সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট : পুলিশ হেফাজতে জনি নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের দেয়া রায় যুগান্তকারী। ২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইন প্রণয়নের পর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় কোন মামলার রায় হল। এই আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই রায় অন্যতম মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে। নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে যাতে বহাল থাকে সে ব্যাপারে সংশ্লিস্ট সকলকে সম্ভবমত সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। তাছাড়া এই আইনের অন্য যে ১৭ টি মামলা চলছে সে ব্যাপারেও মানবাধিকার ও আইন সহায়তাকারী সংগঠন এবং আইনজীবীদের একযোগে কাজ করতে হবে।
১৩ সেপ্টেম্বর রোববার লন্ডন সময় বিকাল ৪টা বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় হেফাজতে নির্যাতনবিষয়ক আইনের মামলার প্রথম রায় : একটি পর্যালোচনা- শীর্ষক সোজা কথা ডটকম- এর ৪০ তম লাইভ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। লাইভ অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে যুক্ত হন মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর চেয়ারপার্সন এডভোকেট জেড আই খান পান্না, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও পুলিশ হেফাজতে নিহত জনির ভাই মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন রকি। সোজা কথা ডটকম- এর সম্পাদক (অ:), মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট শাহ আলম ফারুক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
এডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে মানুষ কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। সাধারণ ফেইসবুকের কমেন্ট, শেয়ার করলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কার্টুন আঁকার জন্য লেখালেখির জন্য মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতা আছে কিন্তু বাক স্বাধীনতা নেই, স্বাধীনতা আছে কিন্তু লেখার স্বাধীনতা নেই। তিনি বলেন একজন আশাবাদী মানুষ হিসেবে তিনি মনে করেন অবশ্যই এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন- রকি অনেক কষ্ট করে মামলাটি এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে এবার তাকে এর দায় থেকে মুক্তি দিয়ে মামলাটির দায়িত্ব আমাদের সবার নেয়া উচিত।
তিনি বলেন- সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী এই আইনের যে ড্রাফটটি সংসদে উত্থাপন করেন তা অধিকার তৈরি করে দিয়েছে। শুধু এই কাজ ই নয়, মানবাধিকারের জন্য অধিকার অনেক কাজ করেছে। অথচ অধিকার নিয়ে কতভাবে কত কী বলা হচ্ছে। বলা হয়েছে।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন জানান ব্লাস্টের পাশাপাশি মহিলা আইনজীবী সমিতি রকির মামলায় সহায়তা করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর মিরপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে দুই ভাই ইশতিয়াক হোসেন জনি এবং ইমতিয়াজ হোসেন রকিকে আটক করে পুলিশ। সে রাতেই বড় ভাই জনির মৃত্যু হয় পুলিশ হেফাজতে। এ ঘটনায় মামলা করেন জনির বেঁচে যাওয়া ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। ৯ সেপ্টেম্বর বুধবার সে মামলার রায়ে ৫ জন আসামীর মধ্যে তিন জন পুলিশ কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। অপর দু্ই জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মামলার বাদি ইমতিয়াজ হোসেন রকি সে রাতের ভয়াবহ পুলিশী নির্যাতনের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন তারা যখন আমাদের দুই ভাইকে ঝুঁলিয়ে পেটাচ্ছিল তখন আমরা বার বার জানতে চেয়েছি কি অপরাধে আমাদের পেটানো হচ্ছে। তারা কোন উত্তর না দিয়েই আমাদের পিটিয়ে যাচ্ছিল। রকি বলেন এক সময় আমি গাড়ি মেকানিকের কাজ করতাম। সেই নির্যাতনের পর এখন আর সেভাবে কাজ করতে পারি না। তিনি তার ভাই জনির দুই শিশু পুত্রের ভবিষ্যতের জন্য সরকার প্রধানের কাছে সহায়তা কামনা করেন।
বাদি হিসেবে তার ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করায় মামলার বাদি ইমতিয়াজ হোসেন রকি স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর চেয়ারপার্সন এডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন- প্রশাসনের দুস্কর্মের উপর নির্ভর করে সরকারগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চায়। মাজদার হোসেন মামলার ব্যাপারে প্রতি মংগলবার আমরা সুপ্রীম কোর্টে মানববন্ধন করতাম। গত ৫ বছর হয় না। কেন? আমরা কেউ মনে করছি হয়তো তা বাস্তবায়নের কাছে অথবা কেউ কেউ ভাবছি এ সব করে লাভ নেই। তিনি বলেন অথচ সম্মিলিতভাবে দাঁড়ালে অনেক কিছুই অর্জন সম্ভব। তিনি আরো বলেন হেফাজতে জনি হত্যাকান্ডের রায়ের ভেতর দিয়ে আমরা আশা করতে পারি কেউ আইনের উর্ধ্বে থাকতে পারবে না।
আগ্রহীরা পুরো অনুষ্ঠানটি দেখতে ক্লিক করতে পারেন ফেইসবুক লিংক এবং ইউটিউবের এই লিংকে।
