সোজা কথা ডেস্ক: কোভিড-১৯ মহামারীর মতো যেকোনো দুর্যোগকালীন সময়ে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার বিল-২০২০’ পাস হয়েছে। বিলের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনের তাগিদে সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা করা যাবে।
বুধবার সংসদে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনের তাগিদে সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা করা যাবে। এর অধীনে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ এবং আদেশ প্রদান করা যাবে।
এর আগে বিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলটির বিরোধিতার জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিলটি নিয়ে বিভাগীয় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের আইনটি সম্পর্কে কোন আপত্তি নেই। করোনায় ৩ মাস আদালত বন্ধ ছিল, আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করতে পারেননি, তাদের ক্ষতি হয়েছে। আর ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা করতে সবার (আইনজীবী) কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। এই ৩টি সমস্যার কথা তারা বলেছেন।
তিনি বলেন, বিশেষ পরিস্থিতি ও বিশেষ প্রয়োজনে এই আইনটি ব্যবহার করা হবে। স্বাভাবিক আদালতের মতোই চলবে। তবে করোনার কারণে পূর্ণাঙ্গ বিচারিক ব্যবস্থা চালু করা এখন কোনভাবেই সম্ভব হবে না।
আইনমন্ত্রী বলেন, কারগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক বন্দী রয়েছে। করোনার বন্ধকালে যদি কারাগারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতো তবে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতো। করোনার কারণে কোন আসামিকে আদালতে উপস্থিত করা যাচ্ছিল না, কারাগার ভর্তি হয়ে যাচ্ছিল। সংবিধানবিরোধী আইন হলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করতেন না। সংবিধান মেনেই আইনটা করা হয়েছে। এটা পূর্ণাঙ্গ আইন নয়, সীমিত আকারে ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে করা হবে। বিনা বিচারে বহু মানুষ জেল খাটছে, তাদের জামিন দেওয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ জন্যই ভার্চুয়াল কোর্ট। এই কোর্টের মাধ্যমে ৭১ হাজার আসামিকে জামিন প্রদান দেয়া সম্ভব হয়েছে। আমরা সামনের দিকে যাব, পেছনের দিকে যাব না। কিন্তু আইনজীবীদের পেছনে ফেলে যাব না, সঙ্গে নিয়েই যাব।
এদিকে পাস হওয়া বিলে ভার্চুয়াল উপস্থিতির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, অডিও-ভিডিও বা অনুরূপ অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির আদালতে বিচার বিভাগীয় কার্যধারায় উপস্থিত থাকা ও অংশগ্রহণ ভার্চুয়াল উপস্থিতি বলে গণ্য হবে।
বিলে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনের তাগিদে এই আইনটি প্রয়োগ করা যাবে। সেক্ষেত্রে কোনো মহামারি হলে, জরুরি প্রয়োজন দেখা দিলে বা নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠলে উচ্চ আদালত আইনের ওই বিধান প্রয়োগ করবেন।
করোনা মহামারীর মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রেখে গত ৭ মে মন্ত্রিসভা এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়ার পর ভার্চুয়াল আদালতের কাজ শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাদেশটি সংসদে তোলা হয় গত ১০ জুন। আর এ সংক্রান্ত বিলটি উত্থাপন হয় ২৩ জুন।