সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট: গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে জিডিপি যে বহুগুণ বেড়েছে তার হিসাব আমাদের কাছে আছে, কিন্তু একইসময়ে শাসকদের লোভ ও ক্ষমতাদর্পী দখল দাপটে বাংলাদেশের প্রাণ এই নদীমালার কতটা জীবনহানি ও জীবনক্ষয় হয়েছে তার ক্ষতির কোন পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। কিন্তু আমরা চোখের সামনে দেখছি বাংলাদেশের প্রাণ নদী একের পর এক খুন হচ্ছে। বাংলাদেশের নদীগুলো যে ভাবে খুন হচ্ছে কারণহিসেবে ভাগ করলে এর পেছনে তিনটি উৎস সনাক্তকরা যায়। এগুলো হল: প্রথমত, বাংলাদেশের নদীবিদ্বেষী উন্নয়ন কৌশল। দ্বিতীয়ত, দেশের নদীদখলদারদের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনসহ রাজনৈতিক ক্ষমতার যোগসাজস। এবং তৃতীয়ত, নদীর পানি নিয়ে বাঁধ ও নদী সংযোগ পরিকল্পনাসহ ভারতের অন্যায় একতরফা আগ্রাসী তৎপরতা।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে তেল–গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক যুক্ত বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ তার নদীসহ পানিসম্পদ। ভূগর্ভস্থ পানি ও ভূ-উপরিস্থত নদী নালা খাল বিল।এর জন্যই বাংলাদেশ প্রাণবৈচিত্রে সমৃদ্ধ, জমি এতো উর্বর, জলপথ এতো সম্ভাবনাময়। এর সাথে এদেশের ভূপ্রকৃতি, মানুষের জীবন জীবিকা ও সংস্কৃতি গভীরভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু উন্নয়নের নামে প্রাণ–প্রকৃতি–সম্পদ, জনস্বাস্থ্য–জনজীবন ও জীবিকার বিপরীতে মুনাফা–অন্ধ তৎপরতায় বাংলাদেশের বাস্তুসংস্থান, নদী–সমুদ্র ও ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদ তথা জননিরাপত্তা সবই ভয়াবহভাবে আক্রান্ত। এর কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের বিপদও বাড়ছে।বস্তুত নদীর পানি প্রবাহের উপরই বাংলাদেশের জন্ম।নদী বিপন্ন হলে তাই বাংলাদেশের অস্তিত্বও বিপন্ন হয়।নদী হারানোর সর্বনাশ ১/২ বছরে এমনকি ১/২দশকেও বোঝা যায় না।
বিবৃতিত আরো বলা হয়, যে ‘উন্নয়ন’ নদী বিপন্ন করে তাতেও জিডিপি বৃদ্ধি পেতে পারে কিন্তু তা প্রাণজগতকে বিপন্ন করে, শেষপর্যন্ত মানুষের সামগ্রিক অস্তিত্ব তাতে বিপদগ্রস্ত হয়।সেজন্যই কোটি মানুষ আজ দিশেহারা। এই নদী আরতার সাথে বন বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান ওভবিষ্যতের অস্তিত্বের অবলম্বন। রামপাল সহ উপকূল জুড়ে সব কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, নির্বিচার নির্মাণকাজ আর তার সাথে বেড়েচলা ইটের ভাটা, অপরিকল্পিত অপরিণামদর্শী সেতু ও সড়ক নির্মাণ, বন নিধন সবই ‘উন্নয়ন প্রকল্প’ নামেই নদীসহ পানিসম্পদকে বিপর্যস্ত করছে। পানি উন্নয়নবোর্ডের অধিকাংশ প্রকল্পও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে ভাঙন ও নদীর মৃত্যু ত্বরান্বিত করছে।ডেল্টা প্ল্যান এই ধারারই মহা আগ্রাসী প্রকল্প। নদী বাংলাদেশের শক্তি, তাকে বিপর্যস্ত করে যেসব প্রকল্পতা উন্নয়ন নয় ধ্বংস প্রকল্প। এসবের পক্ষে সকল তৎপরতা দুর্বৃত্ত তৎপরতা ছাড়া আর কিছু নয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সর্বজনের জীবন ও দেশ রক্ষায় তাই ন্যুনতম করণীয়: নদীবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিল করা, ভারতের সঙ্গে নদীর পানি বিষয়ক সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উন্নয়ন চিন্তায় নদী আর সেইসাথে বনের জীবনকে কেন্দ্রে রাখা। এই কাজে বিভিন্ন স্তরের সজাগ মানুষের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ অবশ্য কর্তব্য।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আবারও রামপাল রূপপুরসহ নদী ও প্রাণবিনাশীসকল প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান এবং প্রাণপ্রকৃতিও মানুষ কেন্দ্রিক উন্নয়ন ধারা নিশ্চিত করতে দেশবাসীকে সোচ্চার হবার আহবান জানান।