সন্দ্বীপ টাউনে সভা সমাবেশ (৩)
[এ লিখাটি বা পর্বটি ওরাল হিস্ট্রি বা স্মৃতিকথন, ইতিহাস নয়। তবে ইতিহাসবিদরা এই লিখা বা পর্বগুলো থেকে তথ্য-উপাত্তগুলো গবেষণার জন্য সূত্র বা রেফারেন্স উল্লেখপূর্বক এবং সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে শেয়ার করতে হলে পূর্ব অনুমতি নিয়ে উদ্ধৃতি বা লেখকের টাইম লাইন থেকে শেয়ার করতে পারবেন। গবেষক ছাড়া অন্যরা পর্যালোচনা এবং প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে উদ্ধৃত করতে হলে লিখিত অনুমতি ব্যতিরেকে, আংশিক বা সম্পূর্ণ কোন ধরণের অনুলিপি করা যাবে না। বাংলাদেশ ও আর্ন্তজাতিক কপিরাইট আইন দ্বারা লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লিখিত অনুমতির জন্য ইমেইল: sandwip21st@gmail.com]
১৯৬৬ সাল। সভা সমাবেশের ক্ষেত্রে সন্দ্বীপের ইতিহাসে আরেকটিঅধ্যায় যুক্ত হলো। ২৬ শে মার্চ ১৯৬৬ সাল। অধুনালুপ্ত সন্দ্বীপটাউনের পাঁচ রাস্তার মোড় থেকে পূর্বে, সিও অফিস সংলগ্ন। সভাস্থল। ইতিপূর্বে আর কোনো সভা হয়নি এই মাঠে। সন্দ্বীপের চিরাচরিতমাঠে সভা হলো না। সভা হলো সম্পূর্ণ নতুন এক মাঠে। ৬ দফারসভা। ৬ দফা যেমনি ছিল আমাদের জন্য নতুন; ঠিক তেমনি মাঠটিওছিল নতুন। আর এই স্থান ‘৬ দফার রূপরেখার বলিষ্ঠ মঞ্চ’ বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু চাটগাঁয় এসেছিলেন ২৫শে ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬ সালে।চাটগাঁয়ের লাল দীঘির মাঠে জনসভা করলেন। রাত্রি যাপন করলেনহোটেল শাহজাহানে। চাটগাঁয়ের জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম এহান্নান, এম এ আজিজ, এম এ বারী, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুলকবির ও (মেরেকিন) শফিকুল আলম ছিলেন এক ঘরোয়াআলোচনায়। আলোচনা হচ্ছে, কোথায় ৬ দফা নিয়ে প্রথম জনসভাকরা যায়। মেরিকিন শফিক প্রস্তাব করলেন, সন্দ্বীপ থেকে ৬ দফারসভা শুরু করা যায় কিনা। বঙ্গবন্ধু মাগরিবের নামাজের পর সম্মতিদিলেন।
৬ দফা আন্দোলন বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণরাজনৈতিক ঘটনা। আমি (পুর্ববর্তী পর্বে) আগেই বলেছি ১৭৫৭, (১৭৬৫, ১৭৬৭,) ১৮৫৮ ও ১৯৫৮ সাল আমাদের রাজনৈতিকইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, কেননা এই সালগুলো আমাদের জন্যএক একেকটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ ভেঙেন্যাপ তৈরী হলো। অনেক নেতা কর্মী ন্যাপের চলে গেলেন। ফলেআওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে পড়ে। এর পরের বছরই ১৯৫৮ সালেপাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলো। প্রধান মন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীরযুক্ত ফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করা হলো। রাজনৈতিকদের ওপর জেলজুলুম নির্যাতন শুরু হলো। প্রধান মন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী ১৯৬২ সালেচিকিৎসার নামে লেবালনের বৈরুতে গেলে এক নির্জন হোটেল কক্ষেইন্তেকাল করেন। যার সত্যিকার মৃত্যু রহস্য এখনো জানানো হয়নি।
১৯৬৫ সালে ৬ ই সেপ্টেম্বর ভারতের সাথে পাকিস্তানের সশস্র যুদ্ধবাঁধে। ১৭ দিন এই যুদ্ধ চলে। বাংলাদেশের সৈন্যরা প্রবল বিক্রমেরসাথে যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানীরা সেভাবে মূল্যায়ন করেনিবাংলাদেশিদের। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান মন্ত্রীকোসিগিনের মধ্যস্ততায় তাসখন্দে ১৯৬৬ সালের ১০ই জানুয়ারিতেএক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন প্রেসিডেন্ট আইয়ুবও ভারতের পক্ষে ছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী।
প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে, এই চুক্তিরমাধ্যমে পাকিস্তানের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে আরশাদসামি খান তার Three Presidents and an Aide: Life Power and Politics বইতে লিখেছেন:
“দিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনের মিয়া এরশাদ হোসেনের একটাএকান্ত গোপনীয় টেলিগ্রাম সম্পর্কে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে যে, ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতের লাহোর আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল, ওইটেলিগ্রামে। পররাষ্ট্র সচিব আজিজ আহমদের কাছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রীভুট্টোর সাথে তিনি টেলিগ্রামটি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, গোপনীয় এই টেলিগ্রামটি যেন কারোও কাছে না যায়; এমনকিপ্রেসিডেন্টের হাতেও না। এই গোপনীয় তথ্যটি আগে জানা হলেভারতীয় বাহিনীর কাছে লাহোর কিংকর্তব্য বিমূঢ় হতে হতো না।লাহোর রক্ষা হয়েছিল, তবে অনেক জীবনের বিনিময়ে। টেলিগ্রামটিগোপন করার কারণে লাহোর ভারতীয়দের কাছে দখলে চলে যেতেপারতো। এটা বড় একটা বিশ্বাস ঘাতকতা নিঃসন্দেহে। প্রেসিডেন্ট(আইয়ুব) ২ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবছিলেন। তিনি(আইয়ুব) আলতাফ গহরকে বলেছেন, আমি বুঝি, ভুট্টো ও আজিজআহমেদ সম্ভবত কি চেয়েছিল।“
এহেন বিশ্বাস ঘাতক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বিরোধী দলেররাজনীতিবিদগণ তাসখন্দের চুক্তি পর্যালোচনার জন্য লাহোরে একজাতীয় সম্মেলন ডাকেন ৬ ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬ সালে। যাহোক, ৪ফেব্রুয়ারী তাজউদ্দীন ও নুরুল ইসলাম চৌধুরীসহ বঙ্গবন্ধু লাহোররওয়ানা দেন। সাবজেক্ট কমিটির সভায় ৬ দফা এজেন্ডায় রাখা হলোনা। বঙ্গবন্ধু ৬ ই ফেব্রুয়ারীর সম্মেলন থেকে ওয়াকআউট করেন। পরেসাংবাদিকদের কাছে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা তুলে ধরেন।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা দাবির ১৯ নং দফায় শেরে বাংলাফজলুল হকের ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে আঞ্চলিকস্বায়ত্ত শাসনের রূপরেখা পাকিস্তান সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়েছিল।তাছাড়াও ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ যে ম্যানোফেস্ট তৈরি করেছিল, তাতেও ৬ দফা প্রকারান্তে উল্লেখ ছিল। ১৯৬৬ সালের ২১ শেফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগের এক কার্যকরী কমিটি বঙ্গবন্ধু ৬ দফা পাসকরেন। ১৮–১৯ শে মার্চ ১৯৬৬ সালের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলঅধিবেশনে ৬ দফা স্বীকৃতি লাভ করে। অতঃপর আর বাঁধা রইলোনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকাসম্বলিত ছয় দফা কর্মসূচির একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। যার নামছিল– ছয় দফাঃ আমাদের বাঁচার দাবি। এরপর ১৮–১৯ শে মার্চ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানের নামে -‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬–দফা কর্মসূচি’শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় লাহোর প্রস্তাবের সাথেমিল রেখে। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য– পাকিস্তান হবে একটিফেডারেল রাষ্ট্র, ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেল রাষ্ট্রেরপ্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয়দফা কর্মসূচীরভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। পরবর্তীকালেএই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনেরআন্দোলন জোরদার হয়।
মোহাম্মদ শাহ বাঙালীও চারণ কবি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্তুতি করতেনকবিতার পরতে পরতে। আমার মনে আছে সন্দ্বীপের সন্তান শাহবাঙালী ৬ দফা নিয়ে বললেন:
”আংগো মুরগী আন্ডা হারে,
কার বিলায়ে খায়;
শেখ মুজিবে ৬ দফা দিয়া,
বিলায় ধরতো চায়।”
একটি জাতির জন্য এক সূচনার কাব্য গাঁথা রচনা করলেন বঙ্গবন্ধু।কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ‘দুর্মর‘ কবিতায় বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেনএভাবে–
‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়ঃ
জ্বলে–পুড়ে–মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।‘
৬ দফা! অবাক বিস্ময়ে সারা পৃথিবী তাকায়ে রয় – কি হতে যাচ্ছে ….। আমরা ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয়ে পরাধীন হয়ে গিয়েছিলাম। ১৯৭১সালের স্বাধীনতা যেন ‘চির উন্নত মম শির‘ হয়; আমাদের স্বাধীনতাযেন মুক্তি এনে দেয় ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,/ জ্ঞান যেথামুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর‘।
আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে ৬ দফা গৃহীত হওয়ার পর থেকেইপাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নানা রকমের মামলা দিয়েহয়রানি করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু যেখানেই যান, সেখানেই তাকে গ্রেপ্তারকরা হতো। জামিন নিয়ে বঙ্গবন্ধু আবার ৬ দফা প্রচার শুরু করতেন।২০ শে মার্চ ১৯৬৬ সালে আইয়ুব খান বলেন, দেশের অখণ্ডতাবিরোধী কোনো প্রচেষ্টা ‘অস্রের মুখে জবাব দিবেন‘ বলে হুমকি দেয়।অতঃপর দেশ রক্ষা আইনে বঙ্গবন্ধুকে ৮ ই মে ১৯৬৬ সালে গ্রেফতারকরে।
১৯৬৬ সালের ৭ ই জুন ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ–আন্দোলনের সূচনা হয়। ওই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালেটঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক, শামসুল হক, মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন বাংলাদেশী শহিদহন। ৬ দফা আন্দোলনের প্রথম শহিদ তারা। অতঃপর প্রতি বছর ৭ইজুন বাংলাদেশে ‘৬ দফা দিবস‘ পালন করা হয়।
৬ দফা আন্দোলন জেল জুলুম ও হুলিয়ায় স্তিমিত হয়ে উঠে।ডাকসুসহ মোট ৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে ৫ই জানুয়ারি, ১৯৬৯(অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেছেন ৪ঠা জানুয়ারি) ডাকসু কার্যালয়ে“সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ” গঠিত হয়। এই সময় ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১১ দফা আন্দোলন আরম্ভ করে ও ফলেআইয়ুব শাহীর পতন হয়। বঙ্গবন্ধু মুক্ত হন। স্লোগান ছিল– ‘জেলেরতালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো‘।
১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারীতে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ঘোষণার আগেআফতাব আলীর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। সিলেটেরআফতাব আলী ছিলেন কলকাতার (জাহাজী) শ্রমিক নেতা, যিনিআড়াই লক্ষ শ্রমিকের নেতা ছিলেন। ওই সময় তিনি আইএলও এরভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কথিত আছে যে, ব্রিটিশ রাজ ২য় বিশ্ব যুদ্ধচলা কালে ২ জন ভারতীয়র কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১জন গান্ধী ও ওপর জন হলেন আফতাব আলী।
বঙ্গবন্ধু আরো ২ বার সন্দ্বীপ এসেছিলেন। ১৯৭০ সালের ১৫ ইনভেম্বরে প্রলয়ংকারী ঝড়ের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় ১ বার ওপ্রলয়ংকারী ঝড়ের পরে আরেক বার। সভা করেছেন সন্দ্বীপ হাই স্কুলমাঠে ও হেলিপ্যাড মাঠে।
সন্দ্বীপের ইতিহাসটা হলো সংগ্রামের। বর্গীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার।রোহিঙ্গা জলদস্যূদের বিরুদ্ধে ঐক্যের প্রতীক, যারা এক সময় সন্দ্বীপেরওপর অত্যাচার নির্যাতন করতো। ছেলেদের ধরে নিয়ে বিক্রি করে দিতদাস ব্যাবসায়ীদের কাছে। শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে ন্যায় পরায়ণ, অথচ শান্তি প্রিয় এক জনগোষ্ঠী। তাই সম্ভবত ৬ দফার জন্যসন্দ্বীপকে বেচে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কেউ কেউ বলতে চেষ্টা করেছেনযে, সন্দ্বীপের ২৬ মার্চের ৬ দফার জনসভা প্রথম জনসভা ছিল না।অথচ দিন তারিখের নিরিখে ও সেই সময়ের রাজনৈতিক ইভেন্টেরক্রম বিন্যাসে সন্দ্বীপের ৬ দফার জনসভা ছিল প্রথম।
গল্প আছে। ১৯৬৬ সালের বঙ্গবন্ধুর আগমন ছিল চট্টগ্রাম থেকেইস্টিমার যুগে। সন্দ্বীপের পশ্চিম দিকের ঘাট দিয়ে সন্দ্বীপের মাঠিতেবঙ্গবন্ধুর পদ যুগল যেন কাদা যুক্ত না হয়, সে জন্য কালা মিয়া মাঝিবঙ্গবন্ধুকে কোলে করে নামিয়ে আনেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশেরপ্রধান মন্ত্রী থাকাকালীন সন্দ্বীপ থেকে মাঝারি গোছের এক নেতাকেতোহফা পাঠিয়েছিলেন ১৯৭৩ সালে, কালা মিয়া মাঝির জন্য।বলেছিলেন কামালের মা, তোমার কাছে কত টাকা আছে। উনিবলেছিলেন ৭০০ টাকা। বঙ্গবন্ধু পুরো ৭০০ টাকা পাঠিয়েছিলেন কালামিয়া মাঝির জন্য।
সন্দ্বীপকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি গল্প আছে। বঙ্গবন্ধু রাজনীতিবিষয়ে কারো ওপর রাগ বা বিরক্ত হলে; বলতেন– সন্দ্বীপ চলে যাবেন।সত্যি সত্যিই বঙ্গবন্ধু রাগ করে সন্দ্বীপে চলে আসলে হয়তো ১৫ ইঅগাস্ট হতো না!
স্মৃতিকথনে: শিব্বীর আহমেদ তালুকদার
আইনজীবী, সমাজ সংগঠক ও কথ্য ইতিহাস গবেষক।
sandwip21st@gmail.com
—–
আরো বিস্তারিত জানার জন্য:
দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমনি হতে হবে যেখানেপাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশনভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ এবং তারভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব। সরকার হবে পার্লামেন্টারী ধরনের।আইন পরিষদের (Legislatures) ক্ষমতা হবে সার্বভৌম। এবংএই পরিষদও নির্বাচিত হবে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতেজনসাধারনের সরাসরি ভোটে।
কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু‘টি ক্ষেত্রেইসীমাবদ্ধ থাকবে– যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্টসকল বিষয়ে অঙ্গ–রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।
মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু‘টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণকরা চলতে পারেঃ–
(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু‘টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্যমুদ্রা চালু থাকবে।
অথবা
(খ) বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাইচালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব–পাকিস্তান থেকে পশ্চিমপাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবেএবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়কনীতি প্রবর্তন করতে হবে।
ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলির কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারেসার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ করধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্যঅঙ্গ–রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে।অঙ্গরাষ্ট্রগুলির সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃতঅংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।
(ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথকহিসাব রক্ষা করতে হবে।
(খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রাঅঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারাধীন থাকবে।
(গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারেঅথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিই মিটাবে।
(ঘ) অঙ্গ–রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বাকরজাতীয় কোন রকম বাধা–নিষেধ থাকবে না।
(ঙ) শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিকপ্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব–স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনেরক্ষমতা দিতে হবে।
আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ–রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিকসেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।
লাহোর প্রস্তাবের সার সংক্ষেপ:
আমার দুই জন প্রিয় ছোটভাইয়ের কাছে সর্বজনাব মোঃ রফিকুলইসলাম (সাবেক হরিশপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা); দুলাল তালুকদার ও আলী হায়দার চৌধুরী বাবলু সাহেব সন্দ্বীপেবঙ্গবন্ধুর আগমনের স্মৃতি চারণ করেছেন যা আমার ওরাল হিস্ট্রিতেকাজে লেগেছে। ধন্যবাদ।
—–
আশা করি, এই পর্বটি আপনাদের ভালো লেগেছে। লাইক ও কমেন্টের মাধ্যমে মতামত দিবেন, প্লিজ। কোনো রকমের তথ্য বিভ্রাট হলে ইনবক্সে ম্যাসেজ দিবেন বা ইমেইল করবেন। ফলে ভুল শুধরে নিতে পারবো। আর এই পোস্টটি শেয়ার করে নিন আপনার অনলাইনের সোশ্যাল বন্ধুদের মাঝে। যাতে আগামী পর্ব থেকে উনারাও সরাসরি স্মৃতিকথনের সাথে যুক্ত হতে পারেন। সন্দ্বীপকে নিয়ে নস্টালজিয়া ও কেতাদুরস্ত সন্দ্বীপিয়ানা স্মৃতিকথনমূলক পরবর্তী পর্বের উপর ‘চোখ রাখুন’ – ।
আগামী রোববার, ২৩ অগাস্ট ২০২০ ইং, আসছে
আমার দেখা সন্দ্বীপ (পর্ব নং ১৬) ।
শিরোনাম থাকবে: সন্দ্বীপ টাউনে সভা সমাবেশ (৪)