নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির প্রথম ভারতীয় পণ্যের চালান নিয়ে আসা জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে । মঙ্গলবার বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ‘এমভি সেঁজুতি’ জাহাজে চালানটি বন্দর জেটিতে আনা হয়। এটি চট্টগ্রাম বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য উত্তর–পূর্ব রাজ্যে পরিবহনের পরীক্ষামূলক প্রথম চালান।
জাহাজটি নিউমুরিং টার্মিনালে পৌঁছানোর পর পণ্য খালাস শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশি এই জাহাজে পণ্যবাহী ১৬০ একক কনটেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা) রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভারতের পণ্যবাহী। বাকি ১৫৬টিতে করে পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের আমদানিকারকেরা। জাহাজটিতে ১৪০ একক খালি কনটেইনার রয়েছে।
ট্রান্সশিপমেন্ট কি :
ট্রান্সশিপমেন্ট হচ্ছে তৃতীয় একটি দেশের বন্দর ও পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে প্রতিবেশী বা অন্য কোন দেশের পণ্য পরিবহন করা। এর ফলে কোন একটি দেশ তাদের পণ্য তৃতীয় একটি দেশের বন্দর, সড়ক বা রেল অর্থাৎ যানবাহন ব্যবহার করে নিজের দেশের আরেক অংশে বা অন্য কোন দেশে পাঠিয়ে থাকে। এজন্য তাদের সব খরচ বহন করতে হয়।
গত বৃহস্পতিবার কলকাতার শ্যামপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরে এই চার কনটেইনার পণ্য বোঝাই করা হয়। এরপর জাহাজটি বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পণ্য নিয়ে হলদিয়া বন্দরেও কনটেইনার বোঝাই করে। গত রোববার রাতে হলদিয়া থেকে রওনা হয় জাহাজটি। দুই দিনের মধ্যে জাহাজটি আজ সকালে বন্দরে পৌঁছাল।
প্রায় ৯৬ মিটার লম্বা খুবই ছোট আকারের এই জাহাজ বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে অভ্যন্তরীণ জাহাজ ভেড়ানোর জেটিতে ভিড়ানো হয়। এই জেটিতে সমুদ্রগামী জাহাজ ভিড়ানো হয় না। পানগাঁওগামী জাহাজ না থাকায় জেটিটি কয়েক দিন ধরে খালি পড়ে ছিল।
পণ্য পরিবহন চুক্তি
২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন দি ইউজ অফ চট্টগ্রাম এন্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অফ গুডস টু এন্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সেই অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত তার পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় মালামাল পরিবহন করার সুযোগ পাবে। এজন্য তারা বন্দর ও পরিবহন ব্যবহারের খরচ বহন করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের মাশুল আদায় করবে। সব মিলিয়ে কন্টেইনার প্রতি মাসুলের পরিমাণ ৪৮ ডলারের মতো।
ট্রানজিট পণ্য কত দিন বাংলাদেশে রাখা যাবে, এরও ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ১৩ জুলাই রাজস্ব বোর্ডের এক আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশে এই পণ্য আসার পর থেকে সাত দিনের মধ্যে পণ্যের চালানগুলোর বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে সময় বাড়ানো যেতে পারে।
ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের আয়
ভারতীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের ফি আদায় করবে। এই সাতটি হলো প্রতি চালানের প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ২০ টাকা, নিরাপত্তা ফি ১০০ টাকা, এসকর্ট ফি ৫০ টাকা, কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক ফি ১০০ টাকা।
ভারতীয় পণ্য পরিবহন করে আনা চালানটিতে প্রতি কনটেইনারে ২৫ টন পণ্য রয়েছে। এ হিসাবে কনটেইনারপ্রতি সরকারি ফি ও বন্দর মাশুল বাবদ প্রায় ১০০ ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর বাইরে সড়কপথে চট্টগ্রাম থেকে আগরতলা পর্যন্ত পণ্য পরিবহন বাবদ কনটেইনারপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া পাবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ সড়কপথে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ৪১১ থেকে ৪৭০ ডলার ভাড়া পাবে। আনুষঙ্গিক খরচ ছাড়া সমুদ্রপথে ও সড়কপথে পরিবহন ভাড়া ও সরকারি ফিসহ সব মিলিয়ে কনটেইনারপ্রতি ৭৩০ ডলার আয় হতে পারে বাংলাদেশের। তবে চালানটি পরিবহন শেষে প্রকৃত আয়ের হিসাব জানা যাবে।