নিউইয়র্কে বসবাসকারী একজন বাংলাদেশী ডাক্তার সেখানে করোনার দুঃসময়ে ডাক্তার হিসেবে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পর মাতৃভূমির করোনা রোগীদের সেবার মানসে বাংলাদেশে আসতেই ঢাকা বিমানবন্দরের পুলিশ তাকে কোয়ারন্টিনে নিয়ে যায়। যদিও তিনি ডাক্তার; তিনি যখন দাবি করছেন; তিনি করোনা নেগেটিভ; সুতরাং তাকে কোয়ারিন্টিনে নিলেও তার তিনি করোনা নেগেটিভ কীনা তা পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে।
বিমানবন্দরের চেকপোস্টে ঐ ডাক্তারকে আটকানোর আগেই ফেসবুকের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চেকপোস্টে তাকে আটকে দিয়েছেন ইতিহাসের কালার বাঁশী।
ইতিহাসের কৃষ্ণ দাবি করছেন, ঐ ডাক্তার বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আত্মীয়। সুতরাং বাংলাদেশের করোনা রোগীদের সেবা করার অধিকার তিনি হারিয়েছেন।
ইতিহাসের কানহাইয়া তার চেতনার বাঁশীর সুরে সুরে “যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্রের গন্ধ” পেয়েছেন।
২০০২ থেকে ২০০৬ বাংলাদেশের মানুষকে ইসলামের চেতনার চেকপোস্টে সে সহি মুসলিম কীনা তা প্রমাণ করতে হয়েছে। হাওয়া ভবনে তখন সুরের দাউদ বাঁশী বাজাতো; ঠিক এমন করে; যেমন আজ সুচিন্তা ও কান্দন ভবনের কানহাইয়া সুরের বাঁশী বাজাচ্ছেন। চেকপোস্ট পালটে গেলেও এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চেকিং চলতে থাকে। তারমানে বাংলাদেশের মানুষকে অনন্তকাল ধরে ক্ষমতাসীনের ব্যাটম্যানের কাছে “ছাড়পত্র” নিয়ে তবে অন্যকাজ করতে হবে।
বাসার গেটে বাসার কাজের ছেলের এমন দাপট পৃথিবীর অন্য কোন দেশে সত্যিই দেখিনি। জার্মানিতে কখনো দেখিনি কোন চেতনা বালক এসে বেতোফেনের সুর তুলে সহি জার্মান কিংবা সাবেক নাতসির আত্মীয় পরিচয় খুঁজে কাউকে হেনস্থা করছে।
কাঁকড়া দক্ষিণ এশিয়ার ভারত-পাকিস্তানে এই দেশপ্রেম আর ধর্মপ্রেমের চেকপোস্ট গুলোকে প্রতিদিন উড়িয়ে দেয়া হয় কমনসেন্সের ডিনামাইট দিয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ধনের দারিদ্র্য যতটা; তার চেয়ে অনেক বেশি মনের দারিদ্র্য। বাংলাদেশের স্বর্ণযুগে এই মনের দারিদ্র্য ছিলো না। ধনের দারিদ্র্যকে অতিক্রম করা গেছে কাজে-কবিতায়-গানে-চিত্রকলা-চলচ্চিত্র-শিষ্টাচারে।
কিন্তু যখনই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিখিরিদের চেকপোস্ট বসে গেলো স্থানে স্থানে, তখন নিজের অক্ষমতা আর অযোগ্যতাকে বেশ পারঙ্গমতায় মেলে ধরতে, আর যোগ্যদের দাবায়ে রাখতে “কালো তালিকা প্রণয়ন কালচার” শুরু হলো।
যোগ্য লোকদের গান্ধা কইরা দিয়া “ফইন্নির ঘরের ফইন্নি”র বেসুরো শব্দে বাঁশী বাজানো; গান গাওয়া, অভিনয় করা, কবিতা লেখা, উপন্যাস লেখা; ট্র্যাশ কলাম লেখা; তারপর তিনিই পারেন তিনিই পারবেন খালা কিংবা মামীকে দিয়ে একুশে ওস্বাধীনতা পদক ধরিয়ে দিয়ে; তাদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছাই ফেলতে ভাঙ্গাকুলা হিসেবে পদায়িত করে; আজ বাংলাদেশকে এমন জায়গায় আনা হয়েছে যে; ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য হারিয়েছে বাংলাদেশ।
এই খালা ও মামীরা তাদের নিজেদের চিন্তার উচ্চতা অনুযায়ী তাদের চেয়ে কিছুটা নিচের চিন্তা- উচ্চতার লোক নিয়ে মন্ত্রীসভা গড়ে গড়ে; আজ করোনা-ব্যবস্থাপনায় অক্ষম অযোগ্য লোমওঠা নেকড়ের ধূসর চিত্রটি তৈরি করেছেন।
হাঞ্জব্যাক অফ নটরডেমের ঘন্টা বাজানো আর অক্ষমতার কান্নায় লীন জীবনের বেদনা আমাকে কষ্ট দেয়। তাই হাঞ্জব্যাক অফ চেতনাদামদের কষ্ট আমি উপলব্ধি করি। এরা দুটি নরভোজি রাজনৈতিক শিবিরের লেঠেলের জীবনে; গহীন চরের রক্তারক্তির জীবন চক্রের হতভাগ্য মানুষ। এদের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল গহীন বালুর চরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার ওপর।
গ্যাং অফ কোলাবরেটরের অভয়ারণ্য এই ভালোবাসার স্বদেশ। এইখানে আর জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া মাপের চলচ্চিত্র তৈরির যোগ্যতা নেই হাঞ্জব্যাক অফ চেতনাদামদের। নেই সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর মতো “লালসালু” লেখার ঋজুতা। নেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের মতো ধ্রুপদী তুলির আঁচড়। সৈয়দ মুজতবা আলীর বিশ্ববীক্ষা নেই; নেই সেলিম আল দীনের মতো সর্বশিল্পবৃক্ষ।
বাংলাদেশের বাগান জুড়ে শুধু বাতাবি লেবু আর বাতাবি লেবু। সেই বাতাবি লেবুরাই নিজেদের বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই জাতে ভাগ করে; স্ব স্ব জাতের উতকৃষ্টতার রচনা লেখে দিনমান।
বাতাবি লেবুর জীবন কষ্টের জীবন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে বিএনপির বাতাবি লেবুর গাছে সার দিয়ে লেবুগুলো মোটাতাজা করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগের বাতাবি লেবুর বৃক্ষে সার দিয়ে লেবুগুলোকে মোটাতাজা করা হয়।
খালাম্মা ও মামীর ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাজেডি; স্বজন হারানোর বেদনা থেকে যে সতত প্রতিহিংসার বাতাবি লেবুর ক্রসফায়ার; সেইখানে অনেক কষ্টে বেঁচে থাকে প্রতিপক্ষের বাতাবি লেবুগুলো।
“চোখের বদলে চোখে”-র আদিম ডকট্রিন আমাদের খালাম্মা ও মামীর কালচার। ক্ষমা-ভালোবাসা শব্দগুলো তাদের অভিধানে নেই। তারা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন; ওমরাহ পালনে যান, ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে ফটোসেশান করেন; অথচ ধর্ম-নৈতিকতার প্রথম কথাই হচ্ছে মানুষের জন্য ভালোবাসা; সেটি তাঁদের হৃদয়ে আলোড়ন তোলেনা।
আর বাতাবি লেবুর জীবন; সে-ও আবার জীবন। তারা যখন উতকৃষ্ট চিন্তা বলে তাদের চামড়ার থলে থেকে ঘাস যুক্ত ডোবা-নালার পানি ঢেলে দিয়ে তাকে সুমিষ্ট পানি বলেন, তখন “মহতের লজ্জা” পাই। কারণ সারাজীবন লবনাক্ত পানি খেয়ে অভ্যস্ত বাতাবি লেবু চলার পথে রাস্তার পাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেখলে; তা পান করে একে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ পানি মনে করেন। আপনি তাকে কীকরে বোঝাবেন সুমিষ্ট পরিছন্ন পানির স্বাদ!
বিএনপি আর আওয়ামী লীগ তাদের শাসনামলে এমন সব হীরক খণ্ড উপহার দিয়েছে যে; আন্তর্জাতিক আইনে তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার হতে পারে। শুধু ক্রসফায়ারে অসংখ্য বিনাবিচারে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার করা সম্ভব আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের। কারণ তাদের ইচ্ছা ছাড়া নির্দেশ ছাড়া তাদের স্ব স্ব আমলে, বাতাবি লেবু গাছের একটি পাতাও নড়ে না।
সেইখানে এই হাঞ্জব্যাক অফ চেতনাদামেরা ঠিক কোন বিশুদ্ধ রক্তের আওয়ামী লীগ কর্মীর গর্ব ধারণ করেন যে, একজন ডাক্তারকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীর আত্মীয় বলে গান্ধা করে দেন!
বাংলাদেশে কেবল জাতির জনক হত্যা হয়নি; হত্যা হয়েছে জাতির অসংখ্য সন্তান-মা-বোন-জায়া-ভাই-এমনকী গর্ভের শিশুর। আর সে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঠগী খুনীরা।
হাঞ্জব্যাক অফ নতরদামকে একটি সরকারি দায়িত্বে পদায়িত করা হলে; সে সেখানে মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ করে তার অমরতার আয়োজন করে না। জীবন তাকে এতোটা তিক্ত করেছে যে, চেতনার চেকপোস্টে দেশপ্রেম পুলিশ হয়ে ভুঁড়ি বাগিয়ে না দাঁড়ালে তার অবচেতনের গোবর ছোড়ার টানকে সে পরিতৃপ্ত করতে পারেনা।
এ যেন সেই অবিনাশী বাগানে জল দেবার ঝাঁঝর; যে সূঁচের গোড়ার একটি ছিদ্র খুঁজতে অস্থির। দেশপ্রেমের দফাদারদের নিয়ে বাতাবি লেবুর দল “করোনায় সব ঠিক আছে” কেবল “ঐ সূঁচের ছিদ্রের কারণে করোনা প্রাণশক্তি পাচ্ছে”; এমন জগাই মার্কা বহু ব্যবহারে জীর্ণ চিন্তা-আবর্জনা নিয়ে হাজির হয়।