করোনা মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম থেকেই জোর দিয়ে আসছে পরীক্ষার ওপরে। কিন্তু বাংলাদেশে হচ্ছে টিক তার উল্টোটাই! এ পর্যন্ত খোদ গণমাধ্যম কর্মীরাই নিজেদের নমুনা পরীক্ষা করতে আইইডিসিআর এর কাছে ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকার গণমাধ্যমে কর্মরত একাধিক সাংবাদিক। যাদের অধিকাংশই আবার সরকার দলীয় বলে পরিচিতি। গত কয়েকদিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে চট্রগ্রামেও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে খুবই অল্প। এমনকি ৭ দিন আগে সংগ্রহ করা নমুনাও আজ পর্যন্ত পরিক্ষা করা হয় নি আইইডিসিআর নির্ধারিত পরীক্ষাগারে। পরীক্ষা হলেও তার ফলাফল নিয়েও আইইডিসিআর গড়িমসি করছে বলে জানিয়েছেন অনেক করোনা সাসপেক্ট।
সময়ের আলো পত্রিকার নগর সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবির খোকন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। সদ্য প্রয়াত এই সাংবাদিকের অফিসের আরও এক সহকর্মী জ্বর, মাথাব্যাথা ও কাশিতে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন ঐ গণমাধ্যমের কয়েকজন।
এই নিয়ে সেই অফিসের একজনের ফেসবুক স্ট্যাটাস এখানে তুলে ধরা হলো :
আক্রান্ত তিনি বাসায় অবস্থান করছেন। গতকাল আমরা তার খোঁজখবর নেয়ার জন্য ভিডিও কলে যুক্ত হলাম। সকলে কথা বলছি, কথা বলার এক ফাঁকে তার কাছ থেকে কোন জবাব আসছিল না। দ্রুত আমাদের সহকর্মী স্বপ্না দিদি-৯৯৯-এ ফোন করলেন। তারা পুলিশকে রেফার্ড করল। পুলিশ ফোন ধরে বাসার ঠিকানা নিল। স্বপ্না দিদি তাকে দ্রুত হাসপাতাল বা আইডিসিআরে নেয়ার অনুরোধ করলেন। কিছুক্ষণ হলেও পুলিশের কোন সাড়া পাওয়া গেল না। বাধ্য হয়ে স্বপ্না দিদি আবার বনানী থানার ওসিকে ফোন দিলেন। এবার ওসি সব শুনে বললেন, আমাদের টিম তো গিয়েছিল। তারা ফেরত আসছে ওই বাসার গেট নাকি তারা খোলা পায়নি। (রাত তখন ১২ টা পার হয়েছে) তাহলে আবার পাঠান অনুরোধ করা হলে ওসি সাফ জানিয়ে দিলেন, তার টিম আবার যেতে পারবে না। এরই ফাঁকে আমার জ্বরে আক্রান্ত সহকর্মীর বন্ধুকে ফোন দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে তার বাসার নিচে যেতে বলেছি। সে গিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। অথচ পুলিশ বলছে তারা নাকি বাসার গেটে গিয়েছিল! এখন বলুন কেমন লাগে ? সাহায্য করবেন না, কিন্তু মিথ্যাচার কেন ভাই?
আরেক সহকর্মীও অসুস্থ। তার টেস্ট করানোর জন্য তিনি আইইডিসিআরের একজনের কাছে ফোন করেছেন। উনি তাকে সাফ জানিয়েছেন ওই এলাকায় ১০-১২ জন হলে তারা টেস্ট করাতে যাবেন। না হলে যাবেন কিনা তাও স্পষ্ট করে বলেনি। অপরদিকে জ্বরে আক্রান্ত সহকর্মী ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত সহকর্মীর স্ত্রীর টেস্টের ফলাফল আজও হাতে তারা পায়নি। কতদিনে পাবেন তাও জানে না। কিছুক্ষণ আগে জ্বরে আক্রান্ত সহকর্মী আইইডিসিরে ফোন করলে তারা বলেছে, ফলাফল পেতে সময় লাগবে, কবে দেবেন তাও বলছে না।
আমার প্রাণপ্রিয় বড় ভাই হুমায়ুন কবির খোকন ভাই যখন অসুস্থ ছিলেন তারও পরীক্ষা করানোর জন্য ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু আইইডিসিআর থেকে বলা হয়েছিল, তারা আসবে কিন্তু আসেনি।
কয়েকদিন আগে দক্ষিণ সিটির প্রধান বর্জ্য উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম তিনদিন ঘুরে আইইডিসিআরে পরীক্ষা করাতে ব্যর্থ হন। পরে তিনি করোনা নিয়ে মারাই গেলেন।
এরকম হাজারও গল্প সমাজের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে। কেউ বলছে হয়ত কেউ বলছে না। আর বলবেটা কার কাছে? সেই সিন্দাবাদ বা আনিসুল হক কি এই শহরে আছে?
একজন সাংবাদিক ফোন করেও যদি সাহায্য না পান, তাহলে বুঝুন আমজনতার কি অবস্থা? এই হলো বর্তমানে করোনায় সাহায্য পাওয়ার চিত্র। সাহায্য চাইলে সাহায্য মিলছে না। আমরা কার দোষ দিব? স্বাস্থ্য বিভাগের নাকি পুলিশের? পুলিশের কাজ তো আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা। কেউ অসুস্থ হলে কাউকে উদ্ধার হাসপাতলে নেয়া নয়। তারপরও তারা সেই কাজটি করছে। তাদের ভুমিকা প্রসংশনীয়। যদিও বনানী থানা পুলিশ সে কাজ গতকাল করেনি।
অন্যদিকে শুরু থেকে বলা হচ্ছে আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী, আমাদের প্রস্তুতি আছে, আমরা করোনা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। আচ্ছা কোথায় আপনাদের মেডিকেল টিম, কোথায় করোনার কিট? সব যদি মজুদ আর প্রস্তুত থাকে তাহলে মানুষ ফোন করেও সাহায্য পাচ্ছে না কেন? কেন মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েও পরীক্ষা করাতে পারছে না ?
প্রসঙ্গত, মহামারি করোনাভাইরাস দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬৮ জনের। করোনায় আক্রান্ত হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৫৬৪ জন। ফলে দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল সাত হাজার ৬৬৭ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ১০ জন। সবমিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৬০ জন।
বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
ঢাকা ৩০ এপ্রিল ২০২০