ছোট ভাই দিদার মানে মোহাম্মদ দিদারুল আলম। আমেরিকার নিউইয়র্কের বাসিন্দা। দিদারের একটি ফেসবুক পোস্টে আমার চোখ পড়তেই মানসপটে তোলপাড় শুরু হলো। আর থাকতে পারছিনা, একটু মনের ঝাল মিটাই!
ওরে দিদার! সত্য কথা এভাবে বলতে হয় না! বাংলাদেশের বয়স ৫০ বছর হতে চললো, অথচ এখনো পর্যন্ত ডায়াগনস্টিক টেস্ট তৈরীর মানসম্মত একটিও কোম্পানি সৃষ্টি হয়নি!
শুধু কি তাই! সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ডায়াগনোস্টিক সেক্টরের প্রকৃত দাবিদার অর্থাৎ বিশেষত মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং বায়োকেমিস্টদের সম্মানজনক অবস্থান ও বেতন না থাকার কারণে দেশের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিশাল ঘাটতি রয়েছে। এদেশের গরীব রোগীরাও এখন জমি-জিরাত বিক্রি করে ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়।
চিকিৎসক নেতাদের উপার্জনের বড় সেক্টরে হাত বসিয়ে নিজেদের অধিকারের বিষয় নিয়ে কথা বলা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। কথা বললেই তুমি নিষিদ্ধ হবে অথবা গর্দান যাবে। পরোক্ষভাবে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণের টেস্ট তৈরির মাধ্যমে নিজেদের অর্থাৎ মেডিক্যাল সেক্টরে বঞ্চিত পেশাজীবীদের মুন্সিয়ানা একটু জানান দিতে চেয়েছিলাম। প্রকৃত সত্যটা হলো- যেহেতু মেধার দিক দিয়ে আমরা পিছনের সারির মানুষ, সত্যিকারের মেধাবীদের কাজের ক্ষেত্র দিলে আরো অনেক কিছু করে দেখাতে পারবে। আমরা আশা করেছিলাম নিজেদের কমিউনিটির সবার উদাত্ত সমর্থন, অথচ বাস্তবে পেয়েছি চরম বিরোধিতা ও নিবর্তন।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্তকরণের জন্য ছোট্ট একটা তৈরিকৃত টেস্ট নিয়ে কিছু চিহ্নিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও বিতর্কিত চিকিৎসকদের সাথে সুর মিলিয়ে দেশের এমনকি বিদেশ বিভুঁই থেকে আমার কিছু বন্ধুও সমালোচনা করতে পিছপা হলো না। সবাইকে প্রথম ধাক্কায় বোঝাতে ব্যর্থ হলাম যে, আমরা প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত পথেই আমাদের নতুন করোনা সনাক্তকরণ টেস্ট তৈরি করেছি। কে শোনে কার কথা! এখনতো ষড়যন্ত্রকারীরা জায়গা পেয়ে গেছে। আইসিডিডিআরবিতে ডাটা ম্যানিপুলেশনের দায়ে চাকরিচ্যুত একজন ডাক্তার যাকে অফিসে সব সময় গবেষণা নয় ক্রিকেট খেলা নিয়ে আলোচনায় বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে এবং যার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে অন্তত প্রস্থান কলঙ্কমুক্ত করতে আমাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে, তিনি টেলিভিশনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে এসে আমাদের উদ্ভাবিত টেস্টের অযাচিত সমালোচনা করলেন। সারা বিশ্ব যখন সহজ ও সুলভ সেরোলজিক্যাল টেস্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আমরা তখন নিয়মের বেড়াজালের অজুহাতে নিজেদের উদ্ভাবিত টেস্টকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হিমাগারে নিক্ষেপ করেছি। উপায়ান্তর না দেখে আমাদের পরিচিত সমালোচকরা এখন মুখে কুলুপ এঁটেছে।
সত্যি বলছি- আমার মনে হচ্ছে, “বন্ধুরা হারেনি, আমি যেন হেরে গেছি। জিতে গেল যতসব অপশক্তি আর বিদেশীরা, যারা আমাদের অনেক পরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের রোগ প্রতিরোধী বিজ্ঞান উদ্ধার করেছে। এখনও বিশ্বাস করি- দেশ ও বিশ্বের সকল পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য তৈরি আমাদের ছোট্ট একটি অভিনব পদ্ধতি নিশ্চিত আলোর মুখ দেখবে”।
সবাই ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক, সেটাই আমার কামনা।
ডঃ ফিরোজ আহমেদ:
এসোসিয়েট প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান,
মাইক্রোবায়োলজী বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
গণস্বাস্থ্য কর্তৃক উদ্ভাবিত করোনার টেস্ট কীটের উদ্ভাবক টীমের একজন সদস্য।
(লেখাটি ফেইসবুক থেকে নেয়া, প্রকাশকাল- ১৪ মে ২০২০)