ডেস্ক রিপোর্ট: অন্য অনেক দেশ শুরুতে করলেও অবশেষে একই পথে হাটার চিন্তা করছে বাংলাদেশ।করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় নতুন পরিকল্পনার এর অংশ হিসেবে সরকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি ১১০টি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সুবিধাসম্পন্ন বড় বড় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত করার চিন্তা করছে।ুউল্লেখ্য ব্রিটেনে মার্চ মাসে বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়। অআয়ারল্যান্ডে করোনাকালীন সময়ের জন্য করা হয় জাতীয়করণ।
নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশি চিকিৎসকদের যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছেন, তারা নতুন একটি পদ্ধতির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে তাদের মতামত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে পাঠিয়েছেন। সেটি হলো- প্রত্যেকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে তিনটি জোনে ভাগ করা। কোভিড, নন-কোভিড ও প্রাথমিক জোন। করোনা সন্দেহভাজন রোগীরা প্রাথমিক জোনে অবস্থান করবেন। নমুনা পরীক্ষার পর পজিটিভ হলে কভিড জোনে তাকে ভর্তি করা হবে। আর করোনা নেগেটিভ হলে নন-কভিড জোনে ভর্তি করা হবে।
তিনি বলেন, এই পদ্ধতিটি নিয়ে আমরা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা ইতিবাচক মত দিয়েছেন। তবে এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এই পদ্ধতি চালুর পর সংক্রমণ ঝুঁকি আরও বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি হাসপাতালেই পৃথক জোন করা হবে। সুতরাং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে না। বিষয়টি নিয়ে শনিবার একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অন্যান্য কার্যক্রমের কারণে সেটি হয়নি। আজ রোববার অথবা আগামীকাল এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। সবার মতামতের আলোকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৫৪টি হাসপাতালে ৫১ হাজার ৩১৬টি শয্যা রয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ৫৫ হাসপাতাল ও ক্লিনিক মিলিয়ে রয়েছে ৯০ হাজার ৫৮৭টি শয্যা। সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট ১ হাজার ১৬৯টি আইসিইউ শয্যা আছে। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা চিকিৎসার জন্য ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ১ হাজার ৯৬টি কভিড ডেডিকেটেড শয্যা এবং ৪৭টি আইসিইউ প্রস্তুত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের সাত জেলায় ১ হাজার ৯৮টি সাধারণ শয্যা এবং ৩৪টি আইসিইউ শয্যা, ময়মনসিংহের চার জেলায় ৩৮০টি সাধারণ এবং সাতটি আইসিইউ শয্যা, বরিশালের ছয় জেলায় ৪১৩টি সাধারণ এবং ১৮টি আইসিইউ শয্যা, সিলেটের চার জেলায় ৩৪৮টি সাধারণ এবং ১৬টি আইসিইউ শয্যা, রাজশাহীর আট জেলায় ৯২৪টি সাধারণ এবং ২৮টি আইসিইউ শয্যা, খুলনার আট জেলায় ৭১৩টি সাধারণ এবং ১৮টি আইসিইউ শয্যা, রংপুরের আট জেলায় ৭২২টি সাধারণ এবং ১৩টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় ২ হাজার ৯০০ সাধারণ, ১৪৮টি আইসিইউ এবং ১০২টি ডায়ালাইসিস শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আট বিভাগে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৮ হাজার ৫৯৪টি সাধারণ, ৩২৯টি আইসিইউ এবং ১০২টি ডায়ালাইলিস শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলে মোট শয্যা আছে এক লাখ ৪১ হাজার ৯০৩টি। অর্থাৎ আরও এক লাখ ৩৩ হাজার ৩০৯টি শয্যা ফাঁকা পড়ে আছে। এর বাইরে করোনা আক্রান্তদের জন্য আট বিভাগে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬১৫টি প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে মোট ৩০ হাজার ৯৯৫ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা যাবে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে ৪ হাজার ৩৩৯ জন কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক এই পরিকলপনার ব্যাপারে বলেন, সরকার যে পরিকল্পনা করছে, তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। সেই ঝুঁকি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার নেই। এই প্রক্রিয়ায় রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরাও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে চলে যাবেন বলে তিনি মনে করেন।