সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: বিশ্বজুড়ে করোনা বিপর্যয় এবং বাংলাদেশে উন্নয়ন ধরন ও জনবিপদপর্যালোচনার লক্ষ্যে গতকাল ৩০ মে তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ওবিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার সাথে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য কমিটির আহবায়ক ড. কিউ.এম রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ, কেন্দ্রীয় সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, জহিরুলইসলাম এবং ইউরোপীয় কমিটির সমন্বয়ক মোস্তফা ফারুক, যুক্তরাজ্য শাখার সদস্য সচিব ড. আখতার সোবহান মাসরুর, সদস্য রফিকুলইসলাম জিন্নাহ, নিসার আহমদ, ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ।
সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘করোনা বিপর্যয়ের পরবিশ্বজুড়ে উন্নয়ন সম্পর্কে নয়া উপলব্ধি হচ্ছে যে, উন্নয়ন ও ভোগেরবর্তমান ধারা বিশ্বের মানুষের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনছে।প্রাণবিনাশী মারণাস্ত্র আর জীবাশ্ন জ্বালানী নির্ভর উন্নয়ন ধারাপরিবর্তন করে পরিবেশবান্ধব কৃষি ও শিল্পের বিকাশ করতে হবে, প্রাণপ্রকৃতি ও মানুষের জন্য অনুকূল জ্বালানী ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়েতুলতে হবে, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকারদিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমফান, বুলবুল চোখে আঙুলদিয়ে দেখিয়েছে সুন্দরবন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ওসম্পদ রক্ষার জন্য অপরিহার্য। অথচ সরকার রামপাল সহ উপকজুড়ে প্রাণবিনাশী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং দেশবিনাশী রূপপুরপারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিনিআরও বলেন, ‘ বাংলাদেশে ধনীসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিশ্বে সর্বোচ্চ, আরএই দেশেরই কয়েক কোটি মানুষ অনাহারে বিনা চিকিৎসায় বিপর্যস্ত।পাশাপাশি দেশের রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের সবচাইতে দুষিত নগরী, নদী বন বিনাশে কোটি কোটি মানুষ স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের শিকার।এই সবগুলোই পরস্পর সম্পর্কিত। যে সরকারের নাকের ডগায়রাজধানী বিষাক্ত, নদী নর্দমায় পরিণত হচ্ছে সেই সরকার জেনে বুঝেসুন্দরবনের ওপর বিষ ঢেলে দিয়ে বলছে তার কোনো ক্ষতি হবে না।’তিনি বলেন, ‘জাতীয় কমিটি কয়লা ও পারমাণবিক কেন্দ্র বাতিল করেউন্নয়নের নতুন গতিমুখের জন্য যে আন্দোলন করছে তা এখন সারাবিশ্বেরই গন্তব্য।’
সভায় বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘সরকার একদিকে গ্যাসসংকটের কথা বলে কয়লা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠা করে দেশকেভয়াবহ বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে গ্যাস সম্পদের শতভাগদেশে ব্যবহারের জন্য জাতীয় সক্ষমতা ব্যবহার না করে গ্যাস রপ্তানিরজন্য পিএসসি মডেল তৈরি করছে।’ সাইফুল হক বলেন, ‘সরকার কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে দেশকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’ জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জবাবদিহিহীন সরকার বলেই এভাবে জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতাচালাতে পারছে।’
জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন লংমার্চ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’ মোস্তফা ফারুক বলেন, ‘সারা বিশ্বে এখন উন্নয়নের নতুনধারা তৈরির যে আন্দোলন শুরু হয়েছে বাংলাদেশকে সেই ধারায় আরও জোরদার ভাবে অগ্রসর হতে হবে।’ ড. মাসরুর বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনাশী দেশি বিদেশি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে আন্দোলন করতে হবে।’ ড. রহমান বলেন, ‘ফুলবাড়ী নিয়ে যে নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে তা মোকাবিলায় লন্ডনে ব্রিটিশ জালিয়াত কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন আরও জোরদার হচ্ছে।’
সভায় আরও বলা হয়, দেশ যখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের মুখেতখন সরকার উপকূল জুড়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেবাংলাদেশকে আরো বিপদগ্রস্ত করছে। ফুলবাড়ী নিয়ে চক্রান্ত চলছে।করোনাকালেও সরকারের মধ্যে নতুন কোনো উপলব্ধি নেই। চীন, ভারত ও জাপানের বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগে এসব কয়লা প্রকল্পকরা হলেও এই সবগুলো দেশই নিজ নিজ দেশে কয়লাভিত্তিকবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসছে। রূপপুরে পারমারবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রস্থাপন করে বাংলাদেশকে আরো বিপদে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এসবেরবিরুদ্ধে দেশ ও বিদেশে আন্দোলন জোরদার করা দরকার। এজন্যবাংলাদেশের মানুষের পাশে প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও যুক্ত করতে হবে।
রামপালসহ সুন্দরবন বিনাশী ও দেশবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিল, ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, গ্যাস রপ্তানির অপতৎপরতা বন্ধএবং জাতীয় কমিটির প্রস্তাবিত খসড়া মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে সুলভপরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্নকর্মসূচি গ্রহণ বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। এই লক্ষ্যে ইউরোপ ওউত্তর আমেরিকার প্রতিনিধিদের নিয়ে জুন মাসে একটি বৃহত্তর সভাঅনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।