সোজা কথা ডেস্ক: করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদসহ বহুমাত্রিক জালিয়াতিতে আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের ভোগ করা সব রাষ্ট্রীয় সুবিধা একে একে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার স্থগিত করা হয়েছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র। এর আগে বাতিল করা হয়েছে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড। এছাড়া সাহেদের পাসপোর্ট জব্দ করে তা স্থগিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, দুদিন আগে সাহেদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে সরকার। দৈনিক নতুন কাগজ নামে একটি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নেন তিনি। তার কার্ডের নম্বর-৬৮৪৫। গত বছর ৩ ডিসেম্বর তার কার্ডটি ইস্যু করে তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি)। এক বছর মেয়াদি কার্ডের মেয়াদ ছিল চলতি বছর ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তিনি আরও বলেন, রিমান্ডের পঞ্চম দিনে ডিবি হেফাজতে থাকা সাহেদের কাছ থেকে তার আরও তিন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর নাম পাওয়া গেছে। সাহেদ জানিয়েছে তার ওই সহযোগীরা এখনো রাজধানীতে ঘাপটি মেরে আছে। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে পলাতক সহযোগীদেরও আটক করা হবে।
১৯ জনের নাম এসেছে : তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, যারা নানাভাবে সাহেদকে সাহায্য সহযোগিতা করে এসেছেন এমন ১৯ জনের নাম পেয়েছেন তারা। সাহেদও তাদের এর বিনিময়ে দিয়েছেন অর্থকড়ি, গাড়ি, বিদেশে ভ্রমণের সুবিধা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাহেদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ, তার মোবাইল ফোনের কললিস্ট, ঘটনাস্থলে যাতায়াতসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করে ১৯ জনকে চিহ্নিত করেছে।
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে পাওয়া সাহেদের নিরাপত্তা পাস বাতিল করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সাহেদ খুব চতুর ও ধুরন্ধর লোক। তার পক্ষে নিরাপত্তা পাস সংগ্রহ কোনো ব্যাপারই নয়। ইতিমধ্যে সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন পাস বাতিল করা হয়েছে। এনআইডিও স্থগিত করা হয়েছে। এসবির কোনো পাস তাকে দেওয়া হয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে আমি খোঁজ নেব।’
ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ‘সাহেদ কখনো ক্লিন ইমেজের লোক ছিল না। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলে, “আমার ইমেজ আছে।” আসলে ওর কিছুই নেই। প্রকৃতপক্ষে সাহেদ একজন ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষন্ড। অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে তাদের কাছে মানুষের জীবন-মৃত্যুর কোন মূল্য নেই। সাহেদ তার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ও চিকিৎসা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গত ৬ জুলাই ঢাকার উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। করোনা প্রতারণাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ওই হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ তখন থেকেই পলাতক ছিলেন। এ সময়ে সাহেদ নানাভাবে চেষ্টা করেছেন নিজেকে রক্ষার। যোগাযোগ করেছেন প্রভাবশালীদের সঙ্গে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।