সকলেরই জানা একটি জনপ্রিয় চুটকি হচ্ছে : বরের বাবা কনের বাবাকে বললেন, বেয়াই আমরা যৌতুক বিরোধী। আমরা কোন যৌতুক নিব না। তবে বুঝেনতো ছেলের ব্ন্ধু বান্ধবের কাছে ছেলের একটা মান সন্মান আছে না? ছেলের সন্মান রক্ষার্থে ২৫০ সিসির একটা মটর সাইকেল, ৬০ ” মাপের একটি স্মার্ট টিভি, ১টা রোলেক্স ঘড়ি দিলেই চলবে। মেয়ের বাবা বললো, আর কি কি দিতে হবে? ছেলের বাবা বললেন, আর কিছুর দরকার নেই। মেয়ের বাবা চুপ করে থাকায় ছেলের বাবা বললেন, বেয়াই কিছু বলুন। মেয়ের বাবা বিনয়ের সাথে বললেন,আপনার সব কটি কথাই খুবই যৌক্তিক ও ন্যায্য। তবে ভাই আমার একটি মাত্র কথা আছে এবং তা হলো আপনার ছেলের কাছে আমি আমার মেয়েটা বিয়ে দিব না। গল্প শেষ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি নানা দাবি উত্থাপন করছেন সরকারের কাছে । কেউ বলছেন ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কেউ চাচ্ছেন সমাজতন্ত্র। কেউ বলছেন নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে। আবার কেউ চান রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কালো আইনের সংঙ্কার। কেউ নদী বাঁচাতে চান, কেউ চান বনভূমি, অন্যেরা জলাভূমি। ভোটাধিকার, দুর্নীতি, সীমান্তে হত্যা, ভারতীয় আগ্রাসন, অর্থ পাচার,সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ হাজারো দাবী দাওয়া। রাজনীতিতে এগুলি স্বাভাবিক। এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই প্রেসক্লাব কেন্দ্রীক মিছিল, মানববন্ধন, মতবিনিময়,সেমিনার, আগুন ঝরা বক্তৃতা ভাষণতো আছেই। সরকারকে সকাল বিকাল টেনে হ্যাঁচকে নামানো হচ্ছে । কার্যত সরকার এসব গ্রাহ্য করেনা। সরকারের নিজস্ব এজেন্ডা থাকে। সরকার মেয়ের বাবা। যা কিছু চান সবই ন্যায্য, পাননি কিছু, পাবেনওনা।
ইউরোপসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে ২০/৫০ জন সাধারণ নাগরিক আইনসভার সামনে জড় হয়ে মানববন্ধন করলে, পিকেটিং করলে নাগরিকদের দাবী নিয়ে আইন পরিষদে আলোচনা হয়, দাবী উত্থাপনকারীদের সাথে মতবিনিময়ও হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার সার্বক্ষণিকভাবে জনগণের নিকট দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহিতায় বাধ্য। আমাদের দেশে শাসকগোষ্ঠী জনগণের নিকট দায়বদ্ধ নন যেহেতু তারা জনগণ নয়, পেশীশক্তি নির্ভর দলীয় গুন্ডা পান্ডাদের দ্বারা ভোট জালিয়াতি, কারচুপি, ডাকাতির মাধ্যমে গায়ের জোরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।
৪৯ বছর ধরে দলীয় সরকারের অধীনে কোন গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হয়নি। এখন দুই বিবাদমান রাজনৈতিক অপশক্তির মধ্যে সংঘাত হানাহানি,হিংসা বিদ্বেষ যে মাত্রায় শিকড় বিস্তার করেছে জনগণ আর কখনও ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনে কোন ভূমিকা রাখতে পারবেনা। ভোটের ফলাফল আগের আগের মতই মাস্তানীর আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ছিনিয়ে নিয়ে সরকার গঠন করবে। এ নষ্টামী থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে শান্তিপূর্ণ গণঅভ্যূত্থান।
৪৯ বছর ধরেই চলছে গুম, খুন, নিপীড়ন, নির্যাতন, সীমাহীন লুটপাট ও নির্মম দুর্বৃত্তায়ন। ব্যাংক, শেয়ার বাজার, অবকাঠামো নির্মাণ, সরকারী ক্রয়ের অজুহাতে জনগনের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাত করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে/হচ্ছে। ৪৯ বছর ব্যাপী চলমান খাই খাই নষ্ট রাজনীতি অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশকে অতল কৃষ্ণগহ্বরে নিক্ষেপ করছে।
বহু ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ দ্রুত অকার্যকর রাষ্ট্র হবার ঝুকিতে পড়েছে। বাংলাদেশে বর্তমান রাজনীতি লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা। যত রক্তই ঝরুক কেউ এ ব্যবসা হাতছাড়া হতে দেয় না।
সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করে অহিংস পন্থায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে ৪৯ বছরের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিবাজদের নিক্ষেপ করতে হবে আস্তাকুঁড়ে এবং বিনির্মান করতে হবে দুর্নীতিমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সমতা ভিত্তিক, আইনের শাসনের জনকল্যানমূখী সমৃদ্ধ, গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
মোটাদাগে যারা উপরে বর্ণিত চিন্তা চেতনার সাথে সহমত পোষন করেন তারা শান্তিপূর্ণ অভ্যূত্থান সংগঠিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন। ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে বিচ্ছিন্ন কর্মকান্ডে মেধা ও শক্তি ব্যয় না করে ঠগবাজী, ধান্ধাবাজীর সর্বনাশা রাজনীতি থেকে মাতৃভূমিকে উদ্ধার করা জরুরী।
দিনে বিপ্লবী, রাতে সমঝোতাকারী, অস্থির, বক্তৃতায় ৪৯ বছর ধরে পালা করে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কিন্তু আপদ আর বিপদ, ১৯ আর ২০ তত্ত্বের আড়ালে লুটেরাদের একপক্ষের পক্ষে ওকালতি করা, ব্যক্তিগত সততা প্রশ্নবিদ্ধ, ষড়যন্ত্রকারী, হামবাগদের বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে যেন জনগণের অর্জন ঘাপটি মেরে বসে থাকা হায়নার দল আগের আগের মত নস্যাৎ করতে না পারে।
বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠী বর্তমান শ্বাসরোধ্যকর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়, অর্থবহ পরিবর্তনের মাধ্যমে বাসযোগ্য সমৃদ্ধ মর্যাদাবান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের স্বদেশভূমি চায়।
– আ.ব.ম.মোস্তাফা আমীন
আহবায়ক, ফরওয়ার্ড পার্টি
(বানান রীতি ও মতামত লেখকের নিজস্ব, এর দায় পত্রিকার নয়)