাগে না, মক্কা মদিনায় বন্ধ হবার পরও মসজিদ ছাড়া নামাজ পড়া যাবে না ধরণের ফতোয়া ইতোমধ্যে কি ক্ষতি করেছে তা দৃশ্যমান। বিপুল অর্থনীতির দেশেও যেখানে লকডাউনের প্রতিক্রিয়ায় উপার্জন হারানো মানুষকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যাবে, কিভাবে অধিক সংখ্যক টেস্ট করে আক্রান্তদের চিহ্নিত করা, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের জন্য পিপিই সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কিভাবে নিশ্চিত করা যায়, কিভাবে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসা যাবে এ সব জরুরী বিষয় নিয়ে কর্মপরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞ ও সরকারের লোকজন ব্যস্ত, তখন আমাদের দেশে উদ্ভাবিত এ মুহুর্তে বিশ্বে গুরুত্ব পাবার মত একটি উপাদান টেস্টিং কিট নিয়ে রাজনৈতিক কীটেরা নোংরা খেলা খেলছে। এর পাশাপাশি চলছে আশার ব্যবসায়ীদের পার্টটাইম হয়ে থাকা ব্যবসায়কে সত্য মিথ্যার মিশেলে বিপননযোগ্য করে মানুষকে অলীক আশ্বাসে আশ্বস্ত করা। যার সূত্র ধরে আর কতটা দিন সবুর করলেই সব শেষ হয়ে যাবে আশাবাদের চাষাবাদ করে অবচেতনে মানুষকে ব্যাপক আশাবাদী করে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপকে একভাবে এড়িয়ে যাবার জন্যই যেন উৎসাহিত করা হচ্ছে। যদি ধরেও নিই সেপ্টেম্বরে ভ্যাকসিন সব ট্রায়াল শেষ করে উৎপাদনে যাবার মত প্রস্তুত হবে তাহলে তা আমাদের মত দেশের মানুষের দোরগোড়ায় কবে যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না, এমনকী এটা তারাও বলতে পারছে না যাদের দেশে গবেষণাটি হচ্ছে। বলা হচ্ছে করোনা নিয়ে গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবশ্যই সব গুজবই ক্ষতিকর। গুজব কখনো ভাল কিছু যে আনে না তা কে না জানে। যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন অথচ যথার্থ পিপিই এর অভাবের কারণে তিন থেকে চার শ ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্য কর্মী করোনায় আক্রান্ত তখন খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রী র কথাকেই তো গুজব বলে মনে হয়। করোনার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা র বীভৎস অবস্থা তো চিকিৎসা শেষে আরোগ্য লাভ করেছেন যারা তাদের জবানবন্দিতে পরিষ্কার। যখন দেশে দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ফাইভ স্টার হোটেলে বিনামূল্যে থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা র কথা শোনা যায়- তখন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তারের জন্য ভাত কাঁচা মরিচ আর সামান্য ডিমের আয়োজন! য়্যুটুবার, সহমত ভাই এবং সরকারের কর্তাব্যক্তিরা নানা ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে,অথচ বিশ্বের সেরা বিশেষজ্ঞরা এখনো পর্যন্ত যেখানে একমত- করোনা সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদে মোকাবেলা করতে হতে পারে, সেখানে এমন এক সমস্যাকে কাল পরশু শেষ হয়ে যাবে, এমন ধরণে উপস্থিত করায় সমূহ বিপদের আশংকা থেকেই যাচ্ছে। লেখাটি লেখার সময় বিবিসি‘র এক ফিচার ডকুমেন্টারি দেখছিলাম ‘অতি আত্মবিশ্বাস‘ বিষয়ে। জানা কথাটাই যেন সেখানে দারুণভাবেই উপস্থাপন করা হলো। বলা হচ্ছিল সাধারণ ভাবে আত্নবিশ্বাসী ও আশাবাদী হওয়া ভালো গুণ। কিন্তু ভূয়া বা বাস্তবতাশূন্য বা বিভ্রান্তকর ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাস শেষ পর্যন্ত সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়।অতি আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি কাটানোর চেস্টা সাধারণভাবে কাজ না করায় ভবিষ্যতে ক্ষতির পরিমাণ অতিমাত্রার হয়। জানি না এ যাত্রায় তথ্যের বিভ্রান্তি দিয়ে আশার সওদাগর আর ইতোমধ্যে প্রমাণিত দুর্নীতিগ্রস্থ ও অযোগ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্টরা আমাদের কোথায় নিয়ে যান!
– শাহ আলম ফারুক
সম্পাদক (অবৈতনিক), স্ট্রেইট ডায়ালগ ডটকম
মানবাধিকার কর্মী আইনজীবী
লন্ডন ২৬.০৪.২০২০