মানববন্ধনের আয়োজকেরা হামলার জন্য বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর অনুসারীদের দায়ী করেছে । বাঁশখালীতে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সাংসদের অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ। আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক শাহেদ মুরাদ।
বেলা ১১টায় এই মানববন্ধন শুরু হবার ৪৫ মিনিট পর ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে মানববন্ধনে হামলা চালায়। এ সময় দলটিতে বাঁশখালীর পৌর মেয়র শেখ সেলিমুল হক ও বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত সচিব তাজুল ইসলামকে দেখা যায়। হামলায় মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মাকসুদের মাথা ফেটে গেছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সদস্য সরওয়ার আলম বলেন, সাংসদের নামে স্লোগান দিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে মানববন্ধনে হামলা চালানো হয়। তাঁরা মাইক ভেঙে ফেলেন। লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এতে সন্তান কমান্ডের সদস্য, সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হন।
আহতদের মধ্যে বাঁশখালীর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফের ছেলে জহির উদ্দিন বাবর ও জয়নাল আবেদীন, শাহেদ মুরাদ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ ও চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরা পারসন মো. নবাব রয়েছেন। বাবর ও নবাবের মাথা ফেটে যায়।
এ ঘটনার পর জামালখান এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। ঘটনাস্থলে তখন তিন থেকে চারজন পুলিশ ছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাঁশখালী পৌর মেয়র শেখ সেলিমুল হক সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমরা মারামারি করতে যাইনি। আমরা তাঁদের সত্য কথা বলতে গিয়েছিলাম। তাঁরা একটা মিথ্যা বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছেন। আলী আশরাফ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তাঁর ভাই মৌলভি সৈয়দ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ছিলেন। আমরা আজ তাঁদের ওপর হামলা চালাইনি। তাঁরা আমাদের ওপর হামলা করেছেন। আমাকেও কিলঘুষি দিয়েছেন।’
জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসীন বলেন, ‘মারামারির ঘটনা শুনেছি। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।’
উল্লেখ্য, বাঁশখালীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ মারা যাওয়ার পর তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদে ৩ আগস্ট বাঁশখালীতে মানববন্ধন হয়। ওই মানববন্ধনেও হামলা হয়েছিল। পরে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান বিতর্কিত মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক শাহেদ মুরাদ এ ব্যাপারে মামলা করবেন বলে জানান। এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে প্রেসক্লাবের সামনে পুনরায় প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়।