স্ট্রেইট ডায়ালগ ডেস্ক:
রাষ্ট্রচিন্তার ঢাকার সমন্বয়ক দিদারুল ভুইয়াকে আদালত থেকে কেন্দ্রীয় জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। তার অপরাধগুলো হলো
জাননে কি? তাহলে জানুন :
একটা উন্নত দেশের নিরাপদ নিশ্চিন্ত জীবনের হাতছানি পায়ে ঠেলে দেশের টানে দেশের মানুষের টানে চলে এসেছেন।
ঢাকার স্ট্যান্ডার্ডে একটা মোটাদাগে স্বচ্ছল জীবনযাপন করার পরেও, উনি এস্কেপিস্ট হতে পারেন নাই। উনি ‘নিরাপদ-নির্বিঘ্ন’ জীবন বেছে নেন নাই।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নানা পদ্ধতিগত-কাঠামোগত সংকট নিয়ে উনি ক্রমাগত সোচ্চার থেকেছেন বরাবরই। অনলাইনে এবং রাস্তার বিভিন্ন কর্মসূচিতে।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই যখন নানা রকম ভলান্টারি কার্যক্রম শুরু হয় বিভিন্ন দিক থেকে, যারা এইরকম একটা পরিস্থিতিতে চুপচাপ বসে না থেকে, ঝুঁকি নিয়ে ভলান্টারি কার্যক্রমে নেমেছিলেন,
রাষ্ট্রচিন্তার পক্ষ থেকে দিদারুল ভূঁইয়া এইসব ভলান্টিয়ারদের অনেককেই অনলাইনে ট্রেনিং দিয়েছেন। কীভাবে নিজে নিরাপদ থেকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো যায়, সেগুলো উল্লেখ করার চেষ্টা করেছেন দিনের পর দিন। নিরলসভাবে।
মাত্র দশ-বারো দিনের লক ডাউনেই যখন উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অসংখ্য মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করে রাস্তায় নেমেছে, যখন আমরা বলতে শুনেছি ‘খিদায় মইরা যাইতাসি, করোনা দিয়া কী করমু?’
তখন রাষ্ট্রচিন্তা নিরুপায় হয়ে সাধ্যমত ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে, দিদার ভাই সেই ত্রাণ কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। দিনের পর দিন নিরন্নের মুখে অন্ন তুলে দিতে ঢাকার অলিতে গলিতে দিদার ভাই রাষ্ট্রচিন্তার লোকজন নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
করোনাকালের রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংকট, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে সমাজের বুদ্ধিজীবী-শিক্ষক-লেখক-গবেষকদের নিয়ে অনলাইন কনফারেন্সের সমস্ত টেকনিক্যাল দিক দেখভালো করেছেন।
ত্রাণ বিতরণে রাষ্ট্রীয় অসঙ্গতি, চুরি-বাটপারি, লুটপাট নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেছেন।
এরকম একটা ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সংকটের কালে একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে যতভাবে সক্রিয় থাকা যায়, দিদার ততভাবে সক্রিয় ছিলেন তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের করোনা মোকাবেলায় ‘সমন্বিত উদ্যোগ’ এর অংশ হিশেবে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিনা ওয়ারেন্টে ইউনিফর্মহীন কতিপয় লোক র্যাব পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে গেছে। সঙ্গে জব্দ করেছে তার ল্যাপটপ, সিপিইউ, সেল ফোন।
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন ও রাষ্ট্রচিন্তার ঢাকার সমন্বয়ক দিদারুল ভুইয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আর তাদের সাত দিনের রিমান্ড বিষয় শুনানি সাধারণ ছুটির পর পুর্ণাঙ্গ মামলার সিডিসহ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৭ মে) তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই থানার উপপরিদর্শক জামশেদুল ইসলাম। অপরদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া তাদের সাতদিনের রিমান্ড শুনানি সাধারণ ছুটির পর পুর্ণাঙ্গ মামলার সিডিসহ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান।
আদালতের রমনা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক নিজাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে তাদের দুইজনকে আটক করে র্যাব-৩। বুধবার সন্ধ্যায় রমনা থানায় তাদের হস্তান্তর করে। সরকারবিরোধী পোস্ট দেয়ার অভিযোগে রমনা থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
এদিকে মঙ্গলবার কার্টুনিস্ট কিশোরকে কাকরাইল ও লেখক মুশতাককে লালমাটিয়ার বাসা থেকে আটক করে র্যাবের একটি দল। এরপর তাদের রমনা থানায় হস্তান্তর করা হয়। ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় তাদের বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার উপপরিদর্শক জামশেদুল ইসলাম তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অপরদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা বেগম তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার (৫ মে) র্যাব-৩ সিপিসি-১ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক বাদী ১১ জনের নামে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর, ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ, ‘রাষ্ট্রচিন্তা’র সংগঠক দিদারুল ইসলাম, মিনহাজ মান্নান ইমন, প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ সমাচার, স্বপন ওয়াহিদ, শাহেদ আলম ও ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আসামিরা ‘আই এম বাংলাদেশি’ নামে ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছে। যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। ওই পেজের অ্যাডমিন শায়ের জুলকারনাইন এবং আমি কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ সমাচার, স্বপন ওয়াহিদ, মোস্তাক আহম্মেদ নামীয় ফেসবুক আইডিসহ পাঁচজন এডিটর পরস্পর যোগসাজসে ফেসবুক পেজটি দীর্ঘদিন পরিচালনা করছে।
আহমেদ কবীর কিশোর, তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের মধ্যে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং’ এর প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তাদের ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল ফোনে ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। আলামত পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনাভাইরাস, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।’