বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য এক দুর্বিসহ কষ্টের কারণ হয়ে উঠেছে তিস্তা। বাংলাদেশ বর্ষাকালে বন্যায় ভাসে মানুষ হারায় তাদের ভিটেমাটি এবং কৃষিজমি। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে পরিণত হয় মরুভূমিতে অথচ উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই তিস্তার সাথেই জড়িত। বাংলাদেশের সরকার অনেক দিন থেকেই তিস্তার পানি বন্টনের হিস্যা ৫০-৫০ করার জন্য ভারতকে বলে আসছিল। তবে ভারত এতে কোনো কর্ণপাত করেনি। শুধুই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে কিন্তু কখনই এর বাস্তব রূপ পরিলক্ষিত হয়নি। এ ব্যাপারে ভারতের সদিচ্ছারও যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করা গেছে। আসলে ভারতের কাছে এই তিস্তার পানি বন্টনের বাস্তব রূপ না দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ চাপে রাখার একটি ইস্যু।
বর্তমান বাংলাদেশ সরকার যখন দেখেছে ভারতের প্রতিশ্রুতিতে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের কোনো লাভ নেই তখন সরকার “তিস্তা নদী মহা ব্যাবস্থাপনা এবং পুনর্বাসন প্রকল্প” হাতে নেয় এবং প্রাথমিকভাবে জে,আই,সি,এ ও বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ঋণের আবেদন করে কিন্তু তাঁরা তখন এই প্রকল্পে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। চীন সরকারকে এ প্রস্তাব করা হলে তাঁরা এই সুযোগ লুফে নেয়। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে যার ফলে তিস্তায় বর্ষার পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং সেচের মৌসুমে পানির অভাব হবে না। উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করতে নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়া হবেঃ ১. নদীর দুই পাড়ে ২২০ কিলোমিটার উঁচু বাধ নির্মাণ করা হবে। ২. নদীর বর্তমান প্রশস্ততা বর্তমানে কোথাও ৮ আবার কোথাও ১২ কিঃমিঃ। পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো নদীর প্রশস্ততা হবে ২ কিঃমিঃ। ৩. নদী থেকে প্রায় ৮৮০ কিঃমিঃ জায়গা উদ্ধার হবে। ৪. নদী খনন করে গড়ে তোলা হবে নৌ-চ্যানেল। ৫. উদ্ধারকৃত জমিতে গড়ে তোলা হবে রিভার ড্রাইভ, অর্থনৈতিক অঞ্চল, সৌরবিদ্যুত প্রকল্প, আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট এবং ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে বাকি উদ্ধারকৃত জমি বিতরণ করা হবে। এই মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীনের কোম্পানি পাওয়ার চায়না তিস্তা নিয়ে তাঁদের একটি ভিজুয়াল ডকুমেন্টারি বানিয়েছে।
– আরিফুল হক রোম, ইতালী