কয়েকজন অর্থনীতিবিদের কাছে মিডিয়াকে যেতে হয় প্রতিক্রিয়া নিতে; প্রত্যেকবার বাজেট পেশের পরে। চলুন কল্পনা করি তাঁদের প্রতিক্রিয়া।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যঃ বাজেটটি করোনাত্তর আত্মনির্ভর উন্নয়ন কৌশল অর্জনে সহযোগী হবে এমনটা মনে হয়নি; বেশ কিছু শুভংকরের ফাঁকি রয়ে গেছে এ বাজেটে; কালো টাকাকে সাদা টাকা করার সুযোগ দিলে; মানি লন্ডারিং যে বাড়বে না; তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আসলে শেয়ার বাজারের জুয়া আর দেশের অর্থনীতি বাজারের জুয়া এ দুটো জিনিস যে এক নয়; তা বাজেট প্রণেতা ভুলে গিয়েছিলেন খুব সম্ভব।
অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেনঃ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি আশার সঞ্চার করে। কিন্তু বরাদ্দের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত হবে কী করে সে সম্পর্কে কোন কর্মকৌশল পত্র তৈরি হয়েছে কীনা; তা দেখতে হবে। করোনা-ঝুঁকি মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন জরুরী ছিলো। কারণ আগামি একবছর করোনার রেশ দেশের ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে থাকবে। অর্থনীতির তারল্য সংকটের ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে খানিকটা উচ্চাকাংক্ষী মনে হয়েছে এই বাজেট।
অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতঃ আমি বুঝতে পারলাম না; গোটা পৃথিবীতে যেখানে প্রবৃদ্ধির হার সেই এমেরিকান গ্রেট ডিপ্রেশনের সময়ের মতো মুখ থুবড়ে পড়ছে; সেইখানে কোন আলাদিনের চেরাগ বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর হাতে রয়েছে; আমার ঠিক জানা নেই। বাজেট হওয়া উচিত ছিলো তিনগুণ বড়ো; যাতে জনগণের সামাজিক সুরক্ষা-কবচ নিশ্চিত করা যায়।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশঃ এই বাজেট একটি সুনির্দিষ্ট শ্রেণীকে তুষ্ট করার বাজেট। শ্রেণীহীন মানুষের করোনাকালে আরো প্রান্তিক হয়ে পড়ার উপপাদ্য পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা হয়েছে এ বাজেটে। এটা নতুন কিছু নয়; তবে গরিব মানুষের প্রতি সরকারের কিছুটা পুনর্ভাবনা আশা করেছিলাম। কিন্তু করোনার শিক্ষণ কোন অভিঘাত ফেলেছে নীতি নির্ধারকদের চিন্তা জগতে এমনটা মনে হয়নি।
অর্থনীতি চিন্তক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীঃ এখনো বাজেটটা পড়া হয়ে ওঠেনি; পড়লে বিস্তৃত আলোকপাত করা যেতো। কিন্তু পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের যে শ্রেণী চিন্তা কাঠামো গড়ে উঠেছে; ঔপনিবেশিক শাসনের নাগপাশে; তাতে ক্ষমতা-কাঠামোর পরিপুষ্টি-সাধনের বাজেটই যে হয়েছে; এটা বুঝে নিতে বাধা নেই। কাজে কাজেই করোনাকালের সন্ধিক্ষণে পুঁজিহীন সমাজ কী করবে; কীভাবে বেঁচে থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই বাজেটের বাহ্যিক কলেবরে।
আওয়ামী লীগের অর্থনীতিবিদঃ অভাবনীয় বাজেট। মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “সোনার বাংলা” গড়ার প্রতিশ্রুতি আছে। স্বাধীনতার শত্রুরা তাদের বাজেট কখনো এমন গণমুখী করতে পারেনি। তবে যেহেতু স্বাধীনতার শত্রুদের নাম মুখে আনলে টুথ ব্রাশের প্রয়োজন পড়ে; তাই এ বছর টুথপেস্ট ও টুথ ব্রাশের দাম কমবে এমন আশা ছিলো। আশা রাখি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী; আমাদের আশা ভরসার স্থল; ঠিকই টুথ পেস্ট ও টুথ ব্রাশে কিছু ভর্তুকি দিয়ে আমাদের দেশপ্রেমিকদের ঝকঝকে মজবুত পেপসোডেন্ট হাসির সুরক্ষা দেবেন।
বিএনপির অর্থনীতিবিদঃ এ বাজেট লুন্ঠনের বাজেট; একদলীয় শাসনের বাজেট; জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় লোকদের খুশী রাখার বাজেট। এ বাজেট বে আইনি কারণ এ সরকারের কোন নৈতিক ভিত্তি নেই আর ক্ষমতায় থাকার। আমরা এ বাজেট প্রত্যাখান করছি।
চায়ের স্টলের অর্থনীতিবিদঃ মুখোশ পইরা বাজেট দেওনে; মনে হইলো সিনেমা দেখতেছি; মুখ বাঁধা আলী বাবা আর চল্লিশ চোর বাজেট দিতেছে। এইডা দিয়া আমগো কী কাম। অরাই বাজেট দিবো; অরাই বাজেট খাইবো; অরাই সেকেন্ড হোম বানাইবো; অরাই টেকাটুকা দিয়া ধর্মপ্রেম আর দেশপ্রেম কিনবো। ভোট তো আর কিনন লাগে না; যাগো ব্যাতন দিয়া পোষে তারাই ভোটের রেজাল্ট লিইখা দেয়। বালিশ আর কাছিম কমিশনের টেকাটুকা খাইয়া সহমত ভাই-বইনেরা ভোটকেন্দ্রে সামনে লাইন দিয়া দাঁড়াইয়া থাকে; যাতে আমরা পাবলিকে আর ভোট কেন্দ্রে যাইতেই না পারি; ভোটিং মেশিনে গেলেও সহমত ভাই আইসা “নুকা নুকা”করে। একবার বিম্পির হ্যা না ভোটে যা দেখছিলাম; ঐডাই আম্মিলীগ ডিজিটাল কইরা দেহাইতেছে। গুষ্টি কিলাই বিম্পি-আম্মিলীগের। ধন্যবাদ করোনা হগগোল ডাকাইতের মুখে মাস্ক পরাইয়া দেয়ায়।
– মাসকাওয়াথ আহসান
সাংবাদিক, সাংবাদিকতার শিক্ষক
Editor-in-chief, E-SouthAsia