দুই হাজার আট সালে দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিলো এই কথাগুলো। আওয়ামী লীগ যা বলে বিশেষ করে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবার অগণিত উদাহরণ আছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন, ভুল পথে চালিত করেছেন এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল যার পরিণতিতে আজকের এই অবস্থা। এই স্বার্থান্বেষী চক্রে যেমন রয়েছে বাঙ্গালি তেমনি রয়েছে আদিবাসীদের মধ্যে বসবাস করা এমন কিছু কীট যারা আদিবাসী অপেক্ষা সুবিধাবাদী অধিক। একাত্তরে এদেশীয় রাজাকারদের ভূমিকাকেও হার মানিয়েছে এদের কীর্তিকলাপ। এরা কতিপয় বাঙ্গালি রাজনীতিবিদদের সাথে একত্র হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জুজুবুড়ির ভয় দেখিয়ে দিলেন, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হলে মহাপ্রলয় ঘটে যাবে এইদেশে! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কিভাবে যেন উনার স্বভাবের বিরুদ্ধে চলে গেলেন এই বিষয়টার ক্ষেত্রে। আমি একা নই, ব্যক্তিগত ভাবে উনাকে উনার যেকোন গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে অনড় মনোভাবের জন্য প্রশংসা করতে বাধ্য হবেন যে কেউই। কিন্তু এই একটা জায়গায় কোথা থেকে যেন কি হয়ে গেল! তারপরও বলবো এই ব্যাপারে কোন ভাবেই উনাকে এককভাবে দায়ী করবার কোন সুযোগ নেই।
একটা প্রবাদ বাক্য আছে- একেতো নাচুনে বুড়ি, তার উপরে ঢোলের বাড়ি। বাঙ্গালিদের পাশাপাশি যখন দেখলেন স্বয়ং আদিবাসীদের মধ্যে থেকেও একটা মহল চাইছে না আদিবাসীদের অধিকারগুলো পুরোপুরি সাংবিধানিক ভাবে নিশ্চিত না হোক তখন উনাকে আর একা দোষ দেই কিভাবে? এই স্বজাতের অধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধ অপশক্তিগুলোর শুভ বুদ্ধির উদয় হলে অনেক আগেই অধিকারহারা আদিবাসীদের অনেক সমস্যাই দুর হয়ে যেতে পারতো।
এখন একটাই চাওয়া। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক সকল মহলের। এদেশে বসবাস করা বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সদস্যরা এদেশেরই ভূমিপুত্র, বাইরের কেউ নন। বাংলাদেশী বাঙ্গালি হিসেবে আমাদের যতটুকু অধিকার ঠিক বাংলাদেশের আদিবাসী হিসেবে তারাও সেটুকুর দাবীদার। একঘরে থাকা পিতার দুই পরিবারের সন্তানরাও সমান অধিকার ভোগ করে থাকেন, আর এরাতো একই ঘরের সন্তান। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙ্গালীর পাশাপাশি বৃহত্তর সিলেট, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক স্থানেই বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়েছে এখানে বসবাস করা আদিবাসীদের সন্তানরাও। গারো, সাঁওতাল, খাসিয়া, মনিপুরী, হাজং, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা প্রতিটি জনগোষ্ঠীর অনেকেই বাঙ্গালীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রণাঙ্গনে শত্রুর মোকাবিলা করেছিলেন তখন। রোজ সকালে আমার আপনার সন্তানের মতো তাদের সন্তানেরাও এই দেশের জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানিয়ে এই দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে তাদের দিবসের শুভ সূচনা করে, আমাদের মতো তারাও মনে প্রানে এই লাল সবুজের বাংলাদেশকেই ধারণ করে। স্বাধীনতা দিবস কি বিজয় দিবসের উৎসবে সামিল হন আন্তরিকভাবেই আমাদের মতো। নিন্দুকের মতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা নাকি একটা আলাদা স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখে, আমি বলছি যদি দেখেও থাকে তো সেই স্বপ্নবাজদের সংখ্যা হাতে গোনা যায় এমন কয়েকজন যারা এখনো বোকার স্বর্গে বাস করেন। যেমনটা আমাদের মধ্যেকার কিছু বেকুবও মাঝে মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে কথিত এই ভূমি সেই ভূমির দাবিতে। এক কি দুই শতাংশ সংখ্যা দিয়ে পুরো জাতিকে বিচার করা যায় না কখনোই। বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা নিরানব্বই ভাগই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন বলেই আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছিলাম একাত্তর সালে। এতোকিছুর পরও এদেশের সাধারণ আদিবাসীদের সিংহভাগ আজো অখন্ডিত বাংলাদেশের পক্ষেই তাদের রায় দিবে এতে কোন সন্দেহ নাই, তারা কেবল তাদের ন্যায্য অধিকারটুকু চায় আমাদের কাছে এদেশের সরকারের কাছে।
এই কথাগুলো তাদের হয়ে বলতে যাওয়ার কারণে যারা বলার চেষ্টা করি তাদেরকে আমাদেরই কেউ কেউ কখনো দালাল, কখনো UNDP এর কেনা গোলাম বলে অভিহিত করেন! এতে অবশ্য আমাদের বিন্দুমাত্র লজ্জা বা ক্ষোভ নেই। আমাদের এই বিশেষণে ভূষিত করার বিনিময়েও যদি এই দেশে বসবাসকারী সকল জাতি গোষ্ঠীর মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা যায় তবেই তো সার্থকতা এই বিশেষণগুলোরও।
আহমেদ আমান মাসুদ:
সমাজকর্মী ও ফ্রীল্যান্স লেখক
সমাজকর্মী ও ফ্রীল্যান্স লেখক