এক. সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ কে হত্যার আগে এই সরকারের শাসন আমলে কয়েক হাজার আদম সন্তানকে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে । শুরু থেকেই দেশের মানুষ এরূপ জঘন্য বর্বর হত্যা কাণ্ডের নিন্দা জানালেও সরকার এতে মোটেই কর্ণপাত করে নাই ।
উল্টো হত্যা করার পর ওইসব মানুষ গুলোকে ইয়াবা খোর মদ্যপ অবৈধ অস্ত্রধারী ডাকাত বা ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে মৃত্যু পরবর্তী চরিত্র হনন করা হয়েছে । অথচ সভ্য দুনিয়ার নিয়ম হচ্ছে কেউ অপরাধী হলে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা।
দুই ।। মেজর সিনহা খুনের পর প্রধানমন্ত্রী মেজর সিনহার জন্মদাত্রী মাকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন । বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন । ডেইলি স্টারের সংবাদে জানা গেল তিনি তাঁর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথাও বলেছেন ।
ইলিয়াস আলী’ গুমের ঘটনার পরেও একই ভাবে তাঁর স্ত্রী এবং অবুঝ সন্তান দেরকে বঙ্গভবনে ডেকে এনে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছিল । সর্বচ্চো চেষ্টা করে ইলিয়াছ আলীকে খুঁজে বের করা হবে বলেও জানানো হয়েছিল।ইলিয়াছ আলী আর ফিরে আসেনি ।
তিন ।। প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই এইসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তাঁর নিজের স্বজন হারানোর বেদনার কথা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন । যেটা খুবই সঙ্গত এবং কোনভাবেই সমালোচনার বিষয় নয় ।
দুনিয়ার সব মানুষের স্বজন হারানোর ব্যাথা একই রকম । রাজা বাদশা আমির ফকির সবার বেদনাই এক এবং অভিন্ন।কোন পার্থক্য নেই ।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় মেজর সিনহা ছাড়া আর যে হাজারেরও অধিক মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হলো তারা কি মানুষ ছিল না ? তাঁরা কি এই দেশের নাগরিক নয় ? তাঁদের পরিবারের কি বিচার পাবার ন্যায্য অধিকার নেই ?
তাঁদের দায় কেন রাষ্ট্র অস্বীকার করবে ?
বিচার পাওয়ার অধিকার তো প্রতিটি নাগরিকের সংবিধান সম্মত স্বীকৃত অধিকার । এ থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা কারো নেই । থাকতে পারেনা ।
প্রধানমন্ত্রী কি সেই সব হতভাগ্য মানুষের পরিবারের প্রতি কোন সমবেদনা জানিয়েছেন ? বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন ? তিনি এবং এই রাষ্ট্র সরকার তার কিছুই করেনি ।
আজ সেই সব পরিবার গুলো কি যে বেদনাদায়ক অমানবিক জীবন যাপন করছে তা শুধু ভুক্তভোগীই নয় সাধারন মানুষও বুঝতে পারে ।
চার ।। সিনহা হত্যার পর সরকারের তরফ থেকে নানা কথা বলা হচ্ছে । বলা হচ্ছে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা । এতে দুই বাহিনীর ভেতরের সম্পর্ক নষ্ট হবেনা । পুলিশের মহা পরিদর্শক বলছেন ক্রসফায়ার একটি এন জি ও শব্দ । আসলে পুলিশের মহা পরিদর্শক যেভাবে কথা বলেন সেটা একটা দলের নেতার বক্তব্য হতে পারে কিন্তু কোন ভাবেই একটা দেশের পুলিশ প্রধানের পেশাদার বক্তব্য হতে পারেনা।
পাঁচ ।। সামরিক বাহিনীর অবসর নেয়া একজন কর্মকর্তার মৃত্যুতে সরকার যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাঁর চেয়ে যদি বিনা বিচারে মানুষ হত্যার শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে এবারের প্রতিক্রিয়ার অর্ধেক দেখাতে পারতো তাহলে আজ এরকম একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতোই না । পুলিশ সহ সকল বাহিনী বুঝতে পারতো এদেশে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করে কোনভাবেই পার পাওয়া যায় না ।
তাই আমরা আশা করবো শোকের এই আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত বেদনার সাথে হাজার হাজার হতভাগ্য মানুষের বেদনাকে একাকার করে ঘোষণা দেবেন যে ” আজ হতে বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশে সকল প্রকার বিনা বিচারে হত্যা বন্ধ কেউ যেন কোন ভাবে আইন নিজের হাতে তুলে মানুষ হত্যা করতে না পারে সেই দিকে সরকার সজাগ দৃষ্টি রাখবে ” ।
আমার ধারনা এই ঘোষণাই হতে পারে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি জাতীর একমাত্র শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধা ।
জংলী বর্বর রাষ্ট্রের পরিচয় থেকে মুক্ত হতে প্রধানমন্ত্রীর এরকম একটি ঘোষণা কি জাতি আশা করতে পারে ?
[ পুনশ্চ , আমি ভাল করেই জানি কাকুতি মিনতি করে বা হাতে পায়ে ধরে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যায়না ]
– আনোয়ার হোসেন মুকুল
সদস্য নাগরিক ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটি