গণস্বাস্থ্যের ডঃ বিজন শীল এবং তাঁর দলের উদ্ভাবিত র্যাপিড টেস্টিং কিট নিয়ে যা হলো তা নিয়ে কিছু লিখতেও লজ্জ্বা লাগে। কত নীচে আমরা নামলে এই পর্যায়ে যেতে পারে সব কিছু। এই পরীক্ষার কার্যকারিতে নিয়ে বিজন শীল কিছু কথা গত একুশে মে প্রকাশিত একটা ইন্টারভিউতে বলেছিলেন। এর কিছু অংশ এখানে শেয়ার করছি। পুরোটা কমেন্টে পাবেন।
“আমরা অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টিজেন দুটি পরীক্ষার কিট উদ্ভাবন করেছি। এই দুটি পরীক্ষা যদি সম্পন্ন করা যায়, তবে প্রায় সব রেজাল্ট সঠিক পাওয়া যায়। শতভাগ হয়ত বলা যায় না। সামান্য এদিক সেদিক হতে পারে। যদিও আমরা প্রায় শতভাগ সাফল্য পেয়েছি। যে কথা ডা. জাফরুল্লাহ স্যার বারবার বলেছেন। ডায়াগনস্টিকের দুটি উইন্ডো থাকে। একটি ভাইরাল উইন্ডো, অন্যটি হোস্ট উইন্ডো। হোস্ট মানে মানব শরীর। কোনো ব্যক্তি যখন ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হন, তখন তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী যে অঙ্গগুলো থাকে তারা একটি বায়োমার্কার তৈরি করে। এই বায়োমার্কার শরীর থেকে ভাইরাস দূর করে। আমাদের কিট দিয়ে অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টিজেন অর্থাৎ দুটি উইন্ডোই পরীক্ষা করা যাবে। আমরা যদি শুধু অ্যান্টিবডি বা শুধু অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতাম তাহলে সব ভাইরাস শনাক্ত করতে পারতাম না। যেহেতু আমরা দুটি পরীক্ষাই করতে পারছি, সেহেতু আমাদের সাফল্যের হার অনেক বেশি।
একটি উদাহরণ দিয়ে বললে হয়ত বুঝতে সুবিধা হবে। গত রোববার একটি ডাক্তার পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বাবা-মা-ছেলে তিনজনই ডাক্তার। ছেলে গত ১০ মে হাসপাতাল থেকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ১২ মে পিসিআর পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে। তার বাবা-মাও পজিটিভ। তাদের নমুনা আমাদের কিট দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলাম ছেলের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। বাবার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে সামান্য, যা শনাক্ত করা যায় না বললেই চলে। কিন্তু তার অ্যান্টিজেন তৈরি হয়েছে। মায়ের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি, অ্যান্টিজেন তৈরি হয়েছে। এই তিনজনের ক্ষেত্রে আমরা যদি শুধু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতাম, তবে শনাক্ত হতো একজন। যদি শুধু অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হতো, তাহলে শনাক্ত হতেন দুইজন। যেহেতু আমরা অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন দুটিই পরীক্ষা করতে পেরেছি বলে তিনজনকেই শনাক্ত করতে পেরেছি। এটাই হচ্ছে আমাদের উদ্ভাবিত গণস্বাস্থ্যের কিটের বিশেষত্ব। সে কারণেই শতভাগ সাফল্যের প্রসঙ্গ আসছে।
আমরা করোনাভাইরাস শনাক্তের পূর্ণাঙ্গ একটি কিট মানে মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে শনাক্তের একটি পদ্ধতি দেশকে, বিশ্ববাসীকে দিতে যাচ্ছি। এটা হচ্ছে আমাদের আনন্দ।
কিন্তু দেশের মানুষ বা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছাতে কি একটু দেরি হয়ে যাচ্ছে?
করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট উদ্ভাবনের ঘোষণা আমরা প্রথম দিয়েছি। আমেরিকা, ইউরোপ আমাদের অনুসরণ করেছে। সেনেগালসহ আরও অনেক দেশ আমাদের পরে শুরু করে কিট তৈরি করে ফেলেছে। তবে সেনেগালেরটা শুধু অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিজেন না। আমাদের মতো অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টিজেন শুধু আমেরিকার একটি কোম্পানি তৈরি করেছে। গত সপ্তাহে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা সবার আগে উদ্ভাবন করলেও, বাজারে আনতে পারিনি। অন্যরা বাজারে নিয়ে এসেছে। ”
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম বিজন শীল যা বলছে তা সর্বৈব মিথ্যা। কিন্তু সেটা প্রমাণ করে দেন। গণস্বাস্থ্য আর ডঃ জাফরুল্লাহর এর চেয়ে বড় পাবলিক শেইমিং আর কিসে হতে পারে?
যাই হোক শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিএসএমএমইউ ৩০০ কিটের উপর ট্রায়াল করেছে এবং প্রতিবেদন ওষুধ প্রশাসনের কাছে দিয়ে দিয়েছে অথবা দিতে যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে ফলাফল খুবই আশাপ্রদ এসেছে। কিন্তু অফিসিয়ালি এই নিয়ে কোন ঘোষণা আমি এখনও জানি না।
আরেকটা খবর (এক দিন আগের) মাত্র নজরে আসলো। পুরোটা কমেন্টে আছে। সেখান থেকে কিছু অংশঃ
” গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত করোনা শনাক্তকরণ কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আরও ৬০০ কিট জমা দিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট উদ্ভাবন দলের প্রধান ড. বিজন কুমার শীল, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার ও গবেষক দলের সদস্য ড. নিহাদ আদনান আজ সকালে (২৭শে মে) বিএসএমএমইউ এর মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টে গিয়ে কিট প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে বিএসএমএমইউ বা আইসিডিডিআর,বিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়।
এরপর গত ২ মে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ১৩ মে হাসপাতালের চাহিদা অনুযায়ী প্রথম দফায় ২০০ কিট ও পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি জমা দেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। পরে আরেক দফায় দেওয়া হয় আরও ২০০ কিট। বিএসএমএমইউ’র একটি সূত্র থেকে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত তারা ৩০০ কিট পরীক্ষা করেছিল। ”
৩০০ কিটের ফলাফল কি যথেষ্ট ছিল না? আর সেটা প্রকাশ করলে সমস্যা কি ছিল?
দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় সংকটে এই প্রহসন আর কতদিন চলবে?
– রুশাদ ফরিদি
সহকারী অধ্যাপক
অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়