সোজা কথা প্রতিবেদক: করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই এবার বন্যাও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম থেকে এদেশে বন্যা প্রকোপ শুরু হয়। প্রতি বছর বন্যায় উত্তরের জেলাগুলোই বেশি আক্রান্ত হয়। কিন্তু এবার স্বাভাবিক সময়ের দু’সপ্তাহ আগেই বন্যার প্রকোপ শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদী বন্যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২৭ জুন থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে শুরু হওয়া এবারের বন্যার ধরন অনেকটা ’৯৮-এর মতোই।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, চলমান বন্যার পানি আগামী দু–এক দিনে কমে আবারও বাড়তে শুরু করবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের সাত–আটটি জেলায় এই বন্যা ২০ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
দেশের দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি বন্যার জন্য খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী দ্রুত প্রস্তুত করার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতাসহ আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করতে বলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়া বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দ্রুত প্রস্তুত করার ওপরও জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বর্তমানে দেশের ১৪টি জেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ বন্যার পানিতে বন্দী অবস্থায় আছে। বন্যার কারণে ঘর ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মানুষের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হচ্ছে জামালপুর, গাইবান্ধা ও সুনামগঞ্জ। বন্যায় আক্রান্ত অন্য জেলাগুলো হচ্ছে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী। বন্যার্তদের জন্য সহায়তা হিসেবে সরকার থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও ১০ হাজার ৭০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দেশে সাধারণত বছরে এক থেকে তিনটি বন্যা হয়ে থাকে। জুনের শেষে বা জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে যে বন্যা হয়, তা সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। মূলত সিলেটের হাওর এলাকা এবং ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকাজুড়ে এই বন্যা হয়। এবার চট্টগ্রাম, পদ্মার দুই পাড়ের চার জেলা, উত্তরাঞ্চলের আত্রাই অববাহিকায় বন্যার পানি চলে এসেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আত্রাই নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নওগাঁ, জয়পুরহাট ও বগুড়ার আরও বিস্তৃত এলাকায় ছড়াতে পারে।
গঙ্গা–পদ্মা অববাহিকায় শুধু মুন্সিগঞ্জের কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি আছে। তবে আগামী তিন–চার দিনের মাথায় এই এলাকার শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে বন্যা বিস্তৃত হতে পারে।
হালদা–সাঙ্গু ও মাতামুহুরী—এই নদীগুলোর উজানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে এই নদীগুলোর দুই পাড়ের জেলা চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে বন্যা হতে পারে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার নদীগুলোর দুই তীরে বন্যা হতে পারে এক সপ্তাহের মধ্যে।
বন্যার পানি উঁচুতে ওঠার দিক থেকেও স্বাধীনতার পর ’৯৮ সালের বন্যা ২০ দশমিক ৩৭ মিটার, ’৮৮ সালে ২০ দশমিক ৬২ মিটার পর্যন্ত উঁচুতে ওঠে। ওই সময় পর্যন্ত ওই দুই বন্যা ছিল রেকর্ড। এরপর ২০১৬ সালে আগের দুই রেকর্ড ভেঙে পানি ২০ দশমিক ৭০ মিটার উঁচুতে ওঠে। এরপর ২০১৭ সালে ২০ দশমিক ৮৪ ও ২০১৯ সালে আগের সব রেকর্ড ভেঙে ২১ দশমিক ১৬ মিটার উঁচুতে ওঠে বন্যার পানি।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত কয়েকদিন দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমলেও আবারো ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে আবারো সক্রিয় হয়ে পড়ছে মৌসুমি বায়ু। এ অবস্থায় রংপুর ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। ইতিমধ্যে উত্তরের জেলা এবং সিলেট বিভাগের ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি অংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।