৯২২ জনের টেস্ট করে একজন করোনা পজেটিভ পায়নি উত্তর কোরিয়া।কিম জং-এর দাবি প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ঠেকাতে তার দেশ ‘উজ্জ্বল সাফল্য’ দেখিয়েছে। বলা হচ্ছে টেস্ট বন্ধ করে দিলে উত্তর কোরিয়ার মত আমাদেরও কোন করোনা রোগী থাকতো না। দু চিমটি লকডাউন, তিন চিমটি ছুটি, চার চিমটি রুবানা টাইপ শ্রমিকের দায়িত্ব নেয়ার প্রহসন থাকতো না। কোন দেশ টেস্টের মত মামুলি বিষয়ের জন্য ফি নেয়ার কথা না জানা গেলেও এমনকী বিদ্যুৎ গ্যাসসহ সব সেবার বিল কয়েক মাস বাকি রেখেছে অনেক দেশ, স্বেচ্ছায় নিজের হোটেল দিয়েছে ডাক্তার নার্সদের জন্য, বেসরকারী হসপিটাল ক্লিনিক সরকারী খাতের সাথে এমনকী অধীনে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামিল থেকেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খাবার হোটেল টেকওয়ে স্বাস্হ্য কর্মীদের জন্য নিয়মিত খাবারের স্তূপ বানিয়ে রেখে গেছে।
এমন অনেক কিছু দেশে দেশে দেখা গেলেও এশিয়ার সুইটজারল্যান্ডে সব চলেছে নিজের মত করে। একসময় মনে হচ্ছিল করোনা রোগীর চেয়ে ত্রাণচোরের সংখ্যা বোধহয় বেশি হয়ে যাচ্ছিল। আধা ঘুমন্ত স্বাস্হ্য মন্ত্রীর পুত্রের নাম আসে এন-৯৫ মাস্ক কেনার দুর্নীতিকান্ডে। পিপিই আর মাস্কটা নিয়ে পর্যন্ত কত জালিয়াতি হলো। এক পুরোনো জেলা শহর নোয়াখালী, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের জেলায় ১০ বেডের আইসিইউ এর সব সরন্জামাদি আসার পরও তা কবে স্থাপন হবে কেউ জানে না।
এত স্বাস্থ্যের মুদি ও বিশাল মনোহারী দোকান – প্রাইভেট ক্লিনিক হসপিটাল পৃথিবীর কোন দেশে আছে কিনা সেটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। দুদিন আগে এক শিশুকে আইসিইউ দেয়ার কথা বলে হাত পা বেধে মেরে ফেলার দৃশ্য দেখে মানুষ শিউরে উঠেছে। ডাক্তার নার্সদের আলাদা রাখার জন্য অনেক দেশে বিনামূল্যে হোটেল দেয়া হয়েছে। হোটেল মালিকরাই এগিয়ে গেছে। করোনাকালে এমনিতে তো হোটেল খালি( সরি বাংলাদেশ বাদে) পড়েছিল!দুর্মুখরা বলে সর্বশেষ এডিবি এবং বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ দিয়ে যে দুটি বিল্ডিং ইটিং প্রজেক্ট তাতে নাকি সরাসরি আশু করোনা মোকাবেলার সাথে সম্পর্কিত বিষয় খুবই কম।
সব কিছু উনাকে জানতে হয়। সবকিছু উনাকে বলতে হয়। তবে এত দফতর প্রতিষ্ঠান কেন? তাদের রুটিন কাজ কি? এ সময়ে কিটের কেন অভাব? না অভাব দেখিয়ে উচ্চ মূল্যের কোন দুর্নীতি করার আয়োজন হয়েছে? বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চারটা ওয়েবসাইটের জন্য ১০ কোটির অধিক দুর্নীতি আয়োজক ইকবাল কবীরকে বদলী করে ‘মারাত্মক’ শাস্তি দেয়া হয়েছে? দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার জন্য পুলিশ কমিশনার তার অধীনস্থ এক সহকারী কমিশনার সম্পর্কে আইজিপিকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধের চিঠির উপর খবর প্রকাশ করলে সাংবাদিককে পুলিশ তলব করে। সেই দুর্নীতিতে যুক্ত থাকা কমিশনারের কিছু হয় না বদলী ছাড়া। তথাকথিত ভাবমূর্তি বিনস্টের জন্য প্রতিদিন নির্বিচার গ্রেফতার চলছে, অপহৃত সাংবাদিক কাজলকে নিয়ে খেলা চলছে। মুশতাক কিশোর দিদার এরা সবাই সত্য কথা লিখে রোষের শিকার হয়ে এই মহামারীকালে কারাগারে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। তারপরও কোথাও কোন টুঁ শব্দ নেই। অভিজ্ঞরা জানেন বাংলাদেশ কখনো এমন নীরব শব্দহীন ছিল না।
ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের নামে ১০ বছরে বিদ্যুৎ ব্যবহার ছাড়াই ৬২ হাজার কোটি দেয়া হয়েছে নিজেদের ঘনিষ্ঠ হাতে গোণা কজন ব্যবসায়ীকে। অথচ অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় ২৬ পাটকলে বছরে ২৪০ কোটি টাকা ভর্তুকির অজুহাতে এখন গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে প্রায় ২৭ হাজার শ্রমিক কর্মচারীকে কর্মচ্যুত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে! তাও এই মহামারীকালে। এই আকালে সহায়তার বদলে মানুষকে গড়ে গলাকাটা বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। সংসদীয় উপ নির্বাচন করা হয়েছে। ঈদে ব্যক্তিগত গাড়িতে বাড়ি যাবার সুযোগ দেয়া হয়েছে। দলবল নিয়ে সভা হয়েছে। অথচ এর আগে কত হুংকার। মহামারী নিয়ে এত তামাশা এত নির্মমতা এত অব্যবস্থাপনা কোথায় হয়েছে? দ্বিতীয় কোন দেশের নাম বলবেন? সুইডেন? আমেরিকা? না ভুল হলেও সবারই কম বেশি পরিকল্পনা ছিল।
তবে হ্যাঁ আমাদেরও ছিল, আমাদের ছিল কজন আশার সওদাগর। আমি
আমাদের কেউ কেউ নিজেকে করোনার চেয়েও শক্তিশালী’ বলে অভিভাবকের নির্দেশে ঘরের মধ্যে নিরাপদ অবস্থান নিয়েছে। শুরুতে স্বাচিপ- এর এক নেতা টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে বললেন বাংলাদেশে করোনা আসবে না তিনি নিশ্চিত। এদিকে মুফতী ইব্রাহিম আমির হামজারা নিজেদের মত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করলেন। সব আশার সওদাগর এখন কিছুটা নিশ্চুপ। তারপর ও স্বভাবসুলভ বাচাল দু একজন উজিরের চুলকানি হয় মাঝে মাঝে। অথচ একে একে কত চেনা জানা মানুষ হারিয়ে গেছে। পুলিশ, বিচারক, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, সশস্ত্র বাহিনী কে নেই তালিকায়। প্রথম থেকেই আসলে করোনা মোকাবেলায় কিমের উত্তর কোরিয়ার মত ‘সফল’ হওয়াই উচিত ছিল বাংলাদেশের। নো টেস্ট নো করোনা। নো নিউজ অলওয়েজ গুড নিউজ।এবারের মত ভুল হলেও আগামীতে আর এমনটি চাই না আমরা। ডিনাইয়াল স্টেটের তালিকায় উত্তর কোরিয়াকে হারানোর জন্য সরকারের দায়িত্ব একার না, আমাদের সহমত আনসার ভ্রাতা ভগ্নিদেরও এ জন্য ব্যাপক সহায়তা দরকার।
বাংলাদেশকে উত্তর কোরিয়া বানিয়ে দেবার শুভ প্রত্যাশা ব্যক্ত করার পর লেখার শেষ পর্যায়ে চোখ পড়লো প্রায় উত্তর কোরিয়ান গেটাপের এক আনসার সদস্য কর্তৃক এক ফটোসাংবাদিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য।ছবিতে দেখুন করোনা টেস্ট করাতে এসে এক বয়স্ক মহিলা শেষ পর্যন্ত অজ্ঞান হয়ে যাবার মুহুর্ত। সম্ভবত দিন দুই আগে তোলা। মুগদা হাসপাতালের সামনের দুটি ঘটনা। জানা গেছে, শুক্রবার ৪০ জনের টোকেন দিয়ে ৩৪ পর্যন্ত টেস্ট করিয়ে বাকিদের চলে যেতে বলা হলে ৩৫ নম্বর সিরিয়ালে থাকা যুবকটি প্রতিবাদ করে। এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে কর্তব্যরত আনসাররা ঐ যুবককে মারপিট করতে থাকলে দেশ রূপান্তর- এর সাংবাদিক সেই ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন আনসার সাংবাদিককে আক্রমণ করে তার ক্যামেরা ভাঙচুর করে। হায়রে অবস্থা আজকাল আনসারও সাংবাদিক পেটাবার সাহস করে। অপহৃত সাংবাদিক কাজলকে নিয়ে চলছে মহানাটক। নির্বিচারে সাংবাদিক এক্টিভিস্ট কার্টুনিস্ট লেখক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এমনকী ১৫ বছরের শিশুকে পর্যন্ত ‘ভাবমূর্তি বিনষ্ট এবং অনুভূতিতে কথিত আঘাতের’ অভিযোগে ডিজিটাল সিকউরিটি এক্টের মামলায় গ্রেফতার ও জেলে পাঠানো হচ্ছে। অনভূতিবাজ সহমত ভাইরা দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে কোন লেখা সহ্য করছে না। এ রকম প্রাথমিক অনেক ধাঁপ সম্পন্ন হবার পর পুরোপুরি উত্তর কোরিয়া হওয়া যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আমরা সেদিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন উত্তর কোরিয়ার মত ব্যালটে মাত্র একটি দলের প্রতীক থাকবে, মানুষ সেই এক প্রতীকের একক প্রার্থীকে শুধু ভোটই দেবে না ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় হাসিখুশি থাকার নিয়মে অভ্যস্ত হবে।মহামারী, দুর্যোগ, অনাহার, কর্মহীন যে যেই পরিস্থিতিতে থাকুন না কেন সবার মুখে থাকবে হাসি। উন্নয়নের বেনিফিসিয়ারী টোকাই দেশী বিদেশী নানা জনকে দিয়ে দৃশ্যমান কষ্ট আর হাহাকারকে ভুলিয়ে দিতে ভুয়া খবরের শিরোনাম করবে কথিত প্রভাবশালী ম্যাগাজিনে।সহমত ভাই সেই পুঁজি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে বলবে- দুর্মুখরা তবু উন্নয়ন দেখবে না!
– শাহ আলম ফারুক
faruk69@gmail.com