ডেস্ক রিপোর্ট: অদ্ভূত এক দেশ। বাংলাদেশ। যা রক্ষা করে তাকেই ধ্বংসের খেলা চলে। তারপরও প্রকৃতি বার বার বাঁচিয়ে দেয়। সর্বশেষ ঘুর্ণিঝড় আমফানেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এর আগেও সিডর-বুলবুলের আঘাত আসে সুন্দরবনে। এই সুন্দরবনই বাঁচিয়ে দেয় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ।
বুধবার বিকেল থেকে এটি স্থলভাগে উঠে আসতে শুরু করে। তবে ঝড়ের মূল কেন্দ্র (চোখ) সুন্দরবনে ছোবল মারে সন্ধ্যার দিকে। মূল কেন্দ্র সুন্দরবনে আঘাত করার পরও যা ক্ষয়ক্ষতি সুন্দরবন না থাকলে পরিস্থিতি কি হোত তা কল্পনাও করা যায় না। এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান ও পশ্চিম পরগণা দুটি জেলা লন্ডভন্ড এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
বুধবার বিকেলে আঘাত হানার সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। প্রবল বেগের এই ঝড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড করে দেয়। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি, ভেঙে পড়ে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। উপকূলের ১৯ জেলায় অন্তত ৫১ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। গাছ ও দেয়ালচাপায় এবং নৌকাডুবিতে বিভিন্ন স্থানে ১০ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আমফান সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে সাতক্ষীরায়। উপকূলীয় এ জেলায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ১৪৮ কিলোমিটার। সেখানকার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, এক ঘণ্টার বেশি সময় তীব্রগতিতে তাণ্ডব চলেছে সাতক্ষীরায়। পরে গতিবেগ কমে ১০০ কিলোমিটারে নেমে আসে।
আম্পানের মূল কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ হয়ে অতিক্রম করতে শুরু করে। এ সময় সাতক্ষীরা, খুলনাসহ পশ্চিম উপকূলে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে জোয়ার শুরু হলে ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়। এতে প্লাবিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রবল ঝড়ে গাছচাপায় সাতক্ষীরা শহরে গৃহবধূ, যশোরে ঘুমন্ত অবস্থায় মা-মেয়ে, পটুয়াখালীতে শিশুসহ দু’জন, কলাপাড়ায় নৌকাডুবিতে একজন, পিরোজপুরে দেয়ালচাপায় একজন, ভোলার চরফ্যাসনে গাছচাপায় একজন, বরগুনায় একজন এবং লক্ষ্মীপুরে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এবারও সুন্দরবন ঢাল হয়ে দাঁড়ানোয় উপকূলীয় জনপদে জীবন ও সম্পদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়েছে, বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অনেক বাঁধ। গাছপালা উপড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই উপকূলীয় এলাকার ৫১ লাখের মতো গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আমফানের প্রভাবে তাদের উপকূলীয় ২২টি সমিতিতে আংশিক বা পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে। এতে পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও বরিশালের কিছু অংশসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) লাখখানেক গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন।
বুধবার দুপুরের মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয় বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়া হয়। ফলে মোট আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭৮টি।
এদিকে বিবিসি সর্বশেষ বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বরাত দিয়ে জানায় আমফান ঘন্টা তিনেক আগে রাজশাহীতে অবস্থান করছিল। সেখানে ক্ষমতা হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে সুপার সাইক্লোনটি।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আবহাওয়া অফিস জানায়, আমফান এখন স্থল নিম্নচাপের রূপ নিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থান করছে। দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ছবি: বরগুনায় ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে দুই শতাধিক বাড়িঘর