সন্দ্বীপ টাউনে সভা সমাবেশ (২)
[এ লিখাটি বা পর্বটি ওরাল হিস্ট্রি বা স্মৃতিকথন, ইতিহাস নয়। তবে ইতিহাসবিদরা এই লিখা বা পর্বগুলো থেকে তথ্য-উপাত্তগুলো গবেষণার জন্য সূত্র বা রেফারেন্স উল্লেখপূর্বক এবং সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে শেয়ার করতে হলে পূর্ব অনুমতি নিয়ে উদ্ধৃতি বা লেখকের টাইম লাইন থেকে শেয়ার করতে পারবেন। গবেষক ছাড়া অন্যরা পর্যালোচনা এবং প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে উদ্ধৃত করতে হলে লিখিত অনুমতি ব্যতিরেকে, আংশিক বা সম্পূর্ণ কোন ধরণের অনুলিপি করা যাবে না। বাংলাদেশ ও আর্ন্তজাতিক কপিরাইট আইন দ্বারা লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লিখিত অনুমতির জন্য ইমেইল: sandwip21st@gmail.com]
জৈনপুরী মওলানারা আসতেন সন্দ্বীপে। সন্দ্বীপ টাউনসহ সন্দ্বীপেরমাদ্রাসা মক্তব ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাঠে ময়দানে ওয়াজ নসিহত বাসভা সমাবেশ করতেন। তারা কয়েক বছর পর পর শীত মৌসুমেআসতেন। সারা শীত মৌসুমটা ইসলাম প্রচারে ও ওয়াজ মাহফিলকরে সন্দ্বীপে কাটিয়ে দিতেন। মাওলানা শাহ কারামত আলীজৌনপুরী, মাওলানা হাফেজ আব্দুল আওয়াল জৌনপুরী, মাওলানাআব্দুর রব জৈনপুরী ও মাওলানা নোমান জৈনপুরী।
মাওলানা নোমান জৈনপুরী কয়েক বছর পর পর সন্দ্বীপে আসতেন।লোকবল নিয়ে আসতেন। ওয়াজ মাহফিল ও মুরিদ–বায়াত করতেন।পালকি চড়ে মাহফিলে যেতেন। ৮ জন বেড়া নিয়ে হ্যাক ডাক দিয়েজিকির আজকার করতে করতে মাহফিলে যাতায়াত করতেন। সামনেপিছনে হ্যাজাক লাইট থাকতো। এই মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য আমরারাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম। দিনের বেলায় উনাদের নিয়ম কানুনদেখার জন্য আমার কৌতহল কম ছিল না।
মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দিরউল্লেখযোগ্য সমাজ সংস্কারক। হানাফি মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।বিশিষ্ট ফকিহও ছিলেন। সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত‘তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া`র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রচারক ছিলেন। মাত্রআঠারো বছর বয়সে কারামত আলী জৌনপুরী তাসাউফে(আধ্যাত্মিক জ্ঞান) আগ্রহী হয়ে ‘তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া’র প্রতিষ্ঠাতাহযরত সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার নিকট বায়াতগ্রহণ করেন।
মাওলানা সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী ছিলেন সে যুগের ইংরেজ বিরোধীবিখ্যাত বিপ্লবী। মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরীও তার সাথেবিপ্লবে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। মাওলানা সাইয়েদ আহমদতাকে সশস্ত্র সংগ্রামের বদলে বাংলা ও আসাম অঞ্চলে ওয়াজ–নসীহত ও লেখনীর মাধ্যমে সমাজ সংস্কার ও ধর্ম প্রচারের নির্দেশদেন। মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী ওয়াজ নসীহত করেমানুষকে প্রকৃত ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি আহবান জানাতেন। তিনিবাংলা ও আসাম অঞ্চলে ধর্ম প্রচার করেন ও তার রচিত বইয়ে এদেশের ইসলামি ও আরবী শিক্ষার ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা রাখতেসক্ষম হন।
এ প্রসঙ্গে Biographical Encyclopedia of Sufis: South Asia বইতেখ্যাতিমান লেখন N. Hanif বলছেন–
“এদেশে আরবি চর্চার ক্ষেত্রে যাদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে,তাদের মধ্যে মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী অগ্রগণ্য। তিনিছিলেন একজন ধর্মপ্রচারক ও সমাজ সংস্কারক। ৪০টি গ্রন্থ রচনাকরেছেন। তার রচনাগুলোতে মিলাদ শরীফ, ইসলামী চিন্তাধারা ওতৎসম্পর্কিত মতবিরোধ আলোচিত হয়েছে।
ওই সময়ে এসব অঞ্চলের সাধারণ মুসলমানরা ইসলাম ধর্মেরআবশ্যকীয় এবাদত, যেমন নামাজ, রোজা ও ভুলে অন্য ধর্মের ধর্মীয়অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করত। বিশেষ করে বিবাহ অনুষ্ঠানের রীতিনীতিঅন্য ধর্মের কৃষ্টি সংস্কৃতি পালনে আগ্রহী ছিল। মাওলানা কারামতআলী জৌনপুরী বাংলা ও আসাম অঞ্চলে ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধপুনরুদ্ধার ও ইসলাম বিস্তারের লক্ষ্যে তার ৫১ বছরের দাওয়াতীকাজের ফলে প্রায় ১ কোটি মানুষ ইসলামের ছায়াতলে এসেছেন।
মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরীর কর্মজীবনে ধর্মীয় প্রচারণামূলককাজের স্বার্থে বাংলা ও আসাম অঞ্চলে নৌপথে যাতায়াত করতেন। এজন্য তিনি একটি ভ্রাম্যমাণ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এ মাদ্রাসাটি ছিলবড় একটি নৌকার মধ্যে। শিক্ষার্থীরা নৌকাতেই থাকতেন, মাওলানাজৌনপুরী তাদের ব্যয়ভার বহন করতেন এবং নিয়মিত শিক্ষাদানকরতেন। বর্তমানে দেশের হাওর অঞ্চলে নৌস্কুলের ধারণা উনার থেকেএসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগের দিনে জমিদাররা শখ করে নৌবিহারে যেতেন। তাদের কাছেবেশ জনপ্রিয় ছিল বজরা; নৌকা। বজরাতে তারা এক রকম ঘরবাড়িবানিয়ে নিতেন। ফলে এতে খাবার–দাবারসহ সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা থাকতো। কোন কোন বজরাতে আবার পালও থাকতো।আমার জানা মতে, এদেশে ৪ টি বজরা ছিল। একটি হাসন রাজার, দ্বিতীয়টি রবি ঠাকুরের, তৃতীয়টি জৈনপুরী হুজুরদের ও চতুর্থ বজরাটিকার ছিল তা আমার এমুহুর্তে মনে পড়ছে না।
মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী ছিলেন হাজী শরীয়ত উল্লাহপ্রবর্তিত ফরায়েজি আন্দোলনের (পর্ব নং ১৩ এ উল্লেখিত) বিরোধীশিবিরে। ‘তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া‘ ও ‘ফরায়েজী‘রা ব্রিটিশ বিরোধীইসলামী রাজনৈতিক দলের মতাদর্শী ছিলেন। যেমন, ফরায়েজিরাব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষকে ‘দারুল হরব‘ হওয়ার অজুহাতে জুমা ওঈদের নামাজ আদায় করত না। তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া মনে করতো‘ভারতবর্ষ দারুল ইসলাম নয় ও দারুল হরবও নয়। বরং ভারতবর্ষহচ্ছে দারুল আমান‘। কারণ ব্রিটিশরা মুসলমানদেরকে স্বাধীনভাবেধর্ম পালন করতে দেয়। এ বিষয়ে তিনি ফরায়েজিদের সাথে বাহাস বাধর্মীয় বিতর্ক করে তার মত প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এতে তারসুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ওয়াজ নসীহত ও ধর্ম প্রচারের সুবাদে মাওলানা কারামত আলীজৌনপুরীর সন্দ্বীপ, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, আসাম, রংপুর এবং আরওঅনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল সফর করেন। সফরকালীন অবস্থায় ১৮৭৩সালে রংপুরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৮৭৩ সালের৩০ মে ইন্তেকাল করেন। রংপুরে মুনশিপাড়া জামে মসজিদের পাশেতাকে দাফন করা হয়।
মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী খলিফার সংখ্যা শতাধিকছিলেন। তার ১৪ জন সন্তান–সন্তুতির মধ্যে দুই ছেলে পরবর্তীতে তারদ্বীনি কার্যক্রম অব্যহত রাখেন। তারা হলেন মাওলানা হাফিজআহমদ জৌনপুরী; কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ঢাকায় মৃত্যুবরণকরেন। ঢাকার চকবাজারে তার মাজার রয়েছে। তিনি একজনবিশেষজ্ঞ আলেম এবং সুফি সাধক ছিলেন। তিনি সন্দ্বীপেএসেছিলেন কিনা, তার ইতিহাস বা জনশ্রুত নেই।
তবে মাওলানা হাফিজ আহমদ জৌনপুরীর (সহোদর!) ভাই মাওলানাহাফেজ আব্দুল আওয়াল জৌনপুরী ১৮৬৭ (বা ১৮৬৬!) সালেসন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরীও বাতুল বিবির পুত্র। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি কুরআন শরীফেরহাফেজ হন। তিনি লখনৌ ও কলকাতায় অধ্যয়ন শেষে ১৮৮৭ থেকে১৮৮৯ সাল পর্যন্ত মক্কায় সওলাতিয়াহ মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণকরেন।
১৮৭৩ সালে মাদরাসা আস–সওলাতিয়াহ সৌদি আরবের মক্কারএকটি ইসলামী স্কুল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মক্কা শরীফেঅবস্থানকালে মাওলানা রহমত উল্লাহ কায়রানভী সেখানে এইমাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাওলানা কায়রানভীকে শেখ–উল–উলামা শেখ আহমদ দাহলান আস–শাফি মসজিদ–হারামে প্রভাষকহিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। মাওলানা কায়রানভী শিক্ষকতা শুরুকরার পর বুঝতে পেরেছিলেন যে, পাঠগুলি পরিকল্পিত একাডেমিকবক্তৃতার পরিবর্তে ধর্মোপদেশ হিসাবে দেওয়া হচ্ছিল।
মাওলানা কায়রানভী কিছু ভারতীয় মুসলমান অভিবাসী, ধনীমুসলমানদের একত্রিত করেছিলেন যাতে একটি উপযুক্ত পাঠ্যক্রমেরমাধ্যমে ইসলামী শারিয়াহ বিজ্ঞান পড়ানোর জন্য একটি খাঁটিইসলামিক আইন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যায়। ১৮৭৪ সালে তিনি এইমাদরাসা আস–সওলাতিয়াহ প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের আর্থিকঅনুদানকারীনি ছিলেন কলকাতার সওলাত–উন–নিসা নামের একমহিলা, যার নামেই মাদ্রাসার নামকরণ করা হয়েছিল। মাদ্রাসা এখনওবিদ্যমান আছে এবং দেওবন্দী পাঠ্যক্রমের আইনশাস্ত্র পড়ানো হয়।বাংলাদেশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক (১৮৮৩–১৯৩৮) এইমাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন।
ফেনীতে জন্মগ্রহণকারী মাওলানা ইসহাক একজন ধর্মীয় পন্ডিত এবংসুফি সাধক ছিলেন। স্থানীয়ভাবে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করার পরে তিনিসেখান থেকে মক্কায় গিয়ে সওলাতিয়াহ মাদ্রাসায় ১১ বছর ইসলাম ওআরবি ভাষা অধ্যয়ন করেন। আবদুল হাক্ক মুহাজির মক্কী মাওলানাইসহাককে দত্তক পুত্রের আসনে আসীন করেছিলেন। এই মাদ্রাসায়শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে সুফিবাদঅনুশীলন করেন এবং শেষ পর্যন্ত শায়খ আবদুল হাক্ক মুহাজির মক্কীরকাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন।
স্বদেশে ফিরে আসার পরেও মাওলানা ইসহাক সুফিবাদ অনুশীলনকরতে থাকেন। কথিত আছে যে, তিনি বেশ কয়েকটি কারামত প্রাপ্তহয়েছিলেন। তার কাছে আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার জন্য ভক্তরাআসতে থাকেন। তিনি জৈনপুরের মাওলানা কারামত আলিজৌনপুরীর নাতি মাওলানা আব্দুর রব জৌনপুরীর হাতে বায়াতনবায়ন করেন। তার রচিত গ্রন্থে তিনি বিভিন্ন সুফি সমস্যা এবং যিকরও ধ্যানের পদ্ধতিগুলির একটি সহজ চিত্র তুলে ধরেছিলেন। তার সূফীচিন্তাভাবনা ও রীতি জৈনপুরীদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিল বলে মনেকরছি।
মাওলানা ইসহাক সন্দ্বীপে আসতেন। সন্দ্বীপে তার অনেক মুরিদছিল। তার মুরিদানের পরিবারের অধস্তন নাতি পুতিরা আজও তারমাজার জেয়ারত করতে ফেনী গিয়ে থাকেন। সন্দ্বীপে তার ভক্তগণতাদের সন্তানদের নাম মুহাম্মদ ইসহাক রাখতে শুনেছি। এই রেওয়াজএখনো আছে।
সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করা এই মহা মানব মাওলানা হাফেজ আবদুলআউয়াল জৌনপুরী ছিলেন প্রতিভাবান লেখক, একজন বিখ্যাতআলেম ও ধর্ম প্রচারক। তিনি ১৮৮৯ সালে মক্কা থেকে প্রত্যাবর্তনেরপর বাংলাদেশে সমাজ সংস্কার, ইসলাম প্রচার ও মুসলিম মানসপুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন এবং মুসলমান সমাজে অনুপ্রবিষ্টশির্ক–বিদাত দূর করার জন্য শহর–বন্দর–গ্রামে পরিভ্রমণ করেন।ওয়াজ ও ধর্মীয় বক্তৃতা প্রদানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশেরমুসলমানদেরকে কুসংস্কার ও সামাজিক কদাচার থেকে মুক্ত করারআপ্রাণ প্রচেষ্টা চালান। তিনি ইসলামের মৌল বিষয়সহ ইতিহাস, আখলাক ও চরিত্র, সুফিতত্ত্ব ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে আরবি, উর্দু ওফারসি ভাষায় মোট ১২১টি গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলির মধ্যে ৮৯টিপ্রকাশিত হয়েছে।
শিক্ষা বিস্তারের জন্য সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করা এই সন্তান বাংলাদেশেরবিভিন্ন স্থানে স্কুল ও মাদ্রাসা স্থাপন করেন। তাঁর পুত্র হাম্মাদ (মৃ. ১৮৯৭ সাল) এর নামানুসারে ঢাকার আরমানিটোলায় (বাবু বাজার) মাদ্রাসা–ই–হাম্মাদিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। উপযুক্ত উত্তরাধিকারের অভাবে১৯৪০ সালে মাদ্রাসাটি স্কুলে রূপান্তরিত হয়। দেশ ও জাতির প্রতিকর্তব্য পালন ও অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ মাওলানা হাফেজ আবদুলআউয়াল জৌনপুরী ব্রিটিশ সরকার ও মুসলিম নওয়াবদের নিকটথেকে প্রশংসাপত্র লাভ করেন। কলকাতায় ১৯২১ সালের ১৮ জুনতাঁর মৃত্যু হয় এবং কলকাতার মানিকতলায় তাকে সমাহিত করা হয়।
সন্দ্বীপের বিশিষ্ঠ আলেমে দ্বীন (সম্প্রতি) মরহুম মাওলানা মুস্তাফাকামালের ক্লাস মেট ছিলেন মাওলানা নোমান জৈনপুরী। উনার কাছথেকে উনাদের অনেক গল্প শুনেছি। মাওলানা কামাল ছিলেনঅনলবর্ষী বক্তা ও শুদ্ধ সরল ভাষাবিদ ও উচ্চারণ পারদর্শি একজনপন্ডিত আলেম। উনারা ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় একত্রে পড়েছেন।(আশা করছি পরবর্তী কোনো পর্বে উনাদের সম্বন্ধে লিখবো)অভ্যন্তরীন ও বহির্দেশীয় আলেমদের প্রভাবে স্বচ্ছ ও নিখুঁত ইসলামপালনে সন্দ্বীপ অনেকখানি এগিয়ে আছে। সন্দ্বীপের উর্বর জমি ধর্মচর্চার ক্ষেত্রেও উর্বর ভূমি। আপনি নিশ্চয় একমত হবেন।
জন্মভূমির টানে কর্মব্যস্ত মাওলানা হাফেজ আবদুল আউয়ালজৌনপুরী ১৯০৩ সালে কিছু দিন অবদি সন্দ্বীপে অবস্থান করেন।সন্দ্বীপ ও সন্দ্বীপের জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন ৮৮ পৃষ্ঠার একটিবই তে। বইটির নাম হলো মাজিল্লাতুল আদিব লি আজিললাতিসসন্দ্বীব (সন্দ্বীপ)। সন্দ্বীপীদের আতিথেয়তা, সোজা সরল মন, নাগরিক সখ্যতা, আলেম সমাজ ও সন্দ্বীপীদের জীবন যাত্রার মানএবং প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি ইত্যাদি কে নিয়ে লেখা তার বই যাসাহিত্যের মানে এক অনবদ্ধ অগ্রণী বিশ্ব সাহিত্যের সমকক্ষ। সত্যিইতিনি বিশ্ব দরবারে সন্দ্বীপকে পরিচয় করে দিয়েছিলেন স্বর্গের সাথে।
হাতের কাছে পেলে বই টি পড়ে নিবেন; গর্বে আপনার বুক ২ ইঞ্চি ফুলেউঠবে, টান টান সাহস ও দৃঢ়তার সাথে শির উঁচু করে হাটতে ইচ্ছাকরবে। কে না তার নিজের দেশকে ভালোবাসে না, বলুন!
স্মৃতিকথনে: শিব্বীর আহমেদ তালুকদার
আইনজীবী, সমাজ সংগঠক ও কথ্য ইতিহাস গবেষক।
sandwip21st@gmail.com
—–
আশা করি, এই পর্বটি আপনাদের ভালো লেগেছে। লাইক ও কমেন্টের মাধ্যমে মতামত দিবেন, প্লিজ। কোনো রকমের তথ্য বিভ্রাট হলে ইনবক্সে ম্যাসেজ দিবেন বা ইমেইল করবেন। ফলে ভুল শুধরে নিতে পারবো। আর এই পোস্টটি শেয়ার করে নিন আপনার অনলাইনের সোশ্যাল বন্ধুদের মাঝে। যাতে আগামী পর্ব থেকে উনারাও সরাসরি স্মৃতিকথনের সাথে যুক্ত হতে পারেন। সন্দ্বীপকে নিয়ে নস্টালজিয়া ও কেতাদুরস্ত সন্দ্বীপিয়ানা স্মৃতিকথনমূলক পরবর্তী পর্বের উপর ‘চোখ রাখুন’ –
আগামী রোববার, ১৬ অগাস্ট ২০২০ ইং,
আসছে আমার দেখা সন্দ্বীপ (পর্ব নং ১৫)।
শিরোনাম থাকবে: সন্দ্বীপ টাউনে সভা সমাবেশ (৩)