এই ভয়াবহ করোনা মহামারির কালে যখন সারা দুনিয়া প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী এবং ডাক্তারদের সুরক্ষা সমগ্রীর অভাবে হাহাকার করছে আর বিনা চিকিৎসায়, বিনা পরীক্ষায়, মারা পড়ছে তখন গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল, সস্তায় কার্যকর একটি টেস্টিং কিট বানানো সম্ভব বলে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে রীতিমত ঝামেলা বাধিয়ে ফেলেছে ।
সমস্যার মুলে হলো ডা.বিজন শীল নামের এক বাংলাদেশী ভদ্রলোকের অতীত কর্মকান্ড । তিনি মানে এই বিজন শীল ইতিপুর্বে সার্স মহামরীর কালেও এমনি একটি কিট আবিস্কার করে নিজের নামে প্যাটেন্ট করে নিয়েছিলেন এবং এখনকার ‘সকল কাজের কাজী’ চীনারা এর স্বত্ব উনার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন এবং সেই কিটটি আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত । তিনি এইবার গণস্বাস্থ্যের এই কিটের মুল আবিস্কর্তা বলে গণস্বাস্থ্য ঘোষনা করেছে ।
গণস্বাস্থ্য’র এই ঘোষনা আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল মহলের আচরণ মানুষকে স্পস্ঠভাবেই এ ধারনা দিয়েছে যে তারা চায় না গণস্বাস্থ্যের এই কিট প্রকল্পটি সফল হোক । তা স্বত্বেও গতকাল তারা সেই কিটের কিছু নমুনা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হাতে তুলে দিতে চেয়েছে, যাতে সরকার তাদের দাবীর সঠিকতা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কিন্তু তারা কেউ আসেননি । উল্টো, গণস্বাস্থ্য কোথায় কি কি নিয়ম মানেননি, তারা তার ফিরিস্থি করে প্রচার করেছেন ।
একটি টিভি মিডিয়ায় ঔষুধ প্রশাসনের দালালদের আক্রমনের বীভৎস চেহারা জনগনের কাছে উলঙ্গ হয়ে পড়ার পর, আজ থেকে কিছু খুব ধীশক্তি সম্পন্ন, মেধাবী, জ্ঞানী সাংবাদিক এবং যুক্তিবাদী ডাক্তার নতুন করে একটা নিরপেক্ষ ভাব নিয়ে নতুনভাবে হাজির হয়েছেন । তাদের বক্তব্য দেখলে মনে হবে, তারাও চায় গণস্বাস্থ্য সফল হোক কিন্তু তারা অতি যৌক্তিক কারণে মন থেকে চাইলেও জ্ঞান থেকে এটা চাইতে পারছেন না ।
তাদের বক্তব্যর পুণরক্তি করে, এখানে আর বক্তব্য না বাড়িয়ে, খুব সাধারন মানুষ হিসেবে ২-১টা বিষয় আপনাদের কাছে জানতে চাইছি :
১) আচ্ছা বলুন তো গণস্বাস্থ্য বা বিজন শীল যে কিটটি তৈরী করেছেন তা পরীক্ষা করা কি খুব বিপজ্জনক কিছু ? মানে এ পরীক্ষার সাথে যারা যুক্ত হবেন তারা কি এন-৯৫ মাস্ক ছাড়া রোগীর সংস্পর্শে অাসার মতো কোন স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়বেন ? ডা. মঈনুদের মতো মারা পড়বেন ?
২) এটা কি অনেক বেশি ব্যায়বহুল ? মানে প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিভাগ যত রোগীর পরীক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে তাদের প্রত্যেককে যদি স্বীকৃত পদ্ধতিতে পরীক্ষার আগে বা পরে – এ কিটটির পরীক্ষার আওতায়ও আনা হয়, তাতে কি রাষ্ট্রের দায়-দেনা অনেক বেড়ে যাবে ?
৩) সাধারন শান্তিপুর্ণ অবস্থা আর বিশ্ব-মহামারী অবস্থা কি অবিকল একই রকম ? মানে সাধারন অবস্থায় একটি আবিস্কার যেমন প্রথমে একটি আর্ন্তজাতিক স্বীকৃত জার্ণালে প্রকাশ করতে হয়, করার আগে জার্নাল কতৃপক্ষ যেমন ওটাকে একাধিক স্বীকৃত রিসার্চারের কাছে ‘পিয়ার রিভিয়্যু’ করার জন্য পাঠায়, জার্ণালে প্রকাশের পর যেমন যাবতীয় নিয়ম মেনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতির জন্য দরখাস্ত করে যুগের পর যুগ তাদের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়, এ সময়েও তাই করতে হবে ? সেটা করলে পরেই এটা বৈধ হবে, না হয় হবে না ?
আপনাদের যাদের ৭১ এর আগে বোধ-বুদ্ধির জন্ম হয়নি তাদের পক্ষে বোঝা কঠিন, তাও বলি ; ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়, পাকিস্তানী হানাদারদের ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ-গণহত্যার পক্ষে পকিস্তান রেডিওতে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এমন অনেক যুক্তি সংগত নসিহত প্রচার হতো । তারা আপনাদের মতোই অনেক সুন্দর করে প্রমাণ দিয়ে বলতেন, মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা দু;স্কুতিকারী বলেই তারা ভারতের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে পাকিস্তানের অখন্ডতা নষ্ট করার জন্য কাজ করছে । তারা এও বলতেন, এরা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফেরত আসুক এসে অালোচনায় বসুক, পাকিস্তান সরকার তাদের ন্যায্য দাবী-দাওয়া মেনে নিতে প্রস্তুত আছে ।
বিশ্বাস করেন, আজ ৫০ বছর পরে, আরেকটি পরিকল্পিত গণহত্যার প্রস্তুতিকালে, এই বাংলায় আমি আপনাদের কন্ঠে সেই শান্তি আর যুক্তির বাণীটা শুনতে পাচ্ছি ।
– হাসনাত কাইয়ুম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট